ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আশা-স্ট্যামফোর্ডে ভর্তির তোড়জোড়
স্থায়ী ক্যাম্পাস ইস্যুতে চার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)। তবে সে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সামার সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তির সময় নির্ধারণ করেছে আশা ও স্ট্যামফোর্ড ইউনির্ভাসিটি। ভর্তির জন্য যারা খোঁজ-খবর নিতে যাচ্ছেন তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করে রেখে দেওয়া হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য।
একই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ভিক্টোরিয়া ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। আগে থেকে ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস-পাঠদান প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে আশা ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির কিছুটা অগ্রগতি থাকলেও ভিক্টোরিয়া ও প্রাইম এশিয়া দৃশ্যমান কোনো কাজ শুরু করতে পারেনি।
আরও পড়ুন>> স্ট্যামফোর্ড-আশাসহ ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত
রাজধানীর শ্যামলীতে আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার একটি রুমে ভর্তি সংক্রান্ত কাজ করা হচ্ছে। সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন সাদিয়া নামে একজন অ্যাডমিশন অফিসার। ছাত্র পরিচয়ে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে তিনি জানান, আগামী এপ্রিল থেকে সামার সেমিস্টার শুরু হবে। কোন কোর্সে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সেটিও জানতে চান তিনি। এমবিএ এক্সিকিউটিভ কোর্সে ভর্তি হতে আগ্রহী জানানো হলে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে একটি লিফলেট ও ফি সংক্রান্ত তালিকা ধরিয়ে দেন।
ইউজিসির নির্দেশনা মোতাবেক ভর্তি বন্ধ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করলে সাদিয়া বলেন, এ নির্দেশনা আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে উঠে যাবে। ঢাকার আশুলিয়ায় আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। সে কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা বাতিল হচ্ছে। এ বিষয়ে স্যাররা কাজ শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন>> ২৩ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে কঠোর নির্দেশনা
জানতে চাইলে আশা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইকবাল খান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ইউজিসির নির্দেশনা জারির জন্য গত জানুয়ারি মাস থেকে ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। যদি কেউ ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দেয় খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আশুলিয়ায় এক একর জমির ওপর আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে ইউজিসিকে জানিয়ে ভর্তি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করতে আবেদন করেছি। আশা করি আগামী এপ্রিল থেকে আমরা সামার সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবো। সে কারণে যারা ভর্তির তথ্য জানতে আসছে তাদের নাম ও যোগাযোগ নম্বর রাখতে ভর্তি শাখায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একই পরিস্থিতি সিদ্ধেশ্বরীর স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির। ভর্তি শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ছয়জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে আগামী জুন থেকে সামার সেমিস্টার শুরু হবে বলে জানানো হয়।
আরও পড়ুন>> ওস্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে অনীহা ৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
অফিসকক্ষে দায়িত্বরত মো. ওয়াহেদুজ্জামান জানান, সামার সেমিস্টার জুন মাস থেকে শুরু হবে। ভর্তি শুরু করা হবে মার্চ থেকে।
পরে এমবিএ কোর্সে ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে একটি রেজিস্টার খাতায় নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে দিতে বলেন। মার্চে ভর্তির জন্য যোগাযোগ করা হবে বলেও জানান তিনি।
স্ট্যামফোর্ডের রেজিস্ট্রার আব্দুল মতিন জাগো নিউজকে বলেন, আপাতত নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। যারা আসছে তাদের এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানিয়ে কিছু তথ্য লিখে রাখা হচ্ছে। এটি ভর্তি প্রক্রিয়ার একটি অংশ বলা যেতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে জানুয়ারি থেকে জুন ও জুলাই থেকে ডিসেম্বর- বছরে দুটি সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। যেহেতু ডেমরায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে, আশা করি আগামী জুনে সামার সেমিস্টার থেকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।
এদিকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকায় ভিক্টোরিয়া ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। ভর্তি বন্ধ থাকায় কমে গেছে তাদের আয়। ভালো মানের স্থায়ী-অস্থায়ী শিক্ষকরা চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। শিক্ষক সংকটের কারণে পুরোনো শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস নেওয়া হচ্ছে না। কোনো কোনো শিক্ষক অনলাইনে দায়সারা ক্লাস নিচ্ছেন। এসব কারণে অনেক শিক্ষার্থী অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চিন্তা-ভাবনা করছেন।
ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির বিবিএর ছাত্র সিহাব হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর নামেমাত্র অনলাইনে ক্লাস নিয়ে সিলেবাস শেষ করা হয়েছে। সেখানে অর্ধেক শিক্ষার্থী উপস্থিত হতে না পারলেও সবাইকে পরবর্তী সেমিস্টারে তোলা হয়েছে। দুই মাস ধরে আমাদের স্বশরীরে ক্লাস বন্ধ। শিক্ষকদের চাপ দিলে মাঝে মধ্যে অনলাইনে দায়সারা ক্লাস নিচ্ছেন। ভালো স্যাররা আর আসছেন না। তারা চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
পান্থপথের একটি পাঁচতলা ভবনে ভিক্টোরিয়া ইউনির্ভাসিটির ক্যাম্পাস। পার্শ্ববর্তী আরও দুটি ভাড়া ভবনে শাখা ক্যাম্পাস থাকলেও সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নিচতলায় বসা আতিকুর রহমান নামে একজন স্টাফ জানান, ইউজিসি থেকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়ায় এখানে অনেক শিক্ষক-কর্মচারীকে না করে দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লায় একটি এলাকায় জমি কেনা হচ্ছে। যদি সেখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করা হয় তবে আবার আগের মতো জমে উঠবে।
ভিক্টোরিয়ার সহকারী রেজিস্ট্রার ফয়জুল আবেদিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী কমে গেছে। নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকায় ইউজিসি থেকে ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া ও করোনার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বর্তমানে শতাধিক শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষক রয়েছেন। এসব শিক্ষক দিয়ে কোনো রকমে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য ক্যাম্পাসে ক্লাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস না হওয়া পর্যন্ত এমন পরিস্থিতির পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।
একই অবস্থা প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির। ভর্তি বন্ধ থাকায় কোনো রকম চালানো হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
ইউজিসি থেকে জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের পর ১২ বছর সময় পার হওয়ায় সাময়িক সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে পুরোপুরি কার্যক্রম চালাতে ব্যর্থ হওয়া চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ ও ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে তিন থেকে ছয় মাস সময় দেয় ইউজিসি।
ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ জাগো নিউজকে বলেন, আইন অনুযায়ী ১২ বছর পূর্ণ হওয়ার পর বারবার সতর্ক করেও যারা স্থায়ী ক্যাম্পাসের দৃশ্যমান কাজ করেনি এমন চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ছাড়া তারা কোনো ধরনের ভর্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম চালাতে পারবে না। যদি কেউ এ ধরনের কাজ করে তবে তা নিজ দায়িত্বে করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে সক্ষম বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনে প্রমাণসহ দাখিল করলে তাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিবেচনা করা হবে। এর আগে কেউ শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থী ভর্তি করার প্রমাণ মিললে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএইচএম/এএসএ/এএসএম