কয়লা বোঝাই কার্গোর উদ্ধার কাজ শুরু হয়নি : হুমকিতে জীববৈচিত্র্য


প্রকাশিত: ০১:১০ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

সম্রাট নামের অন্য একটি কর্গো জাহাজের ধাক্কায় ও এমভি জিয়া রাজের মাস্টারের অদক্ষতার কারণেই সুন্দরবনের পশুর নদীতে কয়লা বোঝাই কার্গো ডুবে যায় বলে মনে করছে বনবিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি।

কার্গো ডুবির ঘটনায় গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি শুক্রবার দুপুরে পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাঈদুল ইসলামের কাছে দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন এমন কথাই উল্লেখ করেছেন।

কার্গো জাহাজটি যথেষ্ট পুরাতনসহ আদৌ এই কার্গোটি ৫১০ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা ছিল কিনা সে প্রশ্নও উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

ভবিষ্যতে বনের ক্ষতি এড়াতে সংরক্ষিত এলাকায় পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রাখারও সুপারিশ করেছেন ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেন।

অন্যদিকে তলা ফেটে ডুবে যাওয়া কয়লা বোঝাই কার্গো জাহাজের উদ্ধার কাজ গত ৩ দিনেও শুরু হয়নি। ডুবে যাওয়া কার্গোটি বেঁধে না রাখায় জোয়ার-ভাটায় স্রোতের তোড়ে প্রায় ৫০ মিটার ডুবে যাওয়া স্থান থেকে সরে গেছে। বর্তমানে পশুর চ্যানেলের জয়মনির ঘোল এলাকার ডুবে যাওয়া কার্গো এমভি জিয়ারাজের মাংকি পয়েন্টই (মাস্তুল) ভাটার সময়ে দেখা যাচ্ছে।

জোয়ারের সময়ে যাতে সেটি দেখা যায় সেজন্য কার্গোর মাংকি পয়েন্টের সাথে একটি ড্রাম বেধে চিহিৃত করে রাখা হয়েছে।

সুন্দরবনের পশুর চ্যানেলে কয়লা বোঝাই কার্গো ডুবির ঘটনায় জাহাজের মালিক ও মাস্টারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা করেছে বনবিভাগ, যাতে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় কার্গোটির মাস্টার মো. ভুলু গাজীর নৌযান চালানোর অদক্ষতা, গাফিলতিসহ কার্গোটি চলাচলের মেয়াদ উত্তীর্ণ থাকায় খুব সহজে এর এ্যাংকর ছিড়ে পাশ্ববর্তি অপর জাহাজ সম্রাট কার্গোয় ধাক্কা লেগে তলা ফেটে যায়। তলা ফাটা অবস্থায় ৫১০ মেট্রিক টন ইন্দোনেশিয়ান পাথুরে কয়লা নিয়ে গন্তব্যে যাত্রা করাসহ রাতে চলাচল নেভিগেশন আইনে একটি জঘণ্য অপরাধ।

সম্রাট কার্গোকে আঘাত করে আগেই তলা ফেটে গেলেও কার্গোটির মাস্টার ও মালিকপক্ষ চরে আঘাত লেগে ফেটেছে বলে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। কার্গোটিতে কোনো হ্যাজ না থাকায় (লোহার ঢাকনা) জোয়ার ভাটার তোড়ে ত্রিপল সরে গিয়ে কয়লা মিশ্রিত পানি সুন্দরবনে ঢুকে পড়ছে। এতে সুন্দরবনের দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্য চাঁদপাই রেঞ্জের কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার গাজী মতিয়ার রহমান তাদের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিআই ডাব্লিউটিএ, মংলা কর্তৃপক্ষ ও কার্গোটির মালিক পক্ষ কয়লা বোঝাই এই কার্গোটি উদ্ধারে আশানুরূপ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন না বলেও তাদের কাছে প্রতিয়মান হয়েছে।  

সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ও সেভ দ্যা সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে এই কয়লাবাহী জাহাজ ডুবি আমাদের জন্য একটা সর্তক বার্তা। রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে প্রতিটি বড় জাহাজে ৮০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আনা হবে। এই কয়লা সুন্দরবনের আকরাম পয়েন্ট থেকে নামিয়ে ছোট ১০ থেকে ১২টি লাইটার ভেসেলে করে মংলায় আনা হবে। তাতে বছরে প্রায় পাঁচশত জাহাজ সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে চলাচল করবে। ২৪ ঘন্টা সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলে নদীতে কয়লা, তেল-মবিল ও বর্জ্য পড়বে, হর্ণের শব্দ, রাতে সার্চ লাইটের আলো প্রাণিকুলের অভয় অরণ্য নষ্ট করবে।

তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দায়ী করে বলেন, সুন্দরবন এলাকায় অধিকাংশ জাহাজ ডুবি ঘটেছে ফিটনেসের অভাবে।

মঙ্গলবার রাতে মংলা থেকে ৫১০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এমভি জিয়া রাজ কার্গোটি যশোরের নওয়াপাড়া ঘাটে যাবার সময় জয়মনির ঘোল এলাকায় নির্মাণধীণ সাইলোর কাছে তলাফেটে ডুবে যায়।

এর আগে, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ও টি নর্দান -৭  ডুবির ঘটনা ঘটে। এরপর চলতি বছরের ২ মে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদীতে সারবাহি কার্গো জাহাজ জাবালে নূর ডুবির ঘটনা ঘটে।

এমএএস/এমএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।