শরীফার গল্প
এক সপ্তাহেও বৈঠকে বসেনি পর্যালোচনা কমিটি, প্রতিবেদন কবে?
নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীরা হাতে পাওয়ার পর থেকেই চলছে নানা বিতর্ক। সেই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলে উত্তাপ বাড়িয়েছে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ হওয়ার গল্প। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের এ অধ্যায় নিয়ে একটি পক্ষ আপত্তি তুলেছেন। বিষয়টি বেশি আলোচনায় আসে গত ১৯ জানুয়ারি।
ওইদিন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস জাতীয় শিক্ষক ফোরামের অনুষ্ঠানে বই থেকে ওই গল্পের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন এবং অন্যদেরও ছেঁড়ার আহ্বান জানান। মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। শুরু হয় তুমূল আলোচনা-সমালোচনা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ হওয়ার গল্পটি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে পরিমার্জনের লক্ষ্যে গত ২৪ জানুয়ারি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঁচ সদস্যের ওই কমিটিতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদকে আহ্বায়ক করা হয়। সদস্যসচিব হিসেবে রাখা হয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম ইউনিট) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানকে।
কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হালিম ও ঢাকা আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রশীদ।
কমিটি গঠনের এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো বৈঠকেই বসতে পারেননি সদস্যরা। ফলে মতামতও দিতে পারছেন না তারা। অথচ শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অতি দ্রুত এ কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদস্যসচিব ও এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান অসুস্থ থাকায় বৈঠকে বসতে পারেননি পর্যালোচনা কমিটি। ফলে ঠিক কতদিনের মধ্যে এ নিয়ে প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হবে, তাও জানেন না খোদ কমিটির আহ্বায়ক। আর অন্য সদস্যরা নিজেদের মতামত দিতে মুখিয়ে থাকলেও বৈঠক না হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
জানতে চাইলে কমিটির সদস্য ঢাকা আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কমিটিতে রাখার পর আমি এটা নিয়ে পড়াশোনা করেছি। তবে এখনো কোনো বৈঠক না হওয়ায় মতামত দিতে পারিনি। শুনেছি—কমিটির সদস্যসচিব অসুস্থ। তিনি সুস্থ না হলে বৈঠক করা সম্ভব হবে না।’
শরীফার গল্প পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা/ ছবি: সংগৃহীত
গল্প পড়ে তার মূল্যায়ন কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা কমিটির বৈঠকে না জানিয়ে মিডিয়ায় (গণমাধ্যম) আগে ভাগে বলাটা সমীচীন হবে না। তবে এটুকু বলতে পারি— রাসুলুল্লাহর (মহানবি হজরত মুহাম্মদ সা.) যুগেও হিজড়া ছিল। তাদের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী, তা নিয়ে আমি মতামত তুলে ধরবো।’
একই কথা জানান কমিটির আরেক সদস্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর ড. মুফতি মাওলানা কাফিল উদ্দিন সরকার সালেহী। তিনি বলেন, ‘বৈঠকের জন্য কোনো ডাক পাইনি। মিটিংয়ে আমার যতটুকু জ্ঞান, সে অনুযায়ী মতামত তুলে ধরবো।’
কমিটির সভাপতি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের একটু দ্রুত বসতেই মন্ত্রী বলেছিলেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে প্রতিবেদনটা দিতে পারলে ভালো হতো। এনসিটিবির সদস্য এবং কমিটির যিনি সদস্যসচিব অধ্যাপক মশিউজ্জামান অসুস্থ। তিনি হাসপাতালে ভর্তি। এমন অবস্থায় মিটিং করবো কীভাবে? যৌক্তিক কারণেই আমরা বসতে পারিনি।’
কবে নাগাদ বৈঠক হতে পারে এবং প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বসতেই পারলাম না এখনো, প্রতিবেদন দেওয়ার চিন্তা তো পরে। উনি (মশিউজ্জামান) যেহেতু অসুস্থ। কোনোভাবে জুম প্ল্যাটফর্মে মিটিং করা যায় কি না, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছি। বৈঠকে বসে সবার মতামত পেলে তখন ধারণা করা যাবে যে আমরা কত দ্রুত প্রতিবেদন দিতে সক্ষম হবো।’
এনসিটিবির দুজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, শরীফার গল্প পর্যালোচনায় কমিটি গঠনের পরদিন ২৫ জানুয়ারি এনসিটিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন শিক্ষামন্ত্রী। ওইদিন মন্ত্রী শরীফার গল্প পর্যালোচনায় গঠিত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কথা বলেন। সে সময় কমিটির সদস্যরা নির্দিষ্ট করে সময় বেঁধে না দেওয়ার অনুরোধ করেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী অতি দ্রুত পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেন।
জানতে চাইলে মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলেছি আমরা। তারা বৈঠক করেছে কি না, জানি না। বিষয়টি খোঁজ নেবো।’
এএএইচ/এমআরএম/এএসএম