ভোলায় ২২ হাজার মামলা নিয়ে বিপাকে বিচারকরা
ভোলা জেলা সদর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরের সর্ব দক্ষিণ চরফ্যাশন উপজেলার চর হরিশ গ্রামের সুনীল কুমার দাসের সঙ্গে গত বুধবার কথা হয় ভোলার আদালত পাড়ায়। তার এলাকার ভূমিদস্যু ভুলু ও তার বাহিনী সুনীলের রেকর্ড করা জমি দখল নিতে ঘরে আগুন লাগিয়ে হত্যাচেষ্টার চেষ্টা করা হয় তাকে। সাত বছর আগের ওই মামলা এখনো ঝুলছে তার।
মামলা চালাতে গিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। ক্ষেতে যে ফসল ফলান তা বিক্রি করে প্রতি মাসে মামলার তারিখে তারিখে মামলার ব্যয় বহন করতে হয় তাকে। অথচ যারা তার ঘরে আগুন দিয়েছেন তারা আছেন বহাল তবিয়তে। এমন কথা হাজার হাজার বিচার প্রার্থীর। আদালতে ২৫ বছর আগের মামলা এখনো ঝুলছে বলে জানা গেছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ভোলায় বিচারক সঙ্কটের কারণে ঝুলে আছে প্রায় ২২ হাজার বিচারাধীন মামলা। মামলার জট প্রতিদিন বাড়ছে। মাসের পর মাস মামলা ঝুলে থাকায় বিচার বিভাগের প্রতি মানুষ আস্থাহীন হয়ে পড়ছেন। ফলে বিচার প্রার্থীদের ক্ষোভও দিন দিন বাড়ছে।
জেলা চিফ ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বিভাগে যে ক`জন বিচারক আছেন, তারা পাহাড়সম মামলার জট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছেন।
জেলা জজশিপ থেকে বিচারক চেয়ে মন্ত্রণালয় ও হাইকোর্টের চিঠির প্রেক্ষিতে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ স্বাক্ষরিত চিঠি পুনরায় মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে।
জেলা জজশিপের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সামসুল কবির জাগো নিউজকে জানান, প্রতি মাসেই শুন্য পদের বিবরণ দেয়া হচ্ছে। সিনিয়র সহকারী জজের পদ (লালমোহন কোর্ট) দীর্ঘদিন শুন্য থাকায় মামলার জট বেড়েই চলেছে। সহকারী জজের পদ শুন্য রয়েছে দুটি। এগুলো হচ্ছে দৌলতখান ও মনপুরা উপজেলা কোর্ট।
তিনি আরও জানান, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ অফিস স্টাফের পদ শুন্য রয়েছে ২২টি। জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত (চরফ্যাশন) স্টাফদের সাতটি পদে একজনও নেই। অপরদিকে, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ২টি পদসহ চারটি পদ শুন্য রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৮শ। আর জেলা জজশিপের ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেওয়ানি বিভিন্ন মামলা বিচারাধীন ছিল ১০ হাজার ৪১টি।
মো. সামসুল কবির জানান, গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজারে। সরকার অর্পিত সম্পত্তির দীর্ঘ মেয়াদি জটিলতা নিষ্পত্তির জন্য গত বছর ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে মামলা করে দ্রুত নিষ্পত্তির সুযোগ দেয়া হয়। অথচ, ভোলায় ১০৩২টি মামলা ঝুলে আছে। বিভিন্ন ব্যাংকের দায়ের করা অর্থ ঋণ আদালতে ৩৫টি মামলা ঝুলে আছে।
এছাড়া ল্যান্ড সার্ভে মামলা রয়েছে ৩৬২টি, দেওয়ানি মামলা রয়েছে ছয় হাজার ১৭৫টি। পারিবারিক মামলা রয়েছে ৭শ। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা রয়েছে ২ হাজার ২২৯টি। মানবপাচার মামলা রয়েছে ১৫টি। দেওয়ানি আপিল মামলা ৬২১টি। এছাড়া দেওয়ানি আপিল ২২২টি, পেন্ডিং ৬১৫টি, সহকারী জজকোর্টে ৪৫৬টি, জরিমানা মামলা ৩৪টি ও মিস কেস ১০৪টি। একজন বিচারককে কয়েকটি অতিরিক্ত কোর্টের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওইসব মামলা বিচারে না গিয়ে তারিখ পড়ছে। আর এতেই মামলা জট বেড়ে চলেছে।
এমজেড/এমএএস/পিআর