ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের মেয়াদ না কমিয়ে সমৃদ্ধ করার দাবি
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের মেয়াদ না কমিয়ে, এটাকে আরও সমৃদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনটির দাবি, ৪ বছরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের মেয়াদ কমিয়ে ৩ বছর করা হলে এ শিক্ষার প্রতি মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের যোগ্যতা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। সেই সঙ্গে উচ্চশিক্ষা বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবে।
‘৪ বছরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের মেয়াদ ৩ বছর করার চিন্তা করা হচ্ছে’ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সদস্যসচিব মির্জা এটিএম গোলাম মোস্তফা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য শুধু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেনি। বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে চরমভাবে অপমান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় যখন সরকার ব্যস্ত ঠিক সেই সময়ে মন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য সরকারের জন্য শুভ বার্তা বয়ে আনবে না। আমরা মনে করি, সরকারকে বিপদে ফেলার অপকৌশল থেকেই একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল অত্যন্ত সুকৌশলে শিক্ষামন্ত্রীকে দিয়ে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য প্রদানে উৎসাহ দিচ্ছে। যা সরকার ও পলিটেকনিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য শুভ হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, শুধু ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা ব্যবস্থা নয়, নানা মহল থেকে সামগ্রিক শিক্ষার মান নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই ব্যর্থতার দায় ঢাকতেই অত্যন্ত সুকৌশলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার মেয়াদ হ্রাসের ইস্যু জাতির সামনে এনেছেন।
এ সময় ৪ বছরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের মেয়াদ ৩ বছর করা হলে কী ধরনের সমস্যা হবে তার কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন এটিএম গোলাম মোস্তফা। এর মধ্যে রয়েছে-
>> এ শিক্ষার (ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং) প্রতি মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
>> জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কর্মক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা অবমূল্যায়িত হবেন। আধুনিক প্রযুক্তির ঘাটতি, কমিউনিকেশন স্কিলসহ নানা বিষয়ে ঘাটতি থাকার কারণে ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে উত্তীর্ণ প্রকৌশলরা মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবমূল্যায়িত হওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ হ্রাস পাবে।
>> কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে।
>> ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের যোগ্যতা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।
>> ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের সঙ্গে এডুকেশনে পার্থক্য ২ বছর হওয়ায় চাকরির একধাপ নিচে বেতন ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে, মর্যাদা হারাবে।
>> আন্তর্জাতিক জব মার্কেটে পূর্বের ন্যায় বেতন ও মর্যাদা হারাবেন, তাদে দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
>> উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্র বাধাগ্রস্ত হবে।
>> দেশের আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প কারখানায় নিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে এসব শিল্প কারখানায় বিদেশি জনবল নিয়োগে উদ্যোক্তাদের মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আইডিইবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান বলেন, এখন প্রতিবছর বিদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের ৬ বিলিয়ন ডলার দিতে হচ্ছে। ৪ বছরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের মেয়াদ কমিয়ে ৩ বছর করা হলে সামনে বিদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য ব্যয় আর বেড়ে যাবে। তাই কোর্স না কমিয়ে মডার্ন টেকনোলজি দিয়ে এটাকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. ফজলুর রহমান খান, আইডিবি’র জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, প্রাইভেট সেক্টর ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. নাজিমুদ্দিন পাটোয়ারী, বাকাছাপ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. মেহেদি হাসান, মো. সাইফুল আলম মোল্লা প্রমুখ।
এর আগে, গত ১৩ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, যে পড়া তিন বছরে পড়ানো সম্ভব তা টেনে চার বছরে নিয়ে বাবা-মায়ের বাড়তি খরচ হয়। বিশ্বের অনেক জায়গায় যেখানে শিক্ষাব্যবস্থা অনেক উন্নত সেখানে অনার্স কোর্সও আছে তিন বছরের। সারাবিশ্বে কারিগরি শিক্ষায় যে মান অর্জিত হয়, আমরা আমাদের কারিগরি শিক্ষায় সে মান নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। যে মান নিয়ে আসার পাশাপাশি এ খাতকে আরও প্রশস্ত করা দরকার। তাই আমরা মনে করি ডিপ্লোমা কোর্স তিন বছর হওয়া উচিত।
এমএএস/আরএডি/জেআইএম