গণিতের জটিল প্রশ্নে ঢাকা বোর্ডে ‘খারাপ’ ফল
২০২১ সালে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। গতবছর অর্থাৎ ২০২২ সালে এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। অথচ এবার তা ৭৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছে। পাসের এ হারকে খারাপ ফল হিসেবে দেখছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ঢাকা বোর্ডে গণিতে ফেল বেশি। আবার অনেকের জিপিএ-৫ পাওয়া হয়নি এ গণিতের কারণে। গণিতের প্রশ্ন জটিল হয়েছিল বলে দাবি তাদের।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এ দাবির সঙ্গে একমত খোদ বোর্ডের চেয়ারম্যানও। তবে তিনি ৭৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ পাসের ফলাফলকে ‘খারাপ’ মানতে নারাজ।
আরও পড়ুন: প্রশ্নের মান ভালো হওয়ায় ফলাফলে ‘তারতম্য’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার আমাদের একটু সমস্যা হয়ে গেছে গণিতে। গণিতের প্রশ্নটা জটিল হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা ওই বিষয়ে খারাপ করেছে।’
গত দুই বছরের তুলনায় এবার ফল খারাপ হওয়ার কারণ কী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ফল খারাপ না। এবার পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে। গত বছর তো স্বল্প সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছিল। আর এটা শুধু ঢাকা মহানগর বা ঢাকা জেলার ফল নয়, এটার মধ্যে শরীয়তপুর আছে, টাঙ্গাইল আছে, মুন্সিগঞ্জ আছে। এমন অনেকগুলো জেলাও আছে। গড় করে এজন্য পাসের হার একটু কম।’
এবার পূর্ণ সিলেবাস ও সব বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ায় যে ফল হয়েছে, তা ধারাবাহিক বলেও দাবি করেন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল এবার একটু অস্বাভাবিক। এখানে তুলনামূলক ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। যদিও ঢাকার আশপাশের কয়েকটি জেলার নতুন বা মানসম্পন্ন নয় এমন স্কুলও এ বোর্ডের অধীনে। তবুও ঢাকা বোর্ডকে বিষয়টি (ফল খারাপ) নিয়ে কাজ করা উচিত।’
আরও পড়ুন: সবচেয়ে বেশি ফেল ঢাকা বোর্ডে, জিপিএ-৫ কম সিলেটে
জানতে চাইলে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা এমন হলো কেন? দুই-তিনটা বোর্ড রয়েছে; যেমন- সিলেট, দিনাজপুর কয়েক বছর ধরে খারাপ করছে। কিন্তু ঢাকা বোর্ডের এবার এ দশা কেন হলো? এ বোর্ডের অধীনে তো তথাকথিত নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাদের তো খারাপ করার কথা না। হয়তো আশপাশের জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট খারাপ, তাই গড় করতে গিয়ে বোর্ডের ফলাফলের এ দশা। যেটাই হোক, ঢাকা বোর্ডের ফল একটা স্ট্যান্ডার্ড হওয়াটাই উচিত বলে আমি মনে করি।’
এদিকে, প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মোট পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৪ জন এবং ছাত্রী ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৬ জন। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৮৪ হাজার ৯৬৪ জন এবং ছাত্রী ৯৮ হাজার ৬১৪ জন।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মোট পাস করেছে ১৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪৬ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ১৬ হাজার ৭১ জন এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৬ হাজার ৩৭৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ২২০ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছাত্র ৭০ হাজার ৯৭৫ জন এবং ছাত্রী ৮৮ হাজার ২৪৫ জন।
আরও পড়ুন: পাসের হারে এগিয়ে বরিশাল বোর্ড, পিছিয়ে সিলেট
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যশোরে ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এছাড়া বরিশালে ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ, সিলেটে ৭৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৫ শতাংশ ৪৯ শতাংশ।
ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা বোর্ডে গতবার যেখানে পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, সেখানে এবার পাস করেছে ৭৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। রাজশাহীতে গতবার পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সেখানে এবার পাসের হার ৮৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অর্থাৎ রাজশাহীতে পাসের হার বেড়েছে। তবে পাসের হার কমেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে গতবার পাসের হার ছিল ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ, এবার ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। ফলে পাসের হার কমেছে ১৩ শতাংশের বেশি। যশোর বোর্ডে গতবার পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ, এবার তা কমে হয়েছে ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ পাসের হার কমেছে ৯ শতাংশ। চট্টগ্রাম বোর্ডে গতবার পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ বোর্ডে পাসের হার কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ছাত্রদের পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কিশোর গ্যাং
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে গতবার পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, এবার ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ। এ বোর্ডে পাসের হার কিছুটা বেড়েছে, পাসের হার সবচেয়ে বেশি এই বোর্ডে। সিলেটে গতবার পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ, এবার ৭৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অর্থাৎ পাসের হার ২ শতাংশ কমেছে। দিনাজপুরে গতবার পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ, এবার তা ৭৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। পাসের হার কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। ময়মনসিংহ বোর্ডে গতবার পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, এবার ৮৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ফলে পাসের হার কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ।
এএএইচ/কেএসআর/এমএস