মহাস্থানগড়ে নিরাপত্তা জোরদার : সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:৩৪ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫

বগুড়ার মহাস্থানগড় মাজারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় এ ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিতে সেখানে পুলিশ ক্যাম্পসহ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

মাজারের চার খাদেমকে প্রাণনাশের হুমকির খবর প্রকাশ হলে প্রশাসন এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে সেখানে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মাজারে আগত দর্শনার্থীদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

মহাস্থান মাজার মসজিদের কর্মকর্তারা জানান, চার/পাঁচ দিন আগে মোটরসাইকেলযোগে তিনজন অজ্ঞাত যুবক মাজার শরীফে আসেন। ওই যুবকদের কর্মতৎপরতা পরবর্তী সময়ে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। সেখানে দেখা যায়, আগতদের সকলের বয়স ২৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে একজন প্রায় ৬ ফিট লম্বা এবং গায়ে খয়েরি পাঞ্জাবি ও মুখে দাড়ি ছিল। বাকিরা শার্ট ও প্যান্ট ছিলেন।

স্থানীয় এক দোকানের সামনে ওই যুবকরা মোটরসাইকেল রেখে প্রথমে মাজারের কাছে যায়। এরপর তারা সেখানে কর্মরত চার খাদেমের ব্যাপারে জানতে চায়। এ সময় তাদের আচরণ সন্দেহজনক ছিল। এক পর্যায়ে ওই যুবকরা সিসি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে নিজেদের আড়াল করে চলে যায়। নিচে নেমে মোটরসাইকেল নেয়ার সময় তারা স্থানীয় দোকানদার জয়পুরহাটের রাস্তা কোনো দিকে তা জানতে চায়।

মাজার এলাকায় কর্মরত এক কর্মচারী জানান, অজ্ঞাতনামা ওই তিন যুবক ঘুরে যাবার পরদিন মাজারে কর্মরত খাদেমদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু কারা কি কারণে এই হুমকি দিয়েছে তা জানা যায়নি।

স্থানীয় রায়নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ রিজু জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে অব্যাহতভাবে জঙ্গি হামলা এবং শিবগঞ্জে শিয়া মসজিদের সশস্ত্র হামলার পর আমরা বিষয়টি নিয়ে খুবই চিন্তিত। কারণ প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে তিনজন করে যুবক জড়িত। এখানে মহাস্থানে ঘটনাতেও তিন যুবককে দেখা যাচ্ছে। এ কারণে আমরা এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে অনুরোধ করি পবিত্র স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

Bogra

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, মহাস্থান মাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগে থেকেই তারা সতর্ক বাতা দিয়েছিল। এর মধ্যে এ ধরনের একটি ঘটনা তাদের সেই সতর্ক বাতার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এ কারণে এখন সেখানে ২৪ ঘণ্টা পুলিশি পাহারা দেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন মাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মোট আটটি সিসি ক্যামেরা মাজার ও মসজিদের চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে। একজন কর্মকর্তা সেখানে সার্বক্ষষিক দর্শনার্থীদের চলাচল নজরদারি করছেন।

জানতে চাইলে মাজার মসজিদ কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান বলেন, আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি। এছাড়া পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছে। এখনো কোনো সমস্যা হয়নি।

দেখা গেছে, পুরো মাজার এলাকাকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করে দুইজন করে সশস্ত্র পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই তাদের ডেকে শরীর তল্লাশিসহ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এছাড়া মূল মাজার শরীফ গেছে, দুইজন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সেখানে প্রবেশাধিকারও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

দায়িত্বরত শিবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাশির আহম্মেদ জানান, মাজার শরীফের ১০০ গজের মধ্যেই দুইজন এসআই, দুইজন হাবিলদার ও আটজন কনস্টেবলের সমন্বয়ে একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ পুরো এলাকায় নজরদারি করছে।

মাজার শরীফ সূত্রে জানা যায়, সেখানে রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য বর্তমানে চারজন খাদেম নিযুক্ত রয়েছেন। এরা হলেন, নুরুল ইসলাম, আশরাফুল, আব্দুর রহিম ও ইয়াসিন আলী। তবে নিরাপত্তা ও হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুর রহমান জানান, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ইতোমধ্যেই মাজার এলাকায় সিসি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানোসহ স্থানীয় লোকজনকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরো নিরাপত্তা বাড়ানো হবে।

শিবগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব জানান, সন্দেহভাজন সেই তিন যুবককে পরবর্তী সময়ে কোনো ট্রেস করা যায়নি। তবে পুলিশ সজাগ রয়েছে। যে কোনো ধরনের নাশকতা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, মহাস্থান বাসস্ট্যান্ড থেকে কয়েক গজ পশ্চিমে হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র.) এর মাজার শরীফ। কথিত আছে- মাছের পিঠে আরোহণ করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয়। সেই সময়ে হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান সেখানে বাস করতেন।

ছেলে মানত করে গরু কোরবানি দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং তাকে সাহায্য করতেই মাহী সওয়ারেরর আগমন ঘটে।

এআরএ/এএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।