স্কুল খুলছে কাল: কোথাও সর্বোচ্চ প্রস্তুতি, কোথাও উদাসীনতা

মুরাদ হুসাইন
মুরাদ হুসাইন মুরাদ হুসাইন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:০৮ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

 

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজ। এ সময় শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়ালি ‘ক্লাসে’ অংশ নিয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে বা নিতে হয়তো মাঝে মাঝে স্কুলেও গিয়েছে। তবে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে তাদের যাওয়া হয়ে ওঠেনি। অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। আর মাত্র একটি দিনের অপেক্ষা। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই স্কুল-কলেজে বাজবে ঘণ্টা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হবে প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ফিরবে প্রাণচাঞ্চল্য।

সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত জানানোর পর ঢাকাসহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রস্তুতি শুরু হয়। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শুরু হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। নেয়া হতে থাকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। অবশ্য বেশিরভাগ স্কুল-কলেজকে এক্ষেত্রে বেশ তৎপর দেখা গেলেও কোথাও কোথাও ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে।

jagonews24

ঢাকার মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬০ ফিট রোডের বালক শাখার ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তোলা হয়েছে। স্কুলের গেটে জীবাণুনাশক টানেল বসানো হয়েছে। ক্লাসরুম, শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ, শৌচাগার, খেলার মাঠসহ সব জায়গার ময়লা-আর্বজনা সরানো হয়েছে।

এ প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক আরজুন কুমার পাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সবকিছু বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ক্লাসে তিন ফুট দূরত্ব রেখে ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থীকে বসানো হবে। ছয় ফুটের বেঞ্চে দুজন করে বসানো হবে। সরকারি নিয়ম মোতাবেক প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দুটি বিষয়ে ক্লাস নেওয়া হবে।’

jagonews24

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রভাতী শিফট সকাল ৮টায় শুরু হয়ে সাড়ে ১১টায় শেষ হবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় দিবা শিফট শুরু হয়ে সাড়ে ৪টায় শেষ হবে। আমাদের ১২০ জন শিক্ষক, ২৫ জন কর্মচারী। তাদের মধ্যে চারজন বাদে সবাই টিকার দুটি করে ডোজ নিয়েছেন।’

দারুস সালাম সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহ থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। বর্তমানে পাঠদান শুরুর জন্য উপযোগী করে তোলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কেনা হয়েছে সুরক্ষা সামগ্রী।

jagonews24

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইউসুফ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিয়মিত বিদ্যালয়ের ভেতর ও বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হচ্ছে। করোনা ও ডেঙ্গু থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। বিদ্যালয়ের ২৪ জন শিক্ষক করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন। সাতজন কর্মচারীর মধ্যে পাঁচজন ভ্যাকসিন নিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ৭৮৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে স্কুলে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিদিন ৯টা থেকে ক্লাস শুরু করা হবে। ক্লাস শুরুর আধঘণ্টা আগে থেকে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়া হবে।’

তবে মাজার রোডের এফ এম ইন্ট্যারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ঢিলেঢালাভাবে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। এখানে শুধু পানি ব্যবহার করতে দেখা গেছে পরিচ্ছন্নতায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে জমে আছে আবর্জনা। অবশ্য পাঠদান শুরুর আগেই সেগুলো পরিষ্কার করা হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

jagonews24

এ প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখার শিক্ষক মো. জহিরুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্লে-নার্সারি থেকে কলেজ পর্যন্ত আমাদের ৩০০ শিক্ষার্থী। সরকারি কোনো অনুদান না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে সব ব্যয়ই বহন করতে হয়। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী পরিচ্ছন্নতা চলছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ক্লাস শুরু করে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে।’

মিরপুরের গুদারাঘাট কাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে ময়লা-আর্বজনা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বৃষ্টির পানি এসে নিচতলার কয়েকটি ক্লাসরুমেও জমেছে। তবে এসব দ্রুত পরিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসিমা বেগম।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিদ্যালয় পরিষ্কারের কাজ শেষ করা হলেও নিচতলায় গণটিকা কার্যক্রম চলায় কিছু ক্লাসরুমে ময়লা-আর্বজনা পড়ে রয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে তা পরিষ্কার করা হবে।’

দারুস সালামের মীরপুর সিদ্ধান্ত হাই স্কুলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেষ হলেও ক্যাম্পাসের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। তবে ক্লাসরুম ও শৌচাগারগুলো পরিষ্কার করে তোলা হয়েছে।

jagonews24

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম রনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সব ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী কেনা হয়েছে। বিদ্যালয়ের তিনটি গেট দিয়ে তাপমাত্রা মেপে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক প্রভাতী ও দিবা শাখায় ক্লাস রুটিন তৈরি করা হয়েছে। সে মোতাবেক তিন ফুট দূরত্ব রেখে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হবে।’

রাজধানীর বনশ্রীতে মেধা বিদ্যাপীঠের প্রধান ফটকের সামনে জমে থাকতে দেখা গেছে নোংরা পানি। ভেতরের মাঠের চিত্রও একই। ক্লাসরুমগুলোর টিনের চাল ফুটো হয়ে বন্ধ কক্ষের ভেতরেও জমেছে পানি। কিছু বেঞ্চেও পচন ধরেছে। তবে কথা বলার জন্য বিদ্যালয়ে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।

গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। মারণ ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর সংক্রমণ পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে কয়েক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

তবে সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।

এমএইচএম/এমএইচআর/এইচএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।