ভোমরা সিঅ্যান্ডএফের গঠনতন্ত্র বিরোধী নির্বাচন বয়কট


প্রকাশিত: ০২:৫৭ এএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফের গঠনতন্ত্র বিরোধী নির্বাচন বয়কট করা হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের সিংহভাগ সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়। কিন্তু সময়ের পালাবদলে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে নিজেরাই একক প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে এক জরুরী আলোচনা সভা হয়েছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ মফিজুর রহমান সজনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতার সঞ্চালনায় ব্যবসায়ীরা বলেন, ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখা ১৫২ জন। তার মধ্যে বেনাপোলের ৮৯ জন এবং বাকি ৬৩ জন ভোমরাসহ অন্যান্য এলাকার।

এসময় ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কুক্ষিগত নির্বাচন বানচালসহ পূর্ণ তফসিল ঘোষণায় নজরদারি রেখে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন, ভোমরা বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি ও গঠণতন্ত্রমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সাত সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বেনাপোলের সম্রাট এন্টারপ্রাইজের মালিক আলহাজ মজনুর রহমানকে আহ্বায়ক ও পরাগ শিপিং লাইন্সের শরিফুজ্জামান পরাগকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, মামুন ট্রেডার্সের আলতাফ হোসেন, যমুনা ট্রেডিংয়ের আমিনুল হক আনু, এসআরপি ট্রেডিংয়ের লুতফর রহমান, পিএম কর্পোরেশনের শাইদুজ্জামান শহীদ ও সাগর এন্টার প্রাইজের মালিক আকবার আলী।

সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনটি অনিয়মতান্ত্রিক, অগণতান্ত্রিক এবং গঠণতন্ত্র বর্হিভূত হওয়ায় বেনাপোলের সকল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে সম্রাট এন্টারপ্রাইজের মালিক আলহাজ মজনুর রহমান রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন, যুগ্ম শ্রম পরিচালক, খুলনাসহ দায়িত্বশীল ৭টি দফতর বরাবর লিখিত আবেদন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকারের রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন এর কার্যালয় খুলনা থেকে যুগ্ম শ্রম পরিচালক এমকে আলম স্বাক্ষরিত পত্র নং-যুশ্রপ/টিইউ/১৩/২২২৭/১(২), তারিখ: ১৯/১১/১৫ খ্রি. মূলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনকে মনগড়া নির্বাচন থেকে সরে এসে গঠণতন্ত্রের বিধানুযায়ী নির্বাচন সম্পন্ন করার তাগিদ দেন।

আরও জানা য়ায়, গত ১৪ জুন ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভায় পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে ১৭ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। একইসঙ্গে তিন সদস্যের একটি নির্বাচনী কমিটিও ঘোষণা করা হয়।

নির্বাচন কমিশন ৫ নভেম্বর/১৫ তারিখে নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা করেন। তাতে উল্লেখ থাকে ৭ নভেম্বর/১৫ তারিখের মধ্যে যারা অ্যাসোসিয়েশনের সমুদ্বয় পাওনাদি পরিশোধ করবেন তারাই কেবল ভোটার হবেন। এ মর্মে ৯ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, ১২ নভেম্বর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, ১৫ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন, ১৬ নভেম্বর বাছাই ও প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ এবং ২০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ।

এদিকে অত্র অ্যাসোসিয়েশনের গঠণতন্ত্রানুযায়ী অনুচ্ছেদ-১৭(ঘ) ধারায় উল্লেখিত নির্বাচন সংক্রান্ত বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বানের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৫ দিন পূর্বে নোটিশ করতে হবে। উক্ত নোটিশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রত্যেক সদস্যেরকোছে রেজিস্টার্ড ডাকযোগে প্রেরণ করতে হবে। কিন্তু প্রকাশিত তফশিল ৩(খ)-তে তা মানা হয়নি। এছাড়া ৫ নভেম্বর জারিকৃত তফশিল-১ এ দেখানো হয়েছে ৭ নভেম্বরের মধ্যে যারা অ্যাসোসিয়েশনের সমুদ্বয় পাওনাদি পরিশোধ করবেন তারাই কেবল ভোটার হবেন।

অথচ-গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ১৪(খ) ধারাতে উল্লেখিত যে, ভোমরা স্থলবন্দরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লাইসেন্স প্রাপ্ত যে সকল সদস্য নির্বাচনের ৩০ দিন পূর্বে অ্যাসোসিয়েশনের যাবতীয় পাওনাদি (ভর্তি ফি, মাসিক চাঁদা, কল্যাণ তহবিলের চাঁদা, বি/ই চাঁদা) ইত্যাদি পরিশোধ করেছেন কেবল তারাই ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন।

সাধারণ সদস্যরা বলেছেন, এখানে তা না মেনে ৫ নভেম্বর একটি তফশিল ঘোষণা করে ৭ নভেম্বর (মাত্র তিন দিন) সময়ের মধ্যে তা কুক্ষিগত করে রাখে একটি মহল। যোগ সাজসের এই নির্বাচনে ২১টি পদের বিপরীতে ২১ জন সদস্য ব্যতীত অন্য কোনো সদস্য নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত হতে পারেননি। সেক্ষেত্রে ২১টি পদের বিপরীতে ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন। যার ফল প্রকাশ করবে ২০ ডিসেম্বর।

এ কারণে অত্র প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সদস্য বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা হতাশ হয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ এই নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্যালয়ে আবেদন জানানো হয়। তাতে ট্রেড ইউনিয়ন এক চিঠির আলোকে নির্বাচনটি বন্ধ করে দেয়।

এখন সাধারণ ভোটারদের দাবি গঠণতন্ত্র মোতাবেক একটি সুষ্ঠু তফশিল ঘোষণার মাধ্যমে অত্র প্রতিষ্ঠানের সকল সদস্যদের সমন্বযে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন।

এ বিষয়ে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ মফিজুর রহমান সজন জাগো নিউজকে বলেন, ভোমরা স্থলবন্দরকে প্রতিষ্ঠা করতে বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীদের অবদান অনেক বেশি। এখনো পর্যন্ত ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ১৫২ জন সদস্যের মধ্যে বেনাপোলের ৮৯ জন ব্যবসায়ী। তাই বেনাপোলকে বাদ রেখে তারা যে প্রহসনের নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা করেছেন আমরা তার ঘোর বিরোধিতা করছি।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা হয় ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধাণ নির্বাচন কমিশনার জালাল উদ্দিনের সঙ্গে। পরে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনে রং নাম্বার বলে লাইনটি কেটে দেন। পুনরায় ফোন দেয়া হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন খুলনার যুগ্ম- শ্রম পরিচালক এমকে আলম এর সঙ্গে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ভোমরার কিছু লোক অ্যাসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্র না মেনে রাজুকে সভাপতি ও নাছিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। খবর পেয়ে এ নির্বাচনের প্রতি অনাস্থা এনে অ্যাসোসিয়েশনের ৭০ জন সদস্য স্বাক্ষরিত এক লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে ট্রেড ইউনিয়ন থেকে তা স্থগিত করা হয়। তাতে ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মনগড়া নির্বাচন বন্ধ করে গঠনতন্ত্রের বিধান মেনে নতুন করে নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

মো. জামাল হোসেন/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।