প্রথম টেস্ট জয়ের ১১ বছর
এক একটি ঘটনা এক একটা ইতিহাসের জন্ম দেয়। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফির ফাইনাল যে ক্রিকেট জাগরণ তৈরি করেছিল, তাতে পূর্ণতা পাওয়া বাকি ছিল বেশ কিছুদিন। কারণ, ওই জাগরণের পর ক্রিকেটের কুলীন শ্রেণি টেস্ট পরিবারের সদস্য হওয়ার পর যে জয়টারই দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না। বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে চারদিকে হাস্যরসের সৃষ্টিও করেছিল কেউ কেউ। বিশেষ করে মোড়লরা তো বাংলাদেশের টেস্ট খেলা নিয়েই নাক সিটকাচ্ছিল প্রকাশ্যে।
অবশেষে সেই কাঙ্খিত মুহূর্তটি এসে গেলো বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ৫ বছর পর এসে প্রথম জয়ের স্বাদ পেলো বাংলাদেশ। ২০০৫ সালের ১০ জানুয়ারি। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম। জিম্বাবুয়েকে ২২৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে টেস্ট ইতিহাসে প্রথম জয়ের দেখা পেয়ে যায় হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। স্পিনার এনামুল হক জুনিয়রের ঘূর্ণি বিষে নীল হয়ে বাংলাদেশের কাছে প্রথম টেস্ট হারের লজ্জায় ডোবে তাতেন্দা টাইবুর জিম্বাবুয়ে।
আজ থেকে ঠিক এগার বছর আগে ওই ঐতিহাসিক মুহূর্তটির জন্ম দিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। চট্টগ্রামের লাকি ভেন্যুতে হাবিবুল বাশারের ৯৪ রানের ওপর ভর করে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ছুড়ে দিয়েছিল ৪৮৮ রানের বিশাল চ্যালেঞ্জ। জবাবে প্রথম ইনিংসে ৩১২ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। মাশরাফি বিন মর্তুজার তোপ আর মোহাম্মদ রফিকের ঘূর্ণিতে দিশেহারা জিম্বাবুয়ে। মাশরাফি নেন ৩ উইকেট। রফিক নেন ৫ উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসে গিয়ে ৯ উইকেটে ২০৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। এই ইনিংসেও হাফ সেঞ্চুরি আসে অধিনায়কের ব্যাট থেকে। জয়ের জন্য ৩৮১ রানের লক্ষ্য পায় জিম্বাবুয়ে; কিন্তু এনামুল হক জুনিয়রের ঘূর্ণি বিষে নীল হয়ে ১৫৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ফলে ২২৬ রানেই হেরে যেতে হলো জিম্বাবুয়েকে।
সেই জয়ের অনুভূতি বর্ণনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের একটি দৈনিককে তখনকার গর্বিত অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘এই অনুভূতিটা অসাধারণ। আমি টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম, আমার ক্যারিয়ারের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন এটি। খেলা ছেড়েছি এত বছর, কিন্তু এখনো কেউ যখন সেই অর্জনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়, তখন মনে হয় আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার সত্যিই সার্থক।’
একটি টেস্ট জয় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল উল্লেখ করে হাবিবুল বাশার বলেন, ‘টেস্ট জয়টা খুব জরুরি ছিল। সবাই আমাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলছিল। সমালোচনার অন্ত ছিল না। সে সময় টেস্ট ম্যাচটা জিতে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই জয় আমাদের ক্রিকেটকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে বলে মনে করি আমি। আজকে আমরা অনেক সাফল্য পাই। ক্রিকেট বিশ্বে আমরা এখন প্রতিষ্ঠিত শক্তি। প্রথম টেস্ট জয়টা আমাদের এত দূর আসার অনুপ্রেরণা হয়েই আছে।’
আইএইচএস/বিএ