পরীক্ষামূলক বই পড়ছে শিক্ষার্থীরা, উপযোগিতা যাচাই অক্টোবরে

আল-আমিন হাসান আদিব
আল-আমিন হাসান আদিব আল-আমিন হাসান আদিব , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫০ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪
জাগো নিউজ গ্রাফিক্স

চলতি শিক্ষাবর্ষে সাত শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়ছে নতুন শিক্ষাক্রমের বই। এসব বইয়ের নানান ভুল-অসঙ্গতি নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে দাবি তুলেছেন বইয়ের বিভিন্ন পাঠ্য সংশোধনের। অনেকে আবার বইয়ের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে ই-মেইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) বার্তা পাঠাচ্ছেন। একের পর এক ই-মেইল বার্তায় রীতিমতো চাপে এনসিটিবি।

পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বলছে, নতুন শিক্ষাক্রমের কোনো বই-ই এখনো পূর্ণাঙ্গ নয়। সবই পরীক্ষামূলক সংস্করণ। চলতি বছরের অক্টোবর মাসের দিকে নতুন বইয়ের উপযোগিতা যাচাই করা হবে। যাচাইকালে যেসব পাঠ্য নিয়ে সমস্যা হবে, তা সংশোধন অথবা বাদ দেওয়াও হতে পারে। মূল্যায়ন শেষে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে কিছু শ্রেণিতে দেওয়া হবে পরিমার্জিত সংস্করণের বই।

জানা গেছে, গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়। একেবারে নতুন ধাঁচের বই পড়ানো হয় তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়ছে নতুন করে লেখা বই। ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ শ্রেণিতে এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে ধাপে ধাপে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম।

আরও পড়ুন: শিক্ষাক্রম ঘিরেই বছরজুড়ে বিতর্ক, ছিল আন্দোলনের উত্তাপও

পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পর ২০২৩ সালের ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির বইগুলোতে তথ্য ও বানানজনিত অসংখ্য ভুল ধরা পড়ে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চার বইয়ে ১৮৮টি অসঙ্গতি খুঁজে বের করে বিশেষজ্ঞ কমিটি। চলতি বছরও বইয়ে অনেক ভুল তথ্য থাকার অভিযোগ আসছে। এ কারণে এনসিটিবি নজর দিচ্ছে ভুল সংশোধনে। ঈদের পর সেসব সংশোধনী সব পর্যায়ের স্কুলে পাঠানো হবে। এরপর কাজ শুরু হবে উপযোগিতা যাচাইয়ের।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়। একেবারে নতুন ধাঁচের বই পড়ানো হয় তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়ছে নতুন করে লেখা বই।

সারাদেশে কমপক্ষে ৩০০ স্কুলে সশরীরে উপস্থিত থেকে উপযোগিতা যাচাইয়ের কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা। শহরের চেয়ে গ্রাম, উপকূলীয় এলাকার স্কুলকে দেওয়া হবে বেশি গুরুত্ব। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের স্কুলে এ প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হবে। এরমধ্যে থাকবে প্রতিবন্ধীদের স্কুলও। নেওয়া হবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মতামত। সেগুলো লিখিত আকারে এনসিটিবিতে পাঠাবেন কর্মকর্তারা। তা নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে বিশেষজ্ঞ কমিটি।

আরও পড়ুন: নবম শ্রেণিতে নেই বিজ্ঞান-বাণিজ্য-মানবিক, সবাই পড়ছে একই বিষয়

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘রোজার আগে ট্রাইআউট বা উপযোগিতা যাচাইয়ের কাজ সম্ভব নয়। রোজার মধ্যেও এটা করা যাবে না। ঈদের পর আমরা এতে হাত দেবো। তখন মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শ্রেণি অর্থাৎ, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বইয়ের উপযোগিতা যাচাই করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘চার শ্রেণির বইয়ের উপযোগিতা যাচাই করা হলেও ২০২৫ সালে চূড়ান্ত বই পাবে শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। তাদের বই যাচাইয়ের পর আলোচনা করে পরিমার্জন করা হবে। আগামী বছর অষ্টম ও নবমের বই আবার যাচাই করা হবে। এ দুই শ্রেণির চূড়ান্ত বই পাওয়া যাবে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে। আর ২০২৭ সালে চূড়ান্ত করা হবে দশম শ্রেণির বই।

রোজার আগে ট্রাইআউট বা উপযোগিতা যাচাইয়ের কাজ সম্ভব নয়। রোজার মধ্যেও এটা করা যাবে না। ঈদের পর আমরা এতে হাত দেবো। তখন মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শ্রেণি অর্থাৎ, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বইয়ের উপযোগিতা যাচাই করা হবে।

উপযোগিতা যাচাই যেভাবে
নতুন করে লেখা বইগুলোর উপযোগিতা যাচাই প্রক্রিয়া নিয়েও ধারণা দিয়েছেন পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তারা। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, হঠাৎ কোনো স্কুলে যাবে এনসিটিবির প্রতিনিধিদল। ক্লাস চলাকালীন সেখানে প্রবেশ করবেন এবং শিক্ষার্থীদের পেছনে বসবেন। তারা পুরো ক্লাস পর্যবেক্ষণ করবেন। শিক্ষকের ক্লাস নেওয়ার ভঙ্গি ও পাঠদান পদ্ধতিও দেখবেন তারা। এটিকে বলা হয় ক্লাস পর্যবেক্ষণ টুলস। বিষয়টি পরিমাপের জন্য দেওয়া থাকবে টুলস প্যারামিটার।

আরও পড়ুন: ‘শিক্ষক প্রশিক্ষণের’ ভিডিও ভাইরাল, অনুসন্ধানে যা জানা গেলো 

এরপর নেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির শ্রেণিশিক্ষকের সাক্ষাৎকার। এছাড়া সন্তানকে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির ওই নির্দিষ্ট বই পড়ান এমন অভিভাবক খুঁজে বের করে তার কাছ থেকে মতামত নেওয়া হবে। সব শেষে এফজিডি (ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন) পদ্ধতিতে নেওয়া হবে ওই শ্রেণির ১০ শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার। তাদের কাছে দুটি বিষয় জানতে চাওয়া হবে। কোন অধ্যায়ের পড়া তাদের বেশি ভালো লেগেছে ও কেন? পাশাপাশি কোন অধ্যায়ের পড়া বেশি কঠিন মনে হয়েছে এবং কেন? তাদের উত্তর টুলস প্যারামিটার অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হবে।

তিনশ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮০ শতাংশ যদি কোনো একটি অধ্যায়কে বেশি কঠিন মনে করে এবং ক্লাস পর্যবেক্ষণ, শিক্ষক ও অভিভাবকের বক্তব্যও যদি একই হয়, তখন সেটি পরিবর্তন করা হবে। আবার কোনো অধ্যায় বেশি সহজ মনে করলে সেখানে তুলনামূলক কঠিন বিষয় যুক্ত করে ভারসাম্যের চেষ্টাও করা হবে।

আরও পড়ুন: নতুন শিক্ষাক্রমে মাদরাসার বই রূপান্তরে ‘জুজুর ভয়’

উপযোগিতা যাচাইয়ে এত দেরি!
এনসিটিবি বলছে, তারা অক্টোবরের দিকে উপযোগিতা যাচাই করবে। অর্থাৎ তা যাচাই-বাছাই ও আলোচনা করতে বছর শেষ হয়ে যাবে। অথচ ২০২৫ সালের বই ছাপাতে কাজ শুরু হবে অক্টোবর মাস থেকেই। ফলে উপযোগিতা যাচাই আগেভাগে না করলে আগামী বছর চূড়ান্ত বই ছাপার কাজে দেরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আরও আগে এ প্রক্রিয়ার শুরুর পরামর্শ তাদের।

উপযোগিতা যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। সেটা এনসিটিবি কীভাবে করবে, তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। যে প্রক্রিয়ায়ই তারা এটা করুক, বছরের শেষে করতে গেলে তা দেরি হয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘উপযোগিতা যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। সেটা এনসিটিবি কীভাবে করবে, তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। যে প্রক্রিয়ায়ই তারা এটা করুক, বছরের শেষে করতে গেলে তা দেরি হয়ে যাবে। দ্রুত এটা না করা গেলে এর ফলাফল বা বই সংশোধন-পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করা কষ্টসাধ্য।’

আরও পড়ুন: প্রাথমিকে এসএসসি-এইচএসসি পাস শিক্ষক ৮০ হাজার

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপযোগিতা যাচাইয়ের মাধ্যমে বইয়ে সুশৃঙ্খলাভাবে সংশোধনী আনা হবে। আগেও উপযোগিতা যাচাই অক্টোবরে করা হয়েছিল। এবারও আমরা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এটা করবো। আশা করি- ২০২৫ সালের নতুন বই ছাপানোর আগেই এটা করে বই চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।’

এএএইচ/কেএসআর/এসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।