‘কাগজ সংকটে অনিশ্চিত জানুয়ারির বই উৎসব’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০৭ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২২
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা

বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক ছাপাতে যে পরিমাণে কাগজ প্রয়োজন তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। তাদের দাবি, কাগজমিল মালিকরাও এই সুযোগ নিয়ে কয়েকগুণ দাম বৃদ্ধি করেছেন। এ অবস্থায় বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত কাগজ না আনলে জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে সমিতির ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এ অভিযোগ করা হয়।

সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি কায়সার-ই-আলম, শ্যামল পাল, মির্জা আলী আশরাফ কাশেম, ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান, মাজহারুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বইয়ের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন তারা শিক্ষা পরিবারের সদস্য। প্রধানমন্ত্রী নিজেও একজন সুলেখক, সম্পাদক ও পাঠক। তার সময়ে প্রকাশনা শিল্প খারাপ অবস্থায় থাকবে সেটি হতে পারে না। বিশ্ব একটি কষ্টকর সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। তারপরও মুদ্রণ শিল্পের যা যা সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, পহেলা জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। কাগজের সংকট নিয়ে মিল মালিকদের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। তারা আমাকে কথা দিয়েছেন কাগজ সংকট হবে না। বই আমাদের লাগবে পহেলা জানুয়ারিতে, এতে কোনো ছাড় নেই। মিল মালিকরা যদি তাদের ওয়াদা ভঙ্গ করেন তবে তাদের বিরুদ্ধে আমরাও ব্যবস্থা নেবো। বিদেশ থেকে আমদানির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতিও দেন শিক্ষামন্ত্রী।

এসময় প্রকাশনা শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভাবনা তুলে ধরেন শ্যামল পাল। বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির পরিচালক এবং ৬৪ জেলা ও উপজেলাগুলোর পুস্তক ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, দুঃখের কথা বলার জন্য আমরা কারো কাছে যেতে পারি না। আমাদের কিছু পুস্তক প্রকাশনী আছে, যারা ডোনেশনের মাধ্যমে এই শিল্পকে ধ্বংস করতে চায়। আমরা আপনাদের সহায়তায় এসব প্রকাশনীকে কালো তালিকাভুক্ত করতে চাই।

সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, কাগজ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আগামী বছরের জন্য বিনামূল্যে বই ছাপাতে যে পরিমাণে কাগজ প্রয়োজন তার ৫০ শতাংশ কাগজ শুল্কমুক্ত আমদানি না করলে ১ জানুয়ারি বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।

‘কাগজ সংকটে অনিশ্চিত জানুয়ারির বই উৎসব’

সহ-সভাপতি মাজাহারুল ইসলাম বলেন, এখনো স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় চাইনিজ মেলামাইনের প্লেট উপহার দেওয়া হয়। অথচ আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, এসব প্রতিযোগিতায় বই উপহার দেওয়া হোক।

বাপুসের উপদেষ্টা ওসমান গণি বলেন, সমিতির ২৬ হাজার সদস্য শুধু পুস্তক ব্যবসায়ী নন, তারা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করেন। এনসিটিবি কখনই বই ছাপানোর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে সঠিক কথা বলে না। এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তারা কোনো প্রণোদনা পাননি, কোনো সহযোগিতা পাননি। করোনায় তারা অনেক কষ্ট করেছেন। আমরা সরকারের পক্ষের শক্তি। প্রতিটি স্কুলে পাঠাগার যেন সচল থাকে- সেই আহ্বানও জানান তিনি।

পুস্তক বাধাই কমিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম মল্লিক বলেন, কারোনা মহামারিতে এই শিল্প অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।

এর আগে আয়োজক সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মহানগর নাট্যমঞ্চ চত্বরে বইমেলার উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বার্ষিক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতৃবৃন্দ, পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতির জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, লেখক, বিক্রেতা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচএম/ইএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।