বাংলাদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে চীনের ডালি

জেসমিন পাপড়ি
জেসমিন পাপড়ি জেসমিন পাপড়ি , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:২৩ পিএম, ১৯ জুলাই ২০১৯

উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় পাসের পর বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন জিনিয়া জাহান। কিন্তু সফলতার সঙ্গে সব পাবলিক পরীক্ষা উতরে আসা জিনিয়াকে ধাক্কা খেতে হলো। সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ মিলল না।

এবার চেষ্টা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে। কিন্তু খরচ জানার পর ভাবনা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলতে হলো তাকে। তাই বলে থেমে যাননি জিনিয়া। এলাকার একজন সিনিয়র ভাইয়ের কাছ থেকে জানলেন চীনের ইউনান প্রদেশের ডালি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। কিছু না ভেবেই সার্কুলার দেখে সেখানে আবেদন করেন তিনি।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। চীনের শীর্ষ তালিকায় থাকা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল পঞ্চম বর্ষের ছাত্রী এখন জিনিয়া। আর কিছুদিন পরেই ডাক্তার তকমা লাগবে নামের সঙ্গে।

জিনিয়ার মতো অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর দেখা মেলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ডালি বিশ্ববিদ্যালয় চীনের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক শহর ডালির প্রায় ৪১০ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এর দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে। একটি গুচেনগ (প্রাচীন শহর ক্যাম্পাস) এবং অন্যটি জিয়াউয়ান (ওয়াটার লিলি ক্যাম্পাস) এ অবস্থিত। প্রাচীন শহরের ক্যাম্পাসে দেখা হয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।

এ ক্যাম্পাসটির একপাশে সিঙ্গান পাহাড় অপর পাশে ইরেই লেক, যা মনোরম এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

জিনিয়া বলেন, ‘আবহাওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান, শিক্ষক-সবকিছু মিলিয়ে এখানে পড়ালেখার পরিবেশ অনেক উন্নত এবং চমৎকার। যারা বাংলাদেশে সরকারি মেডিকেলে চান্স পাচ্ছে না বা কোনো আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি তারা সহজে মেডিকেল পড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে চাইলে চীনে আসতে পারে। সাধ্যের মধ্যে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।’

চীনের ইউনান প্রদেশের ডালি শহরে প্রাকৃতিক পরিবেশ ঘেরা অবস্থানে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ডালি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়েছে চীন পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও।

স্থানীয় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও এখন এ বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে। এসব বিদেশি শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আসা। ইউনানের রাজধানী কুনমিং থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব কম। আকাশপথে ঢাকা থেকে কুনমিংয়ের দূরত্ব ২ ঘণ্টার।

শিক্ষার্থীরা বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষার পাশাপাশি এখানে টিউশন ফি, থাকা খরচ ও আনুষঙ্গিক খরচ তুলনামূলক কম।

জিনিয়া বলেন, ‘স্কলারশিপ নির্ভর করে রেজাল্টের ওপর। রেজাল্ট ভালো হলে টিউশন ফি মওকুফ করে চীনের সরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়।’

তিনি জানান, এর বাইরে সব মিলিয়ে বাংলাদেশি ১৫ হাজার টাকায় তার মাসের সব খরচ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ বলেন, ‘ভালো পরিবেশ পেতে, দেশ ভ্রমণের ইচ্ছা থাকলে, দেশের জন্য কিছু করতে চাইলে চীনের মতো দেশে পড়ালেখা করতে আসা উচিত। এখানে খরচ তুলনামূলক অনেক কম। অন্তত দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় তো অনেক কম।’

রাজু জানান, ভাষাগত সমস্যা দূর করতে এখানে এসে চাইনিজ ভাষার ছয় মাসের একটি কোর্স করতে হয়। লোকাল ভাষা শেখাটা খুব উপকারী। দুইশ’ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় দেড়শ’ চাইনিজ। তাছাড়া ক্লিনিকাল প্র্যাকটিসের জন্য, স্থানীয় রোগীদের সমস্যা-সুবিধা জানতে লোকাল ভাষাটা শেখা জরুরি হয়ে ওঠে।

স্কলারশিপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একাডেমিক রেজাল্ট যত ভালো হয় তত স্কলারশিপ মেলে। এর পাশাপাশি খেলাধুলা, ভাষা শিক্ষাসহ অন্যান্য অনেক প্রতিযোগিতা থাকে, সেগুলোতে ভালো করলেও স্কলারশিপের পয়েন্ট যোগ হয়।’

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিল্প, বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল, শিক্ষা, অর্থনীতি, কৃষি, আইন, ব্যবস্থাপনাসহ নানা বিষয়ে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২৮টি মাস্টার্স এবং ৫৩টি স্নাতক প্রোগ্রাম রয়েছে।

চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটির প্রায় দুই হাজার চারশ’ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডালি বিশ্ববিদ্যালয় ২৪তম অবস্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মোট সংখ্যা অনুযায়ী ইউনান প্রদেশে শীর্ষ স্থানে রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। ডালি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজারেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন।

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা জানান, মেডিকেল বা চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়ালেখার জন্য ডালি বিশ্ববিদ্যালয় সুনাম কুড়িয়েছে। তাই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি অন্যতম গন্তব্য হতে পারে।

জেপি/এনডিএস/এসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।