আইন লঙ্ঘন করে চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইন লঙ্ঘন করে চলছে। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও অনেকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হচ্ছে না। অনেকে আবার স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরি করেও সেখানে না গিয়ে আউটার ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। কেউ আবার প্রতি বছর তাদের বার্ষিক হিসাব প্রদান করে না। অনেকে আবার বিশ্ববিদ্যালয়কে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
গত ২৯ ডিসেম্বর ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহসহ এক প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির কাছে ইউজিসির ৪৫তম বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি উচ্চশিক্ষা স্তরে শিক্ষার পরিবেশ ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য ইউজিসির প্রতি আহ্বান জানান।
ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, সিন্ডিকেট, অর্থ কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভাও হয়না। এসব কারণে শিক্ষার মান ঠিক রাখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে আনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেছে ইউজিসি। পাশাপাশি শিক্ষকসহ কর্মকর্তা নিয়োগ পূর্ণাঙ্গ সার্ভিস স্ট্যাটিউট প্রণয়নের সুপারিশও করেছে।
দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষা স্তরের মানোন্নয়নে বার্ষিক প্রতিবেদনে ২৯টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছে ইউজিসি। সেখানে এই স্তরের গ্রাজুয়েটদের শ্রমবাজারে প্রবেশের আগে জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য তিন থেকে ছয় মাসের বাধ্যতামূলক ও কার্যকরী ইন্টার্নশিপ চালুর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের র্যাংকিং করা, শিক্ষা খাতে বরাদ্দের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গবেষণার জন্য রাখা এবং ২০২২ সালের মধ্যে জাতীয় বাজেটের ২ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ শতাংশ উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।
এছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া প্রবর্তন, ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের প্রথিতযশা অধ্যাপকদের লেকচার শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করার কথা বলা হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পছন্দের তিনটি অডিট ফার্ম থেকে সরকার একটি অডিট ফার্ম নির্ধারণ করে দেয়ায় আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হচ্ছে না বলে উল্লেখ করে ইউজিসি সুপারিশে জানিয়েছে, ইউজিসির পরামর্শ অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় আইন- ২০১০ অনুযায়ী স্বনামধন্য কোনো ফার্ম নিয়োগ করে হিসাব নিরীক্ষা করা যেতে পারে।
আরও বলা হয়েছে, শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য আকর্ষণীয় আর্থিক সুবিধা, শিক্ষকদের গবেষণালব্ধ ফল আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে প্রকাশিত হলে গবেষক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান, শিক্ষকদের পৃথক বেতন স্কেল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখভাল করতে ইউজিসির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ, জনবল ও অবকাঠামোগত অপর্যাপ্ত।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়মে আনতে ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন, সান্ধ্যকোর্স বন্ধসহ উচ্চশিক্ষা স্তরের মানোন্নয়নে সব ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণসহ অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়ার বিষয়টির সমালোচনা করে সেদিকেও নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শহীদুল্লাহ বলেন, ইউজিসির ৪৫তম বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষার বর্তমান অবস্থা, সমস্যা ও করণীয়সহ বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতিও আমাদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সে মোতাবেক কাজ করা হবে বলেও জানান চেয়ারম্যান।
এমএইচএম/এমএসএইচ/এমকেএইচ