প্রাথমিকের ২৬ হাজার ল্যাপটপ কেনার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনে নতুন করে আরও ২৬ হাজার ল্যাপটপ বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্য চলতি বছরের মার্চে এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু পরে তা বাতিল করে দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখন সরকারি টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) থেকে এসব পণ্য ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে মানসম্মত পণ্য পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের (পিইডিপি-৪) আওতায় নতুন করে ২৬ হাজার ল্যাপটপ, ২৬ হাজার সাউন্ড সিস্টেম ও ২৬ হাজার প্রজেক্টর কেনার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা। এ বাবদ ৩৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্র জানায়, দেশের প্রতি উপজেলার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দেশের ৬০ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ে ক্লাসরুমে পাঠ দেয়া হবে মাল্টিমিডিয়ায়। এ জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ‘কম্পিউটার অ্যান্ড এক্সেসরিজ স্কুল’ কর্মসূচির অধীনে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিতরণের জন্য কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেম কেনা হচ্ছে। ল্যাপটপ বিতরণের ক্ষেত্রে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল, যেসব বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে এবং আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন, সেসব বিদ্যালয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, এর ধারাবাহিকতায় গত ৭ মার্চ মোট ২৬ হাজার ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও স্পিকার কেনার উন্মুক্ত আন্তর্জাতিকক দরপত্র আহ্বান করে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে ওই ক্রয় প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তাদের প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে গত ২৪ মার্চ প্রি-টেন্ডারিং সভা সম্পন্ন হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে ১৯ এপ্রিল এ টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। এখন দরপত্র ছাড়া অর্থাৎ সরাসরি ‘দেশীয় উৎপাদিত পণ্য’ কেনার চেষ্টা চলছে।
ডিপিই’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিন্ধান্ত রয়েছে, কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ওটিএম (ওপেন টেন্ডার মেথড-উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি) অনুসরণ করার। কিন্তু এই প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে প্রায় দেউলিয়া হতে যাওয়া টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) মাধ্যমে নিম্নমানের পণ্য কেনার চেষ্টা করলে, সেখানে দুর্নীতি বা লুটপাটের অভিযোগ আসতেই পারে।
তাছাড়া টেশিসের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক প্রকল্প আইসিটি ফেইজ-১’ এর অধীনে কেনা প্রায় ২৪ হাজার আইসিটি শিক্ষা উপকরণের অধিকাংশই অকেজো হয়ে পরেছে। টেশিস হলো ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি সংস্থা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিই’র মহাপরিচালক ও ক্রয় কমিটির প্রধান ড. এ এফ এম মঞ্জুর কাদির জাগো নিউজকে বলেন, উন্মুক্ত দরপত্রে নাকি টেশিসের মাধ্যমে ল্যাপটপসহ অন্যান্যা পণ্য কেনা হবে। তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করেছিলাম, পরে সেটা বাতিল করেছি। সরকারের সিন্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান টেশিসের মাধ্যমে এসব পণ্য ক্রয় করার জন্য উন্মুক্ত দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে সরাসরি মাল কেনার জন্য টিএন্ডটি (ডাক ও টেলিযোগাযোগ) মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। তাদের মতামত পেয়েছি; তারা আমাদের জানিয়েছেন, তারা সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও স্পিকার সরবরাহ করতে পারবেন।’
সচিব বলেন, এ বিষয়ে সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে তাই বাস্তবায়ন করা হবে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কিনতে প্রধানমন্ত্রীর একটি অনুশাসন রয়েছে, সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে টেশিসের মাধ্যমে ২৬ হাজার ল্যাপটপ, স্পিকার ও প্রেজেক্টর কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
টেশিসের পণ্যের মানের বিষয়ে সচিব বলেন, টেশিস থেকে পণ্য কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে তাদের সক্ষমতা মনিটরিংয়ের জন্য আমাদের একটি টিম সব বিষয়ে পরিদর্শন করবে। এরপর উভয়ে বসে দরদাম নির্ধারণ করার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এমএইচএম/জেডএ/এমকেএইচ