প্রাথমিক শিক্ষা
মানসম্মত-জীবনমুখী শিক্ষার অভাবে ঝরে পড়বে ৪ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থী
২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে ৮২০ মিলিয়ন। এটি বর্তমান সংখ্যার চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি হবে। তবে পরবর্তী বছরে সেটি হ্রাস পেয়ে ৭৭৪ মিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে। এই এক বছরে ৪৬ মিলিয়ন শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তর থেকে ঝরে পড়বে।
এসময়ের মধ্যে মানসম্মত ও জীবনমুখী শিক্ষা এবং জীবন রক্ষায় স্বাস্থ্য সচেতনা সৃষ্টি করতে না পারলে প্রথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি পাবে।
স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়েজিত ‘জনসংখ্যা ও টেকসই উন্নয়ন’ বিষয়ক সিপিডি-৫৬ সম্মেলনে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এবারের সম্মেলনে জনসংখ্যা, শিক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন’ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সম্মেলনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ১০টি গবেষণা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে মলদোভা প্রজাতন্ত্রের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং চেয়ারম্যান জর্জ লিউকা, জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল আমিনা জে মোহাম্মদসহ জাতিসংঘের সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা।
বলা হয়েছে, শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গ ও ভৌগলিক অবস্থানকে বিবেচনায় রেখে সব পরিকল্পনা করলে সেটি বেশি কার্যকর হবে। তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতার জন্য বয়সন্ধিকালে সঠিক জ্ঞানার্জনে পাঠ্যবইয়ের পাঠ্যক্রমে বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে। সমন্বিত যৌন শিক্ষার ফলে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা সঠিক জ্ঞান ধারণ করতে সক্ষম হবে। এতে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে যাবে। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে উৎসাহিত হবে তারা।
জাতিসংঘে মলদোভা প্রজাতন্ত্রের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং চেয়ারম্যান জর্জ লিউকা বলেন, প্রাথমিক থেকে শিশুদের সমন্বিত যৌন বিষয়ক পাঠ্যবইয়ের মধ্যে তুলে ধরতে হবে। এর মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা বয়সন্ধিকালে তাদের শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো বুঝতে পারবে। তাদের মধ্যে সঠিক জ্ঞান না থাকায় বিভিন্ন যৌনবিষয়ক নিষিদ্ধ বই, ওয়েবসাইটসহ নানাভাবে সময় নষ্ট করছে। এর মাধ্যমে তারা এক ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। তাদের মধ্যে সঠিক জ্ঞান দেওয়া সম্ভব হলে সেটি থেকে তারা রক্ষা পারে। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে সামাজিক ও ধর্মীয় কারণের অজুহাতে শিক্ষার্থীদের যৌন শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। কিছু কিছু দেশে পাঠ্যবইয়ে এসব বিষয় থাকলেও শিক্ষকরা তা পড়াতে আগ্রহী হন না। কোনো কোনো শিক্ষক সেটি পড়াতে চাইলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বাধা সৃষ্টি করায় এ বিষয়ে সঠিক শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এ শিক্ষার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা ও সুস্থ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
সম্মেলনের অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বলা হয়, পৃথিবীর অনেক দেশে পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রহণ ও শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির কারণে নারীদের মধ্যে অধিক সন্তান গ্রহণের প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা হিসেবে তুলে ধরা হয়।
‘শিক্ষার্থীদের সমন্বিত যৌন শিক্ষা প্রদান করা হলে তাদের স্বাস্থ্যকর আচরণ বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে ঝরেপড়ার হার অনেক হ্রাস পাবে। সঠিক শিক্ষা না পাওয়ায় বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীরা এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে থাকে। সে কারণে ক্লাসে তাদের উপস্থিতি কমে যায়।
সম্মেলনে আরও বলা হয়েছে, অভিবাসনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ব্যক্তির সনদের সমন্বয় হয় না। এ কারণে তারা নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে কাজের জন্য গেলে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছে না। এটির সমতা করা হলে কর্মক্ষেত্রে তাদের জন্য অবাধ সুযোগ সৃষ্টি হবে। শিক্ষার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনাগুলো বয়স, লিঙ্গ ও ভৌগলিক অবস্থানকে বিবেচনায় রেখে পরিবর্তন গ্রহণ করতে হবে। এ পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সার্ক-বাংলাদেশ এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষার নানাবিধ পরিবর্তন দেখানো হলেও মান উন্নয়ন হচ্ছে না। এজন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক শিক্ষা ও কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। একজন শিক্ষার্থী কেন কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হবে তার জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রচারণা চালাতে হবে। সেটি হচ্ছে না বলে সরকারের অনেক চেষ্টার পরও শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, যুব সমাজকে কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করা সম্ভব না হলে সরকারের ২০৪০ সালের মধ্যে জনমিতি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। দেশের টেকসই উন্নয়ন ও স্কিল বাড়াতে কারিগরি শিক্ষা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সুস্থতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য ক্লাসে সমন্বিত যৌন শিক্ষা দেওয়া জরুরি।
জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানের শুরুতে তাদের নিজ নিজ দেশের জনসংখ্যা, শিক্ষার উন্নয়ন ও পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তবে সমন্বিত যৌনশিক্ষা বাস্তবায়নে নাইজেরিয়াসহ তিনটি দেশ এটি বাস্তবায়নে দ্বিমত পোষণ করে। আগামীকাল সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশন আয়োজন হবে।
এমএইচএম/এমএইচআর/জিকেএস