বরখাস্তের ক্ষমতা শিক্ষা কর্মকর্তাদের দেয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বরখাস্তের ক্ষমতা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের দেয়ায় ক্ষুব্ধ সারা দেশের শিক্ষকরা। এর ফলে একদিকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতি বেড়ে যাবে। অপরদিকে শিক্ষকরা কর্মকর্তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে- এমনই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের অভিযোগ, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কাছেই জিম্মি শিক্ষকরা। সামান্য কাজের জন্য অফিসে গেলে পিয়নের দমক খেতে হয় শিক্ষকদের। টাকা ছাড়া তারা কথা বলে না। অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মন মতো না চললেই দুর্গম এলাকায় বদলির খড়গ নেমে আসে শিক্ষকদের ওপর। এ অবস্থায় শিক্ষকদের বরখাস্তের ক্ষমতা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেয়ায় তারা বেশ শঙ্কিত। এই ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করবে কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহিনুর আল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের নিয়োগকারী কর্মকর্তা হলো জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর বলছে, যিনি নিয়োগকারী কর্মকর্তা তিনি বরখাস্ত করতে পারবে এ কথা বলে সহকারী শিক্ষকদের বরখাস্ত করার ক্ষমতা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে। এতে করে শিক্ষকরা হয়রানির শিকার হবে।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষকরা নির্ভয়ে পাঠদান করতে চাই। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এমন দায়িত্ব দেয়ায় শিক্ষকদের চাকরি হারানো ভয় আরো বেড়ে গেল। নিঃসন্দেহে হয়রানির শিকার হবে শিক্ষকরা। তবে আমাদের দেশের কর্মকর্তাদের যদি মানসিকতার পরিবর্তন হয় সেক্ষেত্রে হয়রানি হবে না বরং কাজগুলো বিকেন্দ্রীকরণ হলো। কিন্তু আমাদের দেশে সে মানুষিক অবস্থা তৈরি হয়নি কাউকে কারণে অকারণে হয়রনি করবো না। যেহেতু সেই অবস্থা এখনও পৌঁছাইতে পারি নাই সুতরাং এই অবস্থায় শিক্ষকরা হয়রানির শিকার হবেন বলে তিনি মনে করেন।
গত ৩১ জানুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (বিদ্যা-১) দেবেশ চন্দ্র সরকার স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগকারী কর্মকর্তা। সুতরাং সহকারী শিক্ষকদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারী ও প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনা ও প্রাশাসনিক অনুমতির প্রয়োজন নেই। তবে বিএসআর পার্ট-১ এর ৭০-৭৩ বিধি নিবিড়ভাবে অনুসরণপূর্বক যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে শিক্ষকদের বরখাস্ত করার জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কাছে সুুপারিশ করতো এবং অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্যবস্থা নিতেন।
গত ২ ফেব্রুয়ারি ‘সহকারী শিক্ষকদের বরখাস্তের ক্ষমতা পেল শিক্ষা কর্মকর্তা’ এই শিরোনামে জাগো নিউজের সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি জানতে পারেন সারাদেশের শিক্ষকরা। ৬ হাজারের বেশি শিক্ষক নিউজটি তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারে শেয়ার করেন। লিঙ্কে এক শিক্ষক কমেন্ট করেন, এর মাধ্যমে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের ঘুষ খাওয়ার আরেকটি সুযোগ করে দেয়া হল। অপর এক শিক্ষক লিখেছেন, শিক্ষকরা অপরাধ করলেও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করতে পারবেন।
এনএম/জেএইচ/আরআইপি