শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষার্থী ধরে রাখতে না পারলে সরকারি সুবিধাও মিলবে না
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ধরে রাখতে না পারলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখা যাবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
তিনি বলেন, আমরা ইদানীং একটা প্রবণতা দেখছি- নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে আলিয়া মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়গুলোর বাইরে যে অনেকগুলো অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে অনেক শিক্ষার্থী চলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে তাদের (নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর) মনোযোগী হতে হবে। প্রতিষ্ঠান যদি কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ধরে রাখতে না পারে সেখানে সরকারি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা যাবে না। এরই মধ্যে সেটা আমরা বলেছি এবং এ নিয়ে একটা সমীক্ষাও করবো।
রোববার (১২ মে) সচিবালয়ে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী না থাকলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী আনতে হবে। ব্যয় বাড়ার কারণে সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী চলে যাচ্ছে কি না, সেটিও দেখতে হবে।
তিনি বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন, ফলাফলের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের পর তিনি বলেছেন, আমাদের বিশেষভাবে ভাবতে হবে যারা ছাত্র...পরীক্ষার্থী হিসেবে ছাত্ররা ১ শতাংশ কম অংশগ্রহণ করেছে, সেটার কারণ কী? ছাত্রদের পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা ছাত্রীদের চেয়ে কিছুটা কম। সে কারণটা তিনি অনুসন্ধান করতে বলেছেন। ছাত্র ও ছাত্রীদের সমানভাবে এগিয়ে নিতে আমাদের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।
‘এখন উপবৃত্তি ছাত্র-ছাত্রীদের সমানভাবে দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সেটা যদি যথাযথভাবে কাজ না করে সেগুলোর পরিবর্তন করে ছাত্ররাও যেন ছাত্রীদের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য তিনি বলেছেন।’
উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক্যাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজারের বেশি আসন নানা ধরনের ডিপ্লোমা কোর্সে অনুমোদিত আছে। আমরা অনুরোধ করতে চাই, গতানুগতিক উচ্চশিক্ষার ধারায় যদি শিক্ষার্থীরা না যায়, তবে এসব প্রতিষ্ঠানে সুযোগ আছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আরও দ্রুত কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে।
তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে কর্ম-সংশ্লিষ্ট ও কর্মমুখী শিক্ষাগ্রহণে আমরা শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে চাই।
এ বছর এসএসসিতে বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের পরীক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূল্যায়ন হচ্ছে তা চলতে থাকলে, অকৃতকার্য হওয়ার যে প্রক্রিয়া সেটি রয়ে যাবে। আমরা চাই সব শিক্ষার্থী যেন নিজেদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শিক্ষাধাপে উত্তরণ করতে পারে। কী কারণে অকৃতকার্য হয়েছে, সেটা অবশ্যই আমরা দেখবো।
সমাজে ফেল করা শিক্ষার্থীদের ওপর দায় চাপানোর একটা সংস্কৃতি রয়েছে। এ থেকে বের হতে হবে বলেও জানিয়েছেন মহিবুল হাসান চৌধুরী।
পাসের হার বেশি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, করোনার পর এবারই প্রথম যারা পরীক্ষা দিয়েছেন তারা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের জায়গায় সম্পূর্ণভাবে সেটা সম্পন্ন করতে পেরেছেন। সে কারণেও আমাদের পাসের হার বেড়ে থাকতে পারে। এ বছর পরীক্ষার্থী সংখ্যাও কিছু কম, সেজন্যও হয়তো শতাংশের হিসাবে পাসের হারটা বেড়ে থাকতে পারে।
কয়েক বছর ধরে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ফল খারাপ হচ্ছে- এ বিষয়ে নওফেল বলেন, প্রতি বছরই কোনো না কোনো বোর্ড পিছিয়ে থাকবে। এ বছর যদি সিলেট হয়, আগামী বছর অন্য কোনো বোর্ড হতেই পারে। কেউ না কেউ তো পেছনে থাকবেই।
- আরও পড়ুন
৫১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি
সুপারিশের কার্যকারিতা নেই, জল ঘোলা করার চেষ্টা হচ্ছে: মন্ত্রী
এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি অনুরোধপত্র পাঠাচ্ছি। তাদের পঞ্চম শ্রেণির পর্যন্ত যে ধাপটি আছে, সেটি যেন তারা উত্তরণ করে অষ্টম শ্রেণির পাঠদান দেওয়ার অবস্থানে আসেন সে পরিকল্পনা প্রণয়ন করার জন্য। পিইডিপি-৫ যে প্রকল্প আসছে সেখানে যেতে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পাসের হার শূন্য থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বাস্তব অবস্থায় দেখা হয় কি না- জানতে চাইলে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সেগুলো আসলে দেখা হয়। আমরা সেখানে দেখেছি খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী অনেক প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে। সেজন্য শূন্য সংখ্যা (শূন্য পাস প্রতিষ্ঠান) বৃদ্ধি পেয়েছে। সেগুলোতে কেন্দ্র থাকা উচিত কি না সেটি আমাদের ভেবে দেখতে হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, সেটা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। সেখানে এমপিও বন্ধ করে দিলে আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, শিক্ষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমার মনে হয় না সেটা যুক্তিযুক্ত হবে।
কওমি মাদরাসাগুলোকে রেগুলেশনের আওতায় আনার সরকারের পরিকল্পনা আছে কি না- জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কওমি মাদরাসার ৬টি বোর্ড নিয়ে যে বোর্ড আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে তাদের সঙ্গে আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করেছি। সেখানে কী কী পড়ানো হচ্ছে, সেটি জানার চেষ্টা করছি এবং একসঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তাদের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ করবো, তাদের নামে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে, তারা যেন সেগুলো নিবন্ধনের আওতায় আনে। যেন রাষ্ট্র তাদের কাছে তথ্য চাইলে, বোর্ডের অধীনে কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে- সে তথ্য যেন আমরা পাই।
আরএমএম/এমকেআর/জিকেএস