ঘনকুয়াশা আর তীব্র শীতের কবলে রাজশাহীবাসী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:৫৯ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫

পৌষ মাসের শুরুতে রাজশাহীতে বাড়তে শুরু করেছে শীতের প্রকোপ। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে ঘন কুয়াশা। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমতে শুরু করায় বাড়তে শুরু করেছে শীতের আধিক্য। বুধবার রাত থেকেই কুয়াশার চাদরে মোড়ানো ছিল পুরো রাজশাহী। সারাদিন দেখা মিলেনি সূর্যের। তার সঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এ অঞ্চলের উপর দিয়ে আরো কয়েকদিন বয়ে যেতে পারে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।   

এদিকে, হঠাৎ করেই এই শীত বাড়ায় মহানগরীর বিভিন্ন গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে লক্ষ করা গেছে ক্রেতাদের ভীড়।
মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষরা বেশি ভিড় জমাচ্ছেন দোকানগুলোতে। মহানগরীর কোর্ট স্টেশন, সাহেব বাজার, রেলস্টেশন মার্কেট, হকার্স মার্কেট, লক্ষ্মীপুর বাজারের গরম পোশাকের দোকানগুলো ঘুরে এ ধরনের চিত্র দেখা গেছে।

নগরীর সাহেব বাজার এলাকায় ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে আসা মৌসুমী খাতুন নামের এক স্কুল শিক্ষিকা জানান, গত কদিন থেকে শহরে শীত বাড়তে শুরু করেছে। হঠাৎ করে শীতের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি তার ছেলের জন্য বাজারে গরম কাপড় কিনতে এসেছেন। কারণ শীতে বড়দের থেকে শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি কষ্ট পেয়ে থাকে।

মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার ফুটপাতের একটি গরম পোশাকের দোকানে কাপড় কিনতে আসা আটোচালক সাগর জানান, তিনি অনেক রাত্রি পর্যন্ত রাস্তায় আটো চালান। অনেক আগেই তিনি শীতের পোশাক কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শীতের তীব্রতা না বাড়ায় আর পোশাক কেনা হয়নি। তবে গত কয়েকদিন থেকে শহরে শীত বৃদ্ধি পাওয়ায়, তিনি বাজারে গরম পোশাক কিনতে এসেছেন।

অপরদিকে, নগরীর কোর্ট স্টেশনের ফুটপাতে শীতের কাপড় কিনতে আসা সুলতান নামের এক বৃদ্ধ দিন মজুর জানান, তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। তিনি বাসা থেকে প্রতিদিন কাজের সন্ধানে রাজশাহীতে আসেন। সারাদিন কাজ শেষে রাতে আবার বাসায় ফিরে যান। গত দুই দিন ধরে এ অঞ্চলে শীত বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি কষ্ট পাচ্ছেন। কারণ তার শীতের পোশাক নেই। দুই বেলা দুই মুঠো ভাতের জোগাড় করতে তার সব টাকা শেষ হয়ে যায়। তাই তার শীতের পোশাক কেনা হয়নি। আজ আয় ভালো হওয়ায় তিনি স্বল্পমূল্যের এই গরম পোশাকের দোকানে এসেছেন।  

তবে প্রকৃতিতে শীতের পদার্পণ ঘটে অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতেই। কিন্তু এ বছর অগ্রহায়ণ মাসে তেমন ঠান্ডা লক্ষ্য করা যায়নি। গত রোববার থেকে রাজশাহীতে হঠাৎ করেই শীত বাড়তে শুরু করে। এরপর থেকে যতোই দিন সামনের দিকে যাচ্ছে, তার সঙ্গে ঘনকুয়াশা ও শীতের প্রভাব পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে।  

Kuasha

রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেনের দেয়া তথ্যানুযায়ী, গত বৃহস্পতিবারে ছিল এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তার সঙ্গে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধানও কমতে শুরু করেছে।

গত বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শনিবার (১২ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রোববার (১৩ ডিসেম্বর) থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে।

ওইদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ২, মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৫ ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হলো ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এ সপ্তাহে তাপমাত্রা আরো কমতে পারে বলেও জানান তিনি।

রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, সামনে সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা আরো কমতে পারে। সেই সঙ্গে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এ অঞ্চলে আরো ঠান্ডা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

শাহরিয়ার অনতু/এআরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।