ইতিহাসের দায়মোচন


প্রকাশিত: ০৫:০০ এএম, ২২ নভেম্বর ২০১৫

ইতিহাসের দায় মোচনের পালায় এবার সাকা-মুজাহিদ পর্বের সমাপ্তি ঘটলো। শনিবার রাত ১২:৫৫ মিনিটে কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয় দুই দুই ঘাতকের ফাঁসি। এর মধ্য দিয়ে ভারমুক্ত হল গোটা জাতি। শহীদের স্বজনরা পেল সান্ত্বনা। আর দেশের আপামর মানুষজন পেল স্বস্তি।

ইতিহাস বলে, মানুষের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়ায় তাদের জন্য ইতিহাসের অমোঘ লিখন হচ্ছে লাঞ্ছনা। কিছু সময় বা অনেক সময় অনেক মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখা যায়। কিন্তু সব সময় সব মানুষকে সেটি করা যায় না। তাই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। এক সময় তাদের গাড়িতে উঠেছিল শহীদের রক্তস্নাত লাল সবুজের পতাকা। ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লাখ মা বোনের ইজ্জতের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংসদে বসে ভেবেছিল তারা সবকিছুর উর্ধ্বে। আলী আহসান মুজাহিদ মন্ত্রী হয়ে দম্ভোক্তি করেছিল এদেশে কোনো রাজাকার নেই। সেই তিনিই অনুকম্পা চাইলেন। সব দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে  চাইলেন প্রাণভিক্ষা। আলবদর নেতা, যার হাতে অসংখ্য মানুষের প্রাণ গেছে। চরম পৈশাচিকতায় এদেশের লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে তার নির্দেশে। চোখ উপড়ে ফেলে, হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে বের করে, মৃতদেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে এই মুজাহিদ গংরা। স্ত্রীর কাছ থেকে স্বামীকে, নাবালক সন্তানের সামনে থেকে তার বাবাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এদেশের বিজয়ের ঊষালগ্নে পরাজয় অত্যাসন্ন জেনে হত্যা করা হয়েছে বাংলা মায়ের সূর্য-সন্তানদের। উদ্দেশ্য ছিল  বাংলাদেশ যাতে স্বাধীন রাষ্ট্র হয়েও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। এই ঘৃণ্যচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইতিহাসকে কিছু দিনের জন্য  ভিন্ন দিকে ঘুরাতে পেরেছিল ঠিকই, কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। তাই মুজাহিদরা এখন নিজেরাই ইতিহাস। ফাঁসির রায় কার্যকরের পর সমাপ্ত হল বুদ্ধিজীবী হত্যার এক অন্যতম নর-ঘাতকের কালো অধ্যায়ের।

অন্যদিকে বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, যার চারটিতেই তাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়। এই সাকার দম্ভ এমন এক পর্যায়ে ছিল যে কেউ তার টিকিটি স্পর্শ করতে পারবে না। কিন্তু সকল দর্পচূর্ণ হয়েছে। ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে চট্টগ্রামের ত্রাস সাকার সকল ঔদ্ধত্যের। তার বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করা, রায় ফাঁস করা, বিচারকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন সাকা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গণহত্যার দায় নিয়ে তাকে ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলতে হয়েছে।

গত চার দশক ধরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য অপেক্ষায় থেকেছে গোটা জাতি। কিন্তু নানা ঘাত-প্রতিঘাতে পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারই শেষ পর্যন্ত জাতিকে বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে থেকে মুক্তি দিল। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। চারজন যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকর হয়েছে। অনেকের বিচার চলছে। সেগুলোও শেষ করতে হবে। এটা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে জয় লাভ করতে হলে চাই জাতীয় ঐক্য ও সংহতি। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারায় চালাতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।