প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
এক কর্মস্থলে ৩ বছরের বেশি নয়, অনিয়মকারীদের বদলি প্রথম ধাপে
এক কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি থাকতে পারবেন না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন অধিদপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তারা। যারা এরই মধ্যে দুই থেকে তিন বছর অতিক্রম করেছেন তাদের বদলির তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। বদলি হবে ধাপে ধাপে। মন্ত্রণালয়ের চলতি মাসের সমন্বয় সভায় এ তালিকা উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তাদের বদলি হবে প্রথম ধাপে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বদলি প্রক্রিয়ার বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, যে সব কর্মকর্তার তিন বছর অতিক্রম হয়েছে তাদের বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি গত সমন্বয় সভায় নতুন করে আলোচনা করা হয়। এ বিষয়ে সব প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের তালিকা দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন>> বদলে যাচ্ছে প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া, নতুন বিজ্ঞপ্তি মার্চে
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, উপ-আনুষ্ঠানিক ব্যুরোসহ প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন শাখা-উপশাখায় বড় ধরনের তদবিরের মাধ্যমে বদলি হয়েছেন কর্মকর্তারা। ঢাকার এসব প্রতিষ্ঠানে বদলি হয়ে যুগের পর যুগ শিকড় আকঁড়ে ধরে পড়ে থাকছেন। একই স্থানে দীর্ঘদিন ধরে থাকায় এসব কর্মকর্তা জড়াচ্ছেন অনিয়ম-দুর্নীতিতে। কেউ কেউ সিন্ডিকেট তৈরি করে পাহাড়সম অর্থ উপার্জন করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। প্রাথমিকের মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে এসব কর্মকর্তার বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ধাপে ধাপে তাদের বদলির নির্দেশনা জারি করা হবে।
আরও পড়ুন>> প্রাথমিকে এক শিফটে পাঠদানে ভাগাভাগি হবে শিক্ষার্থী
ডিপিইর আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় সংক্রান্ত কাজ করে প্রকিউরমেন্ট বিভাগ। এ বিভাগে সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সোহাগ মিয়া ২০০৬ সালের মে মাস থেকে একই চেয়ারে রয়েছেন। এ বিভাগের আরেক সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবু ইয়াছিন ২০০৮ সাল, একই পদে বিপ্লব বিশ্বাস আছেন ২০০৯ সাল থেকে। এই তিনজনের বিরুদ্ধেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
১৯৯৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দপ্তরে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. মোস্তফা ফারুক খান, অর্থ উন্নয়ন বিভাগের সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের উপ-পরিচালক ড. নুরুল আমীন চৌধুরী, পলিসি ও অপারেশনের উপ-পরিচালক মো. মহিউদ্দিন তালুকদার, প্রশাসন বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. জুলফিকার হারুন, একই পদে আব্দুল আলীম, অর্থ বিভাগে মো. নুরুল ইসলাম, অর্থ বিভাগে (অডিট) সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন, শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাম্মদ রোখসানা হায়দার, রুমানা সাবির, জান্নাতুল ফেরদৌস (সংযুক্ত), মো. মোশারফ হোসেন (সাময়িক বরখাস্ত) ও শাহ মো. মামুন অর রশীদ, মহাপরিচালকের পিএস হাবীবুর রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী মো. হুমায়ন দীর্ঘদিন ধরে থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের বদলি হয় না।
আরও পড়ুন>> প্রাথমিকে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে ২০-৩০ শতাংশ
সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভায় একই স্থানে দীর্ঘদিন ধরে থাকা কর্মকর্তাদের নিয়মিত বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভা সূত্রে জানা যায়, অধিদপ্তর/সংস্থায় কর্মরত উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালকসহ সব প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের তিন বছরের অধিককাল বিবেচনায় বদলি/দপ্তর পরিবর্তন করা হবে। চলতি মাসের সমন্বয় সভায় তিন বছর অতিক্রম হওয়া প্রাথমিকের সব দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তাদের তালিকা উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। বর্তমানে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা সেসব কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করছেন।
আরও পড়ুন>> ছুটি নিয়ে উধাও প্রাথমিকের ৪৫১ শিক্ষক, অনুপস্থিত ৩ মাস-৭ বছর
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি এটি নতুন কিছু নয়। চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাদের নিয়মিত বদলি করা হয়। কোথাও কোথাও সেটি নানা কারণে মানা হচ্ছে না। আমাদের এখানে যে সব কর্মকর্তার তিন বছর অতিক্রম হয়েছে তাদের বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি গত সমন্বয় সভায় নতুন করে আলোচনা করা হয়। এ বিষয়ে সব প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের তালিকা দিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে যারা দীর্ঘদিন ধরে একই দপ্তর বা শাখায় রয়েছে তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চাকরিবিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা বদলি একটি রুটিন কাজ। সেটি আগেও হয়েছে, আগামীতেও হবে।
এমএইচএম/এএসএ/এএসএম