বেসরকারি স্কুল
শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর-কল্যাণ ফিও গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের
চাকরিজীবন শেষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ‘অবসর সুবিধা’ ও ‘কল্যাণ ট্রাস্ট’ থেকে এককালীন বড় অংকের টাকা পেয়ে থাকেন। এ জন্য কর্মরত থাকাকালে বেতনের ৬ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হতো। এখন তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ কাটা হয়। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিন বছর এ টাকা পেতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অপেক্ষা করতে হয়। হয়রানি ও ভোগান্তিরও শেষ থাকে না। এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন শিক্ষকরা।
তবে অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষকদের বেতন থেকে প্রতি মাসে যে অর্থ কেটে রাখা হয়, তা খুবই সামান্য। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরকার থেকে দেওয়া বেতনের অংশ কাটা হয়।
বেতন কম হওয়ায় ৬ শতাংশ অর্থ কাটলে খুব বেশি টাকা জমে না। তা দিয়ে অবসর সুবিধা ও ট্রাস্ট থেকে যে টাকা দেওয়া হয়, তা মেটানো সম্ভব নয়। এ কারণে অবসর সুবিধা বোর্ড কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছে এককালীন বড় অংকের অর্থ দাবি করে আসছিল।
এদিকে, অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের দাবি মেটাতে সরকার ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা নিয়ে এ তহবিল বাড়ানোর করার পথে হেঁটেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের থেকে বাধ্যতামূলকভাবে এ টাকা আদায় করা হবে।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরের নতুন ভর্তি নীতিমালায় এ বিধান রাখা হয়েছে। রোববার (২২ অক্টোবর) শিক্ষাসচিব সোলেমান খানের সই করা নীতিমালাটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
নীতিমালার ১০(৬) ক্রমিকে বলা হয়, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলের জন্য ভর্তিকালীন সময়ে শিক্ষার্থীপ্রতি ১০০ টাকা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট হিসাব খাতে জমা দিতে হবে। এর মধ্যে ৭০ টাকা অবসর সুবিধা ফান্ডে, বাকি ৩০ টাকা কল্যাণ ট্রাস্টের ফান্ডে জমা দিতে হবে। মাউশি, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এ ফি দিতে হবে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০২২ সালে জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী- দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৬৭৪ জন। এর মধ্যে ৯৪ শতাংশই বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।
শিক্ষকদের কল্যাণে সরকার পদক্ষেপ নিলে শিক্ষার্থীদের ওপর কেন অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ফি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, তাদের ৬ শতাংশ কাটা হতো আগে। এখন তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ কাটা হচ্ছে। এ ফান্ডের জন্য এখন শিক্ষার্থীদের থেকে ফি নেওয়া হচ্ছে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব (চুক্তিভিত্তিক) শাহজাহান আলম সাজু জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এমপিও অর্থাৎ সরকারের দেওয়া বেতনের অংশ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে রাখা হয়। এটা খুবই কম। টাকার অংক বলার মতো নয়। অবসরের পর তারা যখন এ টাকা পেতে আবেদন করেন, তখন আমাদের তা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। তহবিল না থাকায় আবেদন করেও যথাসময়ে টাকা পান না অনেকে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য আমরা সবসময় দাবি জানিয়ে আসছি। বেসরকারি শিক্ষকদের ব্যাপারেও সরকার আন্তরিক। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় কিছু টাকা জমার বিষয়টি ভর্তি নীতিমালায় যুক্ত হয়েছে। এটা শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণেই ব্যয় হবে।’
জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব সোলেমান খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০২২ সালের ভর্তি নীতিমালাতেও এটা ছিল। এবারই নতুন নয়। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনের তাগিদে এটা নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ভর্তির সময় বছরে একবার ১০০ টাকা করে দেবে। এটা তাদের শিক্ষকদেরই অবসরে যাওয়ার পর বোর্ড ও ট্রাস্ট থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’
এএএইচ/এসএনআর/জিকেএস