যৌন হয়রানির অভিযোগ
ভিকারুননিসার সেই শিক্ষকের সঙ্গে ‘কাজ করতে চান না’ সহকর্মীরা
ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক আবু সুফিয়ানের সঙ্গে কাজ করতে চান না তার সহকর্মীরা। প্রতিষ্ঠানটির দিবা শাখার ২৭ জন শিক্ষকের স্বাক্ষর সংবলিত চিঠিতে অধ্যক্ষকে এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
জানা গেছে, গত ২৯ আগস্ট বসন্ধুরা (দিবা) শাখার নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা ইংরেজির শিক্ষক আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ তদন্তে গত ২ সেপ্টেম্বর স্কুলে গিয়ে শুনানি করেন তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আল-আমিন হালদার।
ওইদিন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী, ওই ছাত্রীর মা, আরও কয়েকজন অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে শাখাপ্রধান জগদীশ চন্দ্র পালসহ ২৭ জন শিক্ষক একটি লিখিত রেজ্যুলেশন দেন।
তাতে বলা হয়, ‘নবম শ্রেণির একজন ছাত্রীর অভিভাবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ, শাখাপ্রধান ও অভিভাবকের সামনে আমরা জানাচ্ছি যে, ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক আবু সুফিয়ানের সঙ্গে আমরা কাজ করতে চাই না।’
এদিকে, অভিযোগ ওঠার পর শিক্ষক আবু সুফিয়ানকে অধ্যক্ষ কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সুফিয়ানের দাবি, শাখাপ্রধান জগদীশ চন্দ্র পালের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে তাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুই-তিন বছর আগে একটি বিষয় নিয়ে মতবিরোধ থেকে শাখাপ্রধান জগদীশ পাল আমার পেছনে লেগে আছেন। তিনি আমাকে সরাতে চান। একবার আমাকে বদলি করা হয়েছিল। তখন ছাত্রীরাই আমার জন্য আন্দোলন করেছিল। পরে আমার বদলির আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তখন আমাকে সরাতে পারেননি। পূর্ব রেষারেষির জেরে এবার ষড়যন্ত্রের ফাঁদ বানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন>ভিকারুননিসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ
আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমার পরিবার আছে। দুই সন্তানের বাবা আমি। আমার এক মেয়ে ভিকারুননিসার ছাত্রী। কীভাবে আমি আমার মেয়ের সমতূল্য ছাত্রীকে হয়রানি করতে পারি? এমন অভিযোগ ওঠার পর আমি ভেতর থেকে অনেকটা মরে গেছি।’
ওই ছাত্রীর বাবা অভিযোগে বলেছেন আপনি এসএমএসে হয়রানি করেছেন, এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেন, ‘যতদূর জানতে পারলাম- ওই ছাত্রীকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার থেকে মেসেজ করা হয়েছে। ছবি পাঠানো হয়েছে। যে আইডি থেকে পাঠানো হয়েছে, সেটা ফেক। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে ফেক আইডি বানিয়ে, ছবি এডিট করে পাঠানো খুবই সহজ কাজ। সেই প্রক্রিয়ায় ফেক আইডি বানিয়ে আমার নামে ওই ছাত্রীকে মেসেজ পাঠিয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা।’
শিক্ষক আবু সুফিয়ানের অভিযোগ বিষয়ে শাখাপ্রধান জগদীশ চন্দ্র পাল বলেন, ‘উনার (আবু সুফিয়ান) সঙ্গে আমার কোনো ঝামেলা নেই। উনি কেন এমন অভিযোগ তুলছেন, তা বোধগম্যও নয়। করোনাকালে যখন প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ ছিল, তখন আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে প্রাইভেট পড়ানোর কারণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। তখন আমি তার পক্ষ নিয়ে কথা বলেছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা ছাত্রীর বাবা সরাসরি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা এটা পরে জেনেছি। বিষয়টি জানাজানির পর শিক্ষকরা তার সঙ্গে কাজ করতে অনাগ্রহের কথা বলেছেন। এখানে আমার কোনো কিছুই করার নেই। তদন্ত চলছে, সেখানে ঘটনা সত্য নাকি মিথ্যা তা জানা যাবে।’
স্কুলের দুজন শিক্ষক ও অভিভাবকরা জাগো নিউজকে জানান, ভিকারুননিসার ফেসবকু গ্রুপে মহানবি হযরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তির জেরে ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর শিক্ষক (বর্তমান বসুন্ধরা দিবা শাখার প্রধান) জগদীশ চন্দ্র পালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, মাউশির তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে আবার স্বপদে বহাল করা হয়। একইসাথে তিনি তিনি শাখাপ্রধানের দায়িত্বও পান। কটূক্তি ইস্যুতে ওই সময় যে কয়েকজন শিক্ষক তার (জগদীশ পাল) বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন, তাদেরকে কৌশলে শাখা থেকে বদলির চেষ্টা করেন তিনি। এ ইস্যূতে শিক্ষক সুফিয়ানও রোষানলে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বদলি করা হয়। পরে ছাত্রী ও অভিভাবকরা আন্দোলনে নামলে বদলি স্থগিত করে আবু সুফিয়ানকে বসুন্ধরা শাখায় বহাল রাখা হয়।
জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি তো তদন্তাধীন। এসব নিয়ে কথাবার্তা বেশি বলাটাও ঠিক না। তদন্ত শেষ হোক, প্রতিবেদন হাতে আসুক, তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযুক্ত শিক্ষককে অধ্যক্ষ কার্যালয়ে সংযুক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, তাকে এখানে (অধ্যক্ষ কার্যালয়ে) আনা হয়েছে। তার সহকর্মীরাও এমনটা (সুফিয়ানের সঙ্গে কাজ করতে চান না) চেয়েছেন। তদন্ত শেষে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’
এএএইচ/এসএনআর/জিকেএস