৫ ওভারের ব্যবধানে দু’বার দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড
অতৃপ্ত বাসনাটা কি তবে এবার পূরণ করেই ছাড়বে নিউজিল্যান্ড! যে মিশন নিয়ে তারা শুরু করেছে, তার পূর্ণতা পেতে পারতো গত বছর মার্চে, মেলবোর্নের ঐতিহাসিক ক্রিকেট গ্রাউন্ডে; কিন্তু স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার একাধিপত্যে সেটা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বিশ্বকাপের শিরোপাটা অধরাই থেকে গেলো ব্ল্যাক ক্যাপসদের কাছে।
হঠাৎ গত বিশ্বকাপের প্রসঙ্গটা টেনে আনার একটাই কারণ, নিউজিল্যান্ড কিন্তু অভিযাত্রা থামিয়ে দেয়নি। কী টেস্ট, কী ওয়ানডে আর কী টি-টোয়েন্টি- সব জায়গাতেই কিন্তু আকাশে উড়ছে যেন তারা। যদিও নিজেদের মাটিতে খেলছে তারা। তবুও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কিংবা কেনে উইলিয়ামসনদের কৃতিত্বকে মোটেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
টি-টোয়েন্টিতে অবশ্যই শ্রীলংকা সমীহ জাগানোর মত একটি দল। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নও তারা। সেই দলটিকে যেভাবে নাকানি-চুবানি খাইয়েছে আজ অকল্যান্ডে, তাতে করে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটের বিশ্বকাপ শিরোপাটা আগাম কিউইদের নামে লিখে নিতে পারেন আপনি। যদিও গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। শেষ বল না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা সম্ভব নয়। তবুও, নিউজিল্যান্ড যে পারফরম্যান্স করে যাচ্ছে তাতে তাদেরকে সবচেয়ে ফেভারিট ভাবতে তো কোন দোষ নেই!
অকল্যান্ডের ইডেন পার্ক বিশ্বের ছোট আকারের স্টেডিয়ামগুলোর একটি। তাই বলে তো একদিনে দুটি রেকর্ড হওয়া অকল্পনীয় ব্যাপার। রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য। তাই বলে একটি রেকর্ড গড়ার ৫ ওভারের মাথায় সেই রেকর্ডটিই ভেঙে খান খান হয়ে যাবে! একই ম্যাচে একই ইনিংসে একটি রেকর্ড দু’বার গড়ার বিরল দৃশ্য দেখলো ইডেন পার্কের গ্যালারিতে উপস্থিত ১৭ হাজার দর্শক।
শ্রীলংকার করা ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রানের জবাবে স্বাগতিক হিসেবে কিংবা ফর্মে থাকার কারণে নিউজিল্যান্ডই হয়তো জেতার কথা; কিন্তু জয়টা যে এতটা আগ্রামীভঙিতে আসবে, তা খোদ কিউই অধিনায়ক কেনে উইলিয়ামসনও ভাবতে পারেননি।
১৪৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই মার্টিন গাপটিলের টর্নেডো গতির ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকরা। নিউজিল্যান্ডের হয়ে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও গড়ে ফেললেন তিনি। ১৯ বলে পূরণ করলেন অর্ধশতক। চারটি বাউন্ডারি আর ৩টি ছক্কায় রেকর্ডের মাইলফলক স্পর্শ করেন গাপটিল। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে না হলেও, দেশের হয়ে যে এটাই টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড কিউইদের!
২০১০ সালেই নিউজিল্যান্ডের হয়ে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরিটি করেছিলেন গাপটিল নিজেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩ বলে গড়েছিলেন সেই রেকর্ড। তার আগে ২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২৩ বলে ফিফটি করেছিলেন অ্যারন রেডমন্ডও। এতদিন ‘যৌথভাবে’ দ্রুততম ফিফার রেকর্ডটা ভাগাভাগি করে নিচ্ছিলেন গাপটিল আর রেডমন্ড। আজ (রোববার) শ্রীলংকার বিপক্ষে যখন ১৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে রেকর্ডটা গড়লেন, তখন নিশ্চিত তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছিলেন গাপটিল। যাক! এবার আর যৌথভাবে নয়, একা একাই রেকর্ডের মালিক!
কিন্তু, কী আশ্চর্য, মাত্র ২০ মিনিট টিকলো গাপটিলের ১৯ বলে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডটি। ২০ এবং ৫ ওভার পরই সেই রেকর্ড ভেঙে খান খান হয়ে গেলো। ডাগআউটে বসে অসহায়ের মত চেয়ে দেখলেন, তারই সতীর্থ কলিন মুনরো মাত্র ১৪ বলেই গড়ে ফেললেন ফিফটি। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে তো দ্রুততমই, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যে এটা দ্বিতীয় দ্রুততমের রেকর্ড গড়লো!
১৪ বলের মধ্যে ৭টি ছক্কা মারলেন মুনরো। সঙ্গে একটি মাত্র বাউন্ডারি। ১৪ বলে ৫০ রানে থাকলেন অপরাজিত। এর মধ্যে ৪৬ রানই আসলো চার আর ছক্কা থেকে। বাকি চার রান ‘কষ্ট’ করে দৌড়ে নিলেন মুনরো। ইনিংসের শেষ দুই বলে পরপর দুটি চার এবং ছক্কা মেরে দলকে জেতানইনি শুধু, রেকর্ডও গড়ে ফেলেন মুনরো। রেকর্ডটা আসলো চিমারাকে ছক্কা মেরেই।
একই ম্যাচে ২০ বলেরও কম খেলে দুটি হাফ সেঞ্চুরির ঘটনাও এই প্রথম। এর আগে আর কোন ম্যাচেই এত কম বল খেলে দুটি হাফ সেঞ্চুরি দেখেনি কেউ। তবে, ২০০৯-১০ সালে প্রায় কাছাকাছি গিয়েছিল রেকর্ডটা। শ্রীলংকা আর ভারতের মধ্যকার একটি ম্যাচে কুমার সাঙ্গাকারা এবং গৌতম গম্ভীর যথাক্রমে ২১ এবং ১৯ বলে ফিফটির রেকর্ড গড়েছিলেন।
রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়ার এই খেলায় নিউজিল্যান্ড জিতে গেলো মাত্র ১০ ওভারে, ৯ উইকেট হারিয়ে। ১২০ রানেরও বেশি তাড়া করে এত দ্রুততম ব্যবধানে জয় পাওয়ারও এটা রেকর্ড। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩২ রান তাড়া করে জিতেছিল ১১.৩ ওভারে। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। এবার ১৪২ তাড়া করতে গিয়ে ১৪৭ রান করে ফেললো নিউজিল্যান্ড, মাত্র ১০ ওভারে। পুরো ১০ ওভার হাতে রেখেই।
আইএইচএস/আরআইপি