শিক্ষার্থী ভর্তির কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও লেকহেড গ্রামার স্কুল
শিক্ষার্থী ভর্তির কোটি টাকা হাতিয়ে রাতের আঁধারে উধাও লেকহেড গ্রামার স্কুল। জঙ্গি অর্থায়নে অভিযুক্ত এ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটি নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। কয়েক দফা মালিকানায়ও এসেছে পরিবর্তন। সম্প্রতি গুলশান ও ধানমন্ডির দুটি শাখাই একসঙ্গে বন্ধ করা হয়েছে। শিক্ষার্থী ভর্তির টাকার পাশাপাশি ভবন ভাড়ার প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বাকি রেখেই লাপাত্তা স্কুল কর্তৃপক্ষ। সন্তানের শিক্ষাজীবন ও টাকা নিয়ে চিন্তায় অভিভাবকরা।
এমন একজন অভিভাবক বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফ খান। ঋণের সোয়া লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে ভর্তি করেন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল লেকহেড গ্রামারের গুলশান শাখায়। গত মার্চে ভর্তির পর স্কুল থেকে জানানো হয় ১ জুলাই থেকে তার সন্তানের ক্লাস শুরু হবে। জুনের প্রথমদিকে খোঁজ নিতে স্কুলে গিয়ে দেখেন, সেখানে কেউ নেই। শিক্ষার্থীশূন্য স্কুল, নেই নেমপ্লেটও।
খালি পড়ে থাকা ভবনের নিরাপত্তারক্ষী জানান, এটি ভাড়া ভবন। স্কুল চালানো লোকজন রাতের আঁধারে সবকিছু গুছিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে লাপাত্তা।
অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছি। অনেকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, অনেকে মৌখিকভাবে জানাচ্ছেন। দুই শাখা মিলিয়ে একশজনেরও বেশি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তির টাকা নিয়ে স্কুল বন্ধ করে দিয়েছেন তারা।- উপ-পরিদর্শক শাহীন মোল্লা
আরিফ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ছেলেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। টাকা তো খোয়া গেছেই, ছেলের শিক্ষাজীবনও পিছিয়ে গেলো। এমন প্রতারণার বিচার ও টাকা ফেরত চাই আমি।’
শুধু আরিফ খান নন, তার মতো শতাধিক অভিভাবক লেকহেড গ্রামার স্কুলের প্রতারণার শিকার হয়ে থানায় পুলিশের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। এ নিয়ে রাজধানীর গুলশান ও ধানমন্ডি থানায় একাধিক অভিযোগও জমা পড়েছে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তৎপর হওয়ায় গা ঢাকা দিয়েছেন স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিন।
পুলিশ বলছে, স্কুলের দুটি শাখার প্রায় একশজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী-অভিভাবকের খোঁজ পেয়েছেন তারা। প্রত্যেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা ভর্তি বাবদ জমা দিয়েছিলেন। ক্লাস শুরুর আগেই স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের টাকা ফেরতও দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ, প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্কুলটি। আর যে ভবন ভাড়া নিয়ে স্কুল চালানো হতো, তাদেরও প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বকেয়া রেখে পালিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০০ সালে লেকহেড গ্রামার স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকেই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলটির দুটি শাখা চালু ছিল। একটি রাজধানীর গুলশানে, অন্যটি ধানমন্ডিতে। জঙ্গি অর্থায়নসহ বিভিন্ন অভিযোগে কয়েক দফা স্কুলটি বন্ধ করে দেয় সরকার। মালিকানা পরিবর্তন ও গভর্নিং বডিতে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এবং সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের রাখার শর্তে পরে খুলে দেওয়া হয় স্কুলটি। যদিও গভর্নিং বডি গঠনে সেই নির্দেশনা বেশিদিন মানেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে লুকোচুরি করে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল লেকহেড গ্রামার স্কুল। স্কুলটির দুই শাখা প্লে গ্রুপ থেকে দশম গ্রেড পর্যন্ত চার শতাধিক শিক্ষার্থীও ছিল। চলতি বছরের শুরুতেও শিক্ষার্থী ভর্তি করতে বিজ্ঞাপন দেন তারা। চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে অনেক অভিভাবক সেখানে সন্তানকে ভর্তি করান।
নার্সারিতে এক মাসের টিউশন ফিসহ ভর্তি বাবদ ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এর ওপরের শ্রেণিতে ভর্তি ফি আরও বেশি। গড়ে ১ লাখ ১৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ভর্তি ফি নেওয়া হয়েছে। যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের সবাইকে বলা হয়েছিল আগামী সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হবে ১ জুলাই। অথচ তার আগেই লাপাত্তা স্কুল কর্তৃপক্ষ।
টাকা ফেরত পেতে থানায় অভিভাবকরা
গত ১৩ মার্চ মেয়েকে গুলশান শাখায় নার্সারিতে ভর্তি করেছিলেন আঞ্জুমান আরা। মহানগর আবাসিক এলাকায় থাকেন তিনি। তার স্বামী প্রবাসী। তিনিও প্রতারণার শিকার হয়ে থানায় ঘুরছেন। ২৫ জুন গুলশানের ওই স্কুলের সামনে আবারও খোঁজ নিতে আসেন তিনি। আঞ্জুমান আরা জানান, ভর্তি ফিসহ মোট ১ লাখ ১০ হাজার টাকা তিনি পরিশোধ করেছিলেন।
আঞ্জুমান আরা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাজানো-গোছানো স্কুল। যখন এসেছিলাম, দেখলাম—অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। অভিভাবকরাও বলেছিলেন—ভালো লেখাপড়া হয়। ছেলে এবং মেয়েদের আলাদা ক্লাস করানো হয়। কে জানতো এরা প্রতারণা করবে। এখন গুলশান থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ বলছে তারা প্রতারকদের ধরার চেষ্টা করছে।’
আরও পড়ুন
- লেকহেড গ্রামার স্কুল মালিক খালেক ‘নিখোঁজ’
- লেকহেড স্কুলে চলতো জঙ্গি প্রশিক্ষণ
- লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
জানুয়ারির শেষদিকে লেকহেড গ্রামার স্কুলের ধানমন্ডি শাখায় ছেলেকে ভর্তি করানো আহনাফ ইসলামও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি ধানমন্ডি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আহনাফ ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ে আমার ছেলেকে ভর্তি করা হয়েছিল। সব প্রসিডিউর (প্রক্রিয়া) দেখে মনে হয়েছিল, খুব ভালো মানের স্কুল। পরিচিত অনেকেও এ স্কুলে ভর্তি করাতে সাজেস্ট (পরামর্শ) করেছিল। এখন তো মহাবিপাকে পড়েছি।’
অভিভাবকরাও বলেছিলেন—ভালো লেখাপড়া হয়। ছেলে এবং মেয়েদের আলাদা ক্লাস করানো হয়। কে জানতো এরা প্রতারণা করবে। এখন গুলশান থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ বলছে, তারা প্রতারকদের ধরার চেষ্টা করছে।– অভিভাবক আঞ্জুমান আরা
গুলশান থানায় জমা পড়া অভিযোগগুলো তদন্ত করছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই নিরস্ত্র) শাহীন মোল্লা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছি। অনেকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, অনেকে মৌখিকভাবে জানাচ্ছেন। দুই শাখা মিলিয়ে একশজনেরও বেশি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তির টাকা নিয়ে স্কুল বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। তাছাড়া অনেকে সেমিস্টার ফি দিয়েও পরীক্ষা দিতে পারেনি। তাদের রিপোর্ট কার্ডও দেয়নি। এজন্য শিক্ষার্থী কোথাও ভর্তি হতেও পারছে না।’
এসআই শাহীন মোল্লা বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে তৎপর। আরএম গ্রুপের মালিক খালেদ হাসান মতিন স্কুলের প্রধান। তার সন্ধানে নেমেছে পুলিশ। আমরা ধারণা করছি এ স্কুলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতারণা করে বহু অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তারপরও আমরা ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি।’
আরও পড়ুন
- জঙ্গিবাদে উস্কানি : লেকহেড স্কুল বন্ধের নির্দেশ
- লেকহেড স্কুলের বিরুদ্ধে ভয়াবহ তথ্য ছিল : অ্যাটর্নি জেনারেল
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ নিয়ে অনেক অভিযোগ পাচ্ছি আমরা। পুলিশ প্রতারকদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে, স্কুলের দুটি শাখায় সরেজমিনে গিয়ে কাউকে না পেয়ে আরএম গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রাজধানীর বনানীর কার্যালয়ে গিয়েও কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তারা এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন।
ভুক্তভোগীরা লেকহেড স্কুলের অ্যাডমিন পরিচয় দেওয়া এক নারীর মোবাইল নম্বর দেন এ প্রতিবেদককে। ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানান। শিক্ষার্থীদের কী হবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গুলশান শাখার সব শিক্ষক চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। ধানমন্ডি শাখাও বন্ধ করে দিয়েছি। যারা আমাদের শিক্ষার্থী ছিল, তাদের পরীক্ষা নিয়েছিলাম আমরা। তাদের রিপোর্ট কার্ড প্রস্তুত করে দেওয়া হবে। সেটা দিয়ে তারা চাইলে অন্য জায়গায় ভর্তি হতে পারবে।’
নতুন ভর্তির পর যারা ক্লাসই করতে পারেনি, তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, ‘এখন আর কথা বলতে পারছি না। পরে কল দিচ্ছি।’ এরপর তার সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও কল রিসিভ হয়নি।
রাতের আঁধারে উধাও স্কুল!
গুলশান-১-এর ১৩৫ নম্বর রোড, হাউজ নম্বর এসইবি-৬। তিনতলা বিশিষ্ট এ বাড়িটি দীর্ঘদিন লেকহেড গ্রামার স্কুলের ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। গত এপ্রিলেও বহু শিক্ষার্থী স্কুলে আসা-যাওয়া করতো। জুনের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ বাড়িটি শূন্য দেখা যায়। আশপাশের ভবনের মালিকরা বিষয়টি ওই বাড়ির প্রকৃত মালিককে অবগত করেন। এরপর একজন নিরাপত্তারক্ষী বাড়িটি পাহার দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুনসান বাড়ির প্রধান ফটক বন্ধ। বাইরে থাকা কলিংবেল চাপতেই বেরিয়ে এলেন আশরাফুল নামে একজন নিরাপত্তারক্ষী। তিনি বলেন, ‘আমি জুন মাসের ৫ তারিখ থেকে ডিউটি করছি। তার আগেই স্কুলের সবাই পালিয়েছে। বাড়ির মালিক আমাকে এখানে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি কিছু জানি না।’
বাড়ির মালিকের ম্যানেজার আব্দুল মান্নানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ওরা প্রতারণা করেছে। দুই বছর ধরে ভাড়া দেয়নি। নোটিশ দিলে সময় চেয়ে চিঠি দেয়। প্রায় আড়াই কোটি টাকা পাওনা। হঠাৎ রাতের আঁধারে সব কিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে। তাদের কোনো হদিস মিলছে না।’
লেকহেড কার্যক্রম চালাচ্ছে কীভাবে বা বন্ধ হয়েছে কীভাবে, তা তাৎক্ষণিক বলতে পারবো না। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। কেউ প্রতারণা কিংবা অনিয়ম করলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান
বাড়ির পাশেই ইমানুয়েলস পার্টি সেন্টার। সেখানে নিরাপত্তারক্ষী মধ্যবয়সী আমজাদ হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগের দিন দেখলাম স্কুলের সাইন বোর্ড। পরদিন সকালে এসে দেখি কিছুই নেই। গোপনে রাতে সব বের করে নিয়ে গেছে ওরা।’
ধানমন্ডি শাখাও একইভাবে বন্ধ করে চলে গেছে কর্তৃপক্ষ। ধানমন্ডির ১১/এ রোডের ৭৮ নম্বর বাড়িটিও এখন শূন্য। সেখান থেকেও সব কিছু নিয়ে পালিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই বাড়ি দেখভালের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘এরা প্রতারক। বহু শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে সরে পড়েছে। আমাদের বাড়ির ভাড়াও প্রায় দুই কোটি টাকা বকেয়া। চেষ্টা করেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
জঙ্গি অর্থায়নে আলোচিত, যা বলছে বোর্ড-মন্ত্রণালয়
লেকহেড গ্রামার স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন লতিফ আহমেদ। প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন জেনিফার আহমেদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম মওলার স্ত্রী। গোলাম মওলা নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহরিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জেনিফার নিজেও এ সংগঠনে জড়িত ছিলেন। ২০০৯ সালে সরকার হিজবুত তাহরির নিষিদ্ধ করার পর আলোচনায় আসে লেকহেড গ্রামার স্কুল। একের পর এক এ স্কুলের পরিচালক, শিক্ষক ও কর্মকর্তা গ্রেফতার হন জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সেসময় জেনিফারকে সরিয়ে স্কুলের পুরো মালিকানা নেন হারুন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের মালিক হারুন অর রশিদ। প্রতিষ্ঠান দেখভাল শুরু করেন তার ছেলে রেজওয়ান হারুন, যিনি নিজেও জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুসলিমিনের (জেএম) নেতা ছিলেন। সবশেষ স্কুলটির মালিকানা নেন আরএম গ্রুপের কর্ণধার খালেদ হাসান মতিন। তার বিরুদ্ধেও জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ ওঠে।
বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে গ্রেফতার হন স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিনও। স্কুল কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে গেলে কয়েক দফা শুনানির পর কিছু শর্ত দিয়ে স্কুল খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দেন আদালত। সেখানে প্রধান শর্ত ছিল ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি করে গভর্নিং বডি করা এবং সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্বে আনা। তবে সেই শর্ত না মেনেই গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল লেকহেড গ্রামার স্কুল।
এত কিছুর পরও স্কুলটি কীভাবে চলছিল, তা নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক অধ্যাপক আবুল মনছুর ভুঁইঞার সঙ্গে যোগাযোগ করে জাগো নিউজ। তিনি বলেন, ‘স্কুলটি অনেক আলোচিত-সমালোচিত। এটির ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। সেজন্য বোর্ড এ নিয়ে আর খোঁজ রাখেনি।’
আবুল মনছুর ভুঁইঞা বলেন, ‘আমি স্কুল পরিদর্শক হিসেবে নতুন একটা তথ্য পেয়েছি। সেটা হলো—লাইট হাউজ নামে নতুন একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হচ্ছে, সেখানে লেকহেডের শিক্ষার্থীদের ট্রান্সফার করে দিচ্ছে। এখানে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হলে তখন সেটা আমরা দেখবো। বাকিটা দেখবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’
লাইট হাউজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের গুলশান শাখার অ্যাডমিন কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘ওই স্কুলটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা মানবিক দিক বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দিয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে আমাদের মালিকানা বা প্রতিষ্ঠান চালানো নিয়ে কোনো চুক্তি বা সম্পর্ক নেই।’
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘লেকহেড কার্যক্রম চালাচ্ছে কীভাবে বা বন্ধ হয়েছে কীভাবে, তা তাৎক্ষণিক বলতে পারবো না। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। কেউ প্রতারণা কিংবা অনিয়ম করলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
এএএইচ/এএসএ/এএসএম