ভিডিও এডিটিং একটি নিরাপদ পেশা : শামীমা নার্গিস
শামীমা নার্গিস পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলেও তার আগ্রহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে। অদম্য চেষ্টা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি ভিডিও এডিটিং এবং ওয়েব ডিজাইনিংয়ের মতো পুরুষশাসিত অঙ্গনে বিশেষ দক্ষতার ছাপ রেখেছেন।
নারী হয়েও এমন ভিন্নধর্মী পেশায় নিজের সফলতা নিয়ে জাগো জবসের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম রাব্বী।
জাগো জবস: ভিডিও এডিটিংয়েই কি আপনার চাকরি জীবন শুরু?
শামীমা নার্গিস: আমার কর্মজীবনের শুরু মূলত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার (বিজেম) প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে আমি বিশেষভাবে আগ্রহী হয়ে উঠি ওয়েব ডিজাইনিং ও ভিডিও এডিটিংয়ে। এ দুটি বিষয়ই এখন আমার সবচেয়ে প্রিয়। বস্তুত দিন-রাত কেটে যায় এসব বিষয়ে কাজ করতে করতে।
জাগো জবস: কার অনুপ্রেরণায় এ পেশাটিকে ভালোবেসে ফেললেন?
শামীমা নার্গিস: সত্যি কথা বলতে কি, বিশেষ কারো অনুপ্রেরণায় আমি বিষয় দুটোতে দক্ষতা অর্জন করিনি। প্রচুর পড়াশোনা, ইন্টারনেট নিয়ে ঘাটাঘাটি এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কয়েকটি প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপ্ত করার পর আমি এপর্যায়ে আসতে পেরেছি। তবে সামনে এগিয়ে যেতে সব সময়ই উৎসাহ যুগিয়েছে আমার পরিবার; বিশেষ করে আমার স্বামী। পরিবার থেকে মেয়েকে যথাযথ মর্যাদা দিলে সেও সমাজে বিশেষ অর্জন এনে দিতে পারে।
জাগো জবস: কীভাবে এমন ভিন্ন ও আধুনিক টাইপের প্রফেশনে যুক্ত হলেন?
শামীমা নার্গিস: বিজেম-এ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ প্রফেশনে যুক্ত হই। আসলে বিজেম-এ প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং কোর্স চালুর পর এক পর্যায়ে আমার মনে হলো একজন নারীর জন্য ভিডিও এডিটিং হতে পারে চমৎকার একটি নিরাপদ পেশা। কারণ এটি একটি আধুনিক ও ভিন্নধর্মী বিষয়। সর্বোপরি ভিডিও এডিটিং বিষয়টি খুবই ক্রিয়েটিভ। এতে আছে নান্দনিকতা। আর আমি মনে করি, একজন পুরুষের তুলনায় গুছিয়ে কাজ করা ও নান্দনিকতা অর্জনে নারীকে আমি অবশ্যই এগিয়ে রাখবো, সে সূত্র ধরেই এ পেশায় আসা।
জাগো জবস: এবিষয়ে আপনার কোন প্রশিক্ষণ রয়েছে?
শামীমা নার্গিস: প্রাথমিক ধারণা লাভের পর বিষয় দুটোতে আমি কয়েকটি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করি। তারপর থেকেই চলছে আরো নতুন কিছু জানার ও শেখার অবিরাম চেষ্টা। আসলে দক্ষতা অর্জন করতে হলে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেকোনো কর্মে পরিপক্কতা আসে। শেখার জানালাগুলো খুলে যায়।
জাগো জবস: আপনি ওয়েব ডিজাইনিংয়েও পারদর্শী; একসাথে দুটো বিষয় কীভাবে সামলান?
শামীমা নার্গিস: ভিডিও এডিটিং এবং ওয়েব ডিজাইনিং বিষয় দুটো আলাদা হলেও এগুলো পুরোপুরি কম্পিউটার নির্ভর। ওয়েব ডিজাইনিংয়ে ব্যাপক বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব থাকার কারণে বিষয় দুটো নিয়ে কাজ করতে আমার কোন অসুবিধা হয় না। নতুন নতুন সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করতে আমি খুব আনন্দ পাই-উপভোগ করি। আর প্রতিদিনই চেষ্টা করি নতুন কিছু শিখতে-জানতে। আসলে এ বিষয়ে আপডেট থাকাটাই হচ্ছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং।
জাগো জবস: এ প্রফেশনে আয় ও সুযোগ-সুবিধা কেমন?
শামীমা নার্গিস: একজন দক্ষ ওয়েব ডিজাইনার এবং ভিডিও এডিটরের আয় ও সুযোগ-সুবিধা সমজাতীয় অন্যান্য পেশার চাইতে কোন অংশে কম নয়। আমি বলবো বেশ ভালো। পেশা হিসেবেও সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ। অপরদিকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ভালো আয়ের অন্যতম প্রধান বিষয় হলো এগুলো। কারো কারো মাসিক আয় কয়েক লক্ষ টাকাও হতে পারে।
জাগো জবস: সেই নারীদের আপনি কী বলবেন; যারা এ বিষয়ে আপনার মত হতে চান?
শামীমা নার্গিস: অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলবো, ওয়েব ডিজাইনিং এবং ভিডিও এডিটিং নারীদের অন্যতম প্রধান পেশা হতে পারে। যেকোনো বিষয়ে পড়াশোনা করে মানসম্পন্ন কোন প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে বিষয় দুটোতে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। চাকরির সম্ভাবনাও এখন অনেক বেশি।
জাগো জবস: সফলতা বলতে আপনি কি বোঝেন?
শামীমা নার্গিস: সফলতা আমার কাছে অনেক কিছুর সমষ্টি। এটি একক কোন বিষয় নয়। এজন্য সর্বাগ্রে দরকার কঠোর পরিশ্রম, কাজের প্রতি গভীর নিষ্ঠা এবং শেখা ও জানার অপার আগ্রহ।
জাগো জবস: ক্যারিয়ারে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে যেতে চাইলে কী করা উচিত?
শামীমা নার্গিস: যেকোনো পেশা বা ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছতে হলে দরকার পেশার প্রতি গভীর ভালোবাসা, মমত্ব ও শ্রদ্ধাবোধ। আর সব বিষয়ে কিছু কিছু জানার চাইতে পছন্দের বা ভালো লাগার বিষয়টিতেই সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জনকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। তাহলেই ক্যারিয়ারের শীর্ষে বা নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব।
এসইউ/আরআইপি