হঠাৎ ভিকারুননিসার বেতন পরিশোধের নির্দেশে বিপাকে অভিভাবকরা

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০১:১৬ পিএম, ১৯ জুন ২০১৯

‘ম্যানেজার সাহেব, দয়া করে দোতলায় একজন অফিসার দেন। বাসায় ছোট্ট বাচ্চা রেখে এসেছি। এত লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে দোতলায় পৌঁছে কখন বেতন পরিশোধ করব? আজকের মধ্যে বেতন পরিশোধ না করলে পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেয়া হবে না এ কথা শুনে ছোট্ট বাচ্চাকে বাসায় রেখে ছুটে এসেছি। রিকশাওয়ালা ৫ মিনিটের মধ্যে আসছি বলে এলেও যে গতিতে বেতন নেয়া হচ্ছে তাতে ঘণ্টাখানেক লেগে যাবে।’

রাজধানীর কলাবাগানের বাসিন্দা ভিকারুননিসা নূন স্কুলের (আজিমপুর শাখা) চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর মা বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় নিউ এলিফ্যান্ট রোড, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সরণিতে ব্যাংক এশিয়ার নিচতলায় দাাঁড়িয়ে বেতন নেয়ার কাজটি দ্রুত করতে একজন বাড়তি অফিসার চাইছিলেন। তার সামনে নিচতলা থেকে দোতলা পর্যন্ত ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বেতন দিতে আসা কমপক্ষে শতাধিক অভিভাবকের দীর্ঘ লাইন ছিল। ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা লম্বা লাইন দেখে এগিয়ে এসে সবাইকে ধৈর্য ধরে সিরিয়াল মেনে বেতন পরিশোধের আহ্বান জানাচ্ছিলেন।

viqarunnissa

অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, স্কুল থেকে তিনদিন আগে এপ্রিল, মে ও জুন তিনমাসের বেতন একত্রে পরিশোধের ব্যাংকের ‘পে স্লিপ’ দেয়া হয়। পে স্লিপে ১৭ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করার কথা লেখা রয়েছে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গতকাল শিক্ষকরা হঠাৎ করেই ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে আজকের (বুধবার) মধ্যে বেতন পরিশোধ করে টিচার্স কপি ক্লাসে জমা দিতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেন। বেতন পরিশোধের কপি জমা না দিলে পরীক্ষার প্রবেশপত্র (শনিবার পরীক্ষা শুরু) দেয়া হবে না জানানো হয়।

শিক্ষার্থীদের অনেকে বাসায় গিয়ে বিশেষ করে ছোট ক্লাসের শিক্ষার্থীরা আজকের মধ্যে বেতন পরিশোধের কথা বললেও অনেক অভিভাবক বিষয়টি সিরিয়াসলি নেননি। কিন্তু আজ স্কুলে মেয়েকে পৌঁছে দিতে গিয়ে মুখে মুখে বেতন পরিশোধের কথা ছড়িয়ে পড়ে। এমম অবস্থায় সবাই বেতন দিতে ছুটে আসেন ব্যাংকে। একসঙ্গে অভিভাবকরা চলে আসায় বেতন নিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তারাও।

viqarunnissa

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে অভিভাবকরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হঠাৎ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ কি এমন ঘোষণা দিতে পারে? তিন মাসের বেতন একসঙ্গে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা। টাকার ব্যবস্থা করতেও তো সময় লাগে।

আকস্মিক এ নোটিশে টাকার জোগাড় করে তারা পড়ি কি মরি করে ছুটে এসেছেন। গরমে লম্বা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে কষ্ট করছেন। ব্যাংকের ভেতরেই ক্ষুব্ধ কয়েকজন অভিভাবককে নিজেদের মোবাইল নম্বর লিখতে দেখা যায়। তারা বলেন, এভাবে হঠাৎ করে কেন বেতন দিতে বলা হলো সে ব্যাপারে আমরা প্রিন্সিপাল আপার সঙ্গে কথা বলব।

viqarunnissa

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক অভিভাবক নির্ধারিত সময়ে বেতন পরিশোধ করতে বিলম্ব করায় এমন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু সব শিক্ষক এমপিওভুক্ত নয়, তাই শিক্ষার্থীদের বেতন আদায় করে অনেক শিক্ষকের বেতন পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু অনেক অভিভাবক মাসের পর মাস বেতন পরিশোধ করেন না। কয়েক মাসের বেতন পাওনা হলে সে অর্থ নানাভাবে মওকুফ করার চেষ্টা করেন। এসব কারণে এমন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।’

অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম আরও বলেন, ‘যাদের সমস্যা থাকবে তাদের বিষয় শিথিলযোগ্য। প্রয়োজনে টিউশন ফি ও বেতন পরিশোধের সময় আরও বাড়ানো হবে।’

মাহবুব হাসান নামে একজন অভিভাবক বলেন, ‘বর্তমান ডিজিটাল সরকারের আমলে অনলাইনে বেতন নেয়া উচিত। নির্দিষ্ট কোনো ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখায় বেতন পরিশোধের বদলে যেকোনো ব্যাংকে অনলাইনে বেতন দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।’

ব্যাংক এশিয়ার কর্তব্যরত সহকারী ম্যানেজার জানান, স্কুল থেকে তারা আজকের মধ্যে বেতন নেয়ার কোনো নির্দেশ পাননি। কিন্তু অভিভাবকরা বলছেন, স্কুলের শিক্ষিকারা ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে বেতন না দিলে প্রবেশপত্র দেবেন না বলে বলেছেন। তাই এত ভিড়।

অনলাইন ব্যাংকিং করা সম্ভব কি না- জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা জানান, তাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে এ জন্য অনেক টাকা খরচ করে সফটওয়্যার বসাতে হবে।

এমইউ/এমএইচএম/এনডিএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।