দিনাজপুরে বনভূমির ১২২ একর জমি বেদখল
দিনাজপুরের পার্বতীপুরের হরিরামপুরে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের ১৩২ একর বনভূমির মধ্যে ১০ একরে বনায়ন করা হলেও বর্তমানে ১২২ একর জমি বেদখলে রয়েছে। বন সংলগ্ন এলাকাবাসীরা নিজেদের জমি দাবি করে বনভূমি এলাকার জমি নিজেদের দখলে নিয়ে রীতিমতো চাষাবাদ করছেন।
বনভূমি উজার করে জমি দখলের সময় বাধা প্রদান করতে গেলে ভূমি দখলকারীরা বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকাশ্যে হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। ফলে এখানে কর্মব্যরত বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।
পার্বতীপুর উপজেলার ১০নং হরিরামপুর ইউনিয়নের শাহ্ পাড়াসহ বিরাট এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে বনভূমি। বনভূমির পরিমাণ ১৩২ একর। কাগজে কলমে ১৩২ একর জায়গা নিয়ে বনভূমি গড়ে উঠলেও বর্তমানে মাত্র ১০ একর জমির উপরে গাছ রয়েছে। বাকি ১২২ একর জমি দখল করে এলাকার লোকজন চাষাবাদ করছেন।
শাহপাড়া এলাকার নছির উদ্দিনের ছেলে কুরবান (৩৫) জাগো নিউজকে জানান, একই এলাকার রাসেল ডা. ও তার আত্মীয়-স্বজনরা চার হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে দিয়ে বনভূমির গাছ কাটিয়ে জমি দখল করে চাষাবাদ করছেন। এভাবে অনেকেই বনভূমির গাছ কেটে জায়গা দখল করে নিয়েছে।
শাহপাড়া এলাকার মৃত আকবর আলীর ছেলে আনোয়ার আলী শাহ দাবি করেন, বনভূমি এলাকায় তার সাত একর জমি রয়েছে। এই জমি চাইতে গিয়ে বনবিভাগের কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ১১টি গাছ কাটার মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
একই গ্রামের আজমল হক শাহ (৭২), জয়নাল আবেদিন (৩৫) নজমুল হক মোল্লাসহ (৬৫) ৩০/৪০ জন জমির দাবিদারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছে বন বিভাগ। তাদের দাবি জমি বনবিভাগ থেকে ক্রয় করা না হলেও বনবিভাগ সেগুলো তাদের দখলে রেখেছে।
বন বিভাগের মধ্যেই দক্ষিণ হরিরামপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের সভাপতি শাহাজাহান আলী, মহব্বত আলী, রেহেনা বেগম, জুলেখা বেগম অভিযোগ করে বলেন, গত ৬/৭ দিন পূর্বে এলাকার মশিউর মাস্টার, রবি, কিবরিয়া আমিনুল মাস্টার, রাসেল ডা. সহ বেশকিছু লোক একত্রিত হয়ে বনভূমি এলাকায় প্রায় ২শ আমগাছ লাগান। অথচ তাদের নামে মামলা না করে বন বিভাগ উল্টো শাহাপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন শাহসহ ২১ জনকে আসামি করে গাছ কাটার মামলা দায়ের করেন। এভাবেই তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সরজমিনে আনোয়ার হোসেন শাহ এর সঙ্গে কথা বলার সময় সাদা পোশাকধারী কয়েকজন পুলিশ তাকে ধরে মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই মোছাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কৌশলগত কারণেই সাদা পোশাকধারী পুলিশ দিয়ে তাকে ধরা হয়েছে।
বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার আলহাজ ফজলুল হক জাগো নিউজকে জানান, এ বনভূমিতে ১শ একর জমির উপরে আকাশ মনির বাগান ছিল। কিন্তু ভূমি দস্যুরা গাছ কেটে ভূমি দখল করায় বনের পরিধি কমে এসেছে। তিনি বলেন, এসব ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ৩০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে সামাজিক বনায়নের কারণে বন আইন প্রয়োগ করা যাচ্ছে না বলে কঠোরভাবে এগুলো দমন করা সম্ভব হচ্ছে না।
তারপরও ব্যবস্থা নিতে গিয়ে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অসহযোগীতার কারণে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। জনবল ও যানবাহন সঙ্কটের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এমদাদুল হক মিলন/এমজেড/পিআর