ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়
মাদরাসা পরিদর্শনে ৫০ হাজার, অনুমোদনে লাখ টাকা হাঁকান প্রো-ভিসি
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) ৯৭ পৃষ্ঠার পাহাড়সম অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগের সঙ্গে এর স্বপক্ষে প্রমাণক বিভিন্ন নথিপত্রও জমা দিয়েছেন অভিযোগকারীরা।
লিখিত অভিযোগে উঠে এসেছে মাদরাসা পরিদর্শন, অধিভুক্তি, প্রাথমিক পাঠদান, নবায়ন, তদন্ত, নিয়োগ প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণসহ নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির চিত্র। এছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে গাড়ির জ্বালানি ব্যবহার, রোহিঙ্গাদের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মিলেছে অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণও।
ইউজিসিতে জমা পড়া লিখিত অভিযোগের একটি কপি জাগো নিউজের হাতে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, প্রো-ভিসি মাদরাসা অধিভুক্তি ও নবায়নের জন্য পরিদর্শনে গেলে গড় হিসেবে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার টাকা করে উৎকোচ নেন। আর প্রাথমিক পাঠদানের অনুমোদনের জন্য গেলে সেই টাকা বেড়ে দাঁড়ায় এক থেকে দুই লাখ পর্যন্ত। মাদরাসার অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে প্রতিনিধি হিসেবে গেলেও তাকে এক লাখ টাকার কম দিলে তা নেন না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও অস্বাভাবিক হারে টিএ-ডিএ বাবদ টাকা নেন। শুধু গত বছরের জুন মাসেই টিএ-ডিএ খাতে দুই লাখ ৫০ হাজার ১৬৮ টাকা নিয়েছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ প্রায় দুই বছর আগে যোগদান করেছেন। যোগদানের ৭২০ দিনের মধ্যে তিনি ৪০০ দিন অফিস করেছেন। বাকি ৩২০ দিনে তিনি চারশোর বেশি মাদরাসা পরিদর্শন, অধিভুক্তি, প্রাথমিক পাঠদান, নবায়ন, তদন্ত, নিয়োগ প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণসহ নানা কাজে গিয়েছেন। এমনকি বেশিরভাগ শুক্র-শনিবারও তিনি বাদ দেননি।
৯৭ পৃষ্ঠার অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রো-ভিসি আবুল কালাম আজাদ বিভিন্ন মাদাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগে প্রতিনিধি হিসেবে নিজেই নিজের নামে চিঠি ইস্যু করেন। বরিশালের বাঘিয়া আল-আমিন কামিল মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগে বড় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেখান থেকে তিনি বড় অংকের টাকা নিয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের খোশবাজার ছালেহিয়া দারুচ্চুন্নাত কামিল মাদরাসার নিয়োগ প্রতিনিধি হিসেবে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি ঢাকায় কাগজপত্র নিয়ে আসতে নির্দেশ দেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে তিনি ওই মাদরাসার উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেন। পটুয়াখালীর দুমকী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার গভর্নিং বডি অনুমোদন নিয়ে মামলা থাকার পরও তিনি তা অনুমোদন দেন। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পাইকান আকবরিয়া ফাজিল মাদরাসা, ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসা পরিদর্শনে নিজেই নিজের চিঠি অনুমোদন করেছেন।
এদিকে, নিয়ম অনুযায়ী—প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ২০০ লিটার পর্যন্ত জ্বালানি তেল ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু তিনি অনেক মাসেই সাড়ে ৩০০-৪০০ লিটার পর্যন্ত জ্বালানি তেল নেন। তার বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার হলেও তিনি তা দেখান ১৫০ কিলোমিটার। এ ব্যাপারে তার গাড়িচালককে শোকজও করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ইউজিসিতে জমা দেওয়া অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ প্রো-ভিসি হিসেবে যোগদানের পর থেকে তার ব্যাংক হিসাবে এক বছর ১০ মাসে ৭৯ লাখ ১০ হাজার ৮৪৭ টাকা জমা হয়েছে। অথচ তিনি এসময়ে বেতন-ভাতা পেয়েছেন ২৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭০ টাকা। এছাড়া তার আরও তিনটি ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখলেও বড় ধরনের লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যাবে। প্রো-ভিসির শেয়ার বাজারে বড় বিনিয়োগ রয়েছে। তার ও স্ত্রীর নামে লাখ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ছাত্রজীবনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়াতে ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক পদে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবাসহ পুরো পরিবারই স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানে ছিলেন। এমনকি তার বাবা জয়নুল আবেদীন হাওলাদার ঝালকাঠিতে ‘রাজাকার’ হিসেবে পরিচিত। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আবুল কালাম আজাদের চাকরি হয়। আর তার চাকরির সুপারিশদাতা ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী।
জানতে চাইলে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে বেনামে ভুয়া অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। আমি কবে, কোন মাদরাসায় গিয়েছি, সেগুলোর সব তথ্য আমার কাছে নেই। তবে যথাযথ অনুমতি ছাড়া কোথায়ও যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু মাদরাসা পরিদর্শনসহ কোনো ক্ষেত্রেই আমি টাকা নিইনি। এটি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারবো। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এগুলো আমি পরোয়া করি না।’
এএএইচ/এমকেআর