জটিলতা পিছু ছাড়ছে না মালয়েশিয়া বিএনপি’র


প্রকাশিত: ০৪:১২ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৫

মালয়েশিয়া বিএনপি’র নব গঠিত কমিটি নিয়ে ক্রমে জটিলতা বাড়ছে। কমিটি গঠন হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে একে অপরকে বহিষ্কার করছেন দল থেকে। সংবাদ সম্মেলন পাল্টা সংবাদ সম্মেলন চলতে থাকায় দলের নেতা-কর্মীরা পড়েছেন বিপাকে। মালয়েশিয়া বিএনপি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নব গঠিত কমিটির একজন সহ-সভাপতিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আবার ওই সহ-সভাপতি আরেকটি সংবাদ সম্মেলন ডেকে ওই কমিটির সভাপতি ও দফতর সম্পাদককে দলের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রচার প্রচারণার দায়ে অবাঞ্চিত করেছেন অব্যাহতি পাওয়া ওই সহ-সভাপতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতেই মানুষের এবং নেতা-কর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় প্রবাসে যদি দলের বিতরে কোন্দল থাকে তাহলে দল কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?  কাগজে কলমেই দেশটিতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ বাংলাদেশির বসবাস। প্রবাসে দলীয় রাজনীতিকে চাঙ্গা করতে দেশের সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটিও বেশ গুরুত্ব দেয়ায় নয়া কৌশলে পদ পদবির আশায় এগুচ্ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি। আবার কেউ কেউ বলছেন কেন্দ্রের নেতারা প্রবাসের কমিটিগুলোকে পূর্ণাঙ্গতা না করে যার যার ফায়দা হাসিলের জন্য বিভক্ত করে রাখেন । দলের স্বার্থে নয় ব্যক্তি স্বার্থের জন্য।

মালয়েশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে দেখা যায় বাঙালি কমিউনিটিতে বিএনপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেশি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে দলের হাইকমান্ড ৬ অক্টোবর সবার সমন্বয়ে ১২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পূর্ণাঙ্গ কমিটি যখন দৈনিক বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া প্রকাশিত হয় তখন মালয়েশিয়া বিএনপির নেতৃবৃন্দ সর্বত্র মিষ্টি বিতরণের মধ্য দিয়ে নতুন কমিটিকে স্বাগত জানায়। চারদিকে খুশির আমেজ সৃষ্টি হয়। তখনই কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ শহীদ উল্লাহ শহীদ কমিটির বিরুদ্বে অভিযোগ তুলেন। নবগঠিত কমিটির নেতারা ভিন্ন রাজনীতিতে জড়িত। একই সঙ্গে এ কমিটিকে পুনঃর্বিবেচনা করারও আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে গত ১১ নভেম্বর নবগঠিত কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকের অনুমতিক্রমে দফতর সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রতন সহ-সভাপতি শহীদকে সংগঠন বিরোধী ও অশালীন মন্তব্য ও নিজেকে প্রস্তাবিত সভাপতি উল্লেখ করে গণমাধ্যমে প্রচারের অভিযোগ এনে তাকে একটি নোটিশ দেন। এই নোটিশের জবাব না পেয়ে ১৭ নভেম্বর দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে শহীদকে দল থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন বাদলুর রহমান খান বাদল।

এদিকে ১৯ নভেম্বর ১২টা ১মিনিটে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫১তম জন্মদিনের আলোচনা সভা শেষে শহীদ তার বলয়ের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সেলায়াং কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন গঠিত কমিটির বিরুদ্বে। শহীদ বলেন, এ কমিটি জাতীয়তাবাদী দলের কমিটি হতে পারে না কারণ এ কমিটিতে স্থান পায়নি বিভিন্ন জেলা কমিটির কোন সদস্য। একে মূল কমিটি না বলে আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে গঠিত পকেট কমিটি বলা যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, বিগত এবং বর্তমান সময়ে এসব নেতাদের প্রধান ব্যবসায়িক পার্টনার আওয়ামী লীগ নেতারা। দলের মধ্যে গ্রুপিং, মারামারি, দালাল দিয়ে শ্রমিক আটকসহ দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজিও করেছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, কারণ দর্শানোর কোনো নোটিশ আমি পাইনি। এ কমিটি কিসের নোটিশ দিবে। এ কমিটি জাতীয়তাবাদী দলের নয়। এটা তাদের পকেট কমিটি। এ সময় তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ২০১৪ সালের ২০ আগস্ট মালয়েশিয়া শাখা বিএনপির ১৬১ সদস্যের প্রস্তাবিত কমিটি স্বহস্তে গ্রহণের পর সেই কমিটি বিলুপ্ত না করে নতুন কমিটি কিভাবে অনুমোদন দিয়েছেন আমাদের বুঝে আসে না। আমাকে কে অব্যাহতি দিবে ওরা কারা। আমিই এ কমিটির সভাপতি বাদলুর রহমান খান বাদল ও দফতর সম্পাদক আমিরুল ইসলাম রতনকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অবাঞ্চিত করেছি।  

নবনির্বাচিত কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক কাজী সালাউদ্দিন বলেন, এতদিন থেকে মালয়েশিয়ায় যারা বিএনপির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে তাদের মূল্যায়ন না করে একেবারে অপরিচিত লোকদের কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। এ কমিটি মেনে নেয়া যায় না।

সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার বাদলুর রহমান খান বাদল এ প্রতিবেদককে বলেন, পদ বঞ্চিত একটা গ্রুপ কেন্দ্রের অনুমোদিত এই কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে। কমিটির বিরুদ্ধে এবং নেতাদের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট বলে অভিহিত করেন। দলের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্রের বিরুদ্বে অবস্থান নেয়ায় এবং অনুমোদিত কমিটিকে ভূয়া কমিটি আখ্যায়িত করার কারণে নোটিশের মাধ্যমে শহীদকে সহ-সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

ভিন্ন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রসঙ্গে সভাপতি বাদল বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে আমি বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। সে জন্য নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করি। নেত্রীর নির্দেশে বহির্বিশ্বে বিএনপির পক্ষে জনমত তৈরি করেছি। এ ছাড়া বিএনপির অনলাইন আন্দোলনের মূল ১০/১৫ জনের মধ্যে আমিও একজন।

প্রস্তাবিত কমিটি বলতে কিছু নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত মানে কি তারা আসলে বুঝে না। কমিটির একটা লিস্ট কেন্দ্রে রিসিভ করা মানে সেটা যে প্রস্তাবিত হবে এটা তাদের ভুল ধারণা। আপনি একটা লিস্ট দিয়ে এলেও কেন্দ্র তা গ্রহণ করবে।

সাধারণ সম্পাদক মোশাররাফ হোসেন বলেন, যারা বিরোধিতা করছেন তাদের নাম তো কমিটিতে আছে। এ ছাড়া অন্য কেউ যদি মূল্যায়িত না হয় তাহলে কেন্দ্রে কিংবা মূল কমিটির নেতাদের জানাতে হবে।আর শহীদের মত কেউ যদি দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় সেও দল থেকে বহিষ্কার হবেন এটাই দলের গঠনতন্ত্রের কথা।
 
আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির কেউ এ কমিটিতে নেই দাবি করে তিনি বলেন, যদি এমন কেউ থেকেই থাকে তাহলে তাদের নাম দিতে পারে। এ ছাড়া কেউ যদি জিয়ার আদর্শ গ্রহণ করে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করতে চায় তাহলে তাদের আমরা ফিরিয়ে দিতে পারি না।

জেডএইচ/এআরএস/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]