প্রাথমিকেও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক তৈরি করা হবে। বাড়তি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের বাংলা, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে অভিজ্ঞ করা হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী জুলাই মাস থেকে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকসহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও প্রাথমিক স্তরে একজন শিক্ষককে সব বিষয় পড়াতে হচ্ছে। এ কারণে বিষয় অনুযায়ী দক্ষ শিক্ষক গড়ে তোলা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনো মতে চলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।
বিষয়টিকে আমলে নিয়ে বর্তমানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক তৈরি করা হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলা, ইংরেজি ও অংকের শিক্ষক তৈরি করা হবে। বর্তমানে যেসব শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন, তাদের বাড়তি প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশেষ একটি বিষয়ে পারদর্শী করা হবে। এরপর তারা সম্পূরক বিষয়ে ক্লাস নেবেন। তবে বিজ্ঞানের জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। এ কারণে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় আলাদাভাবে বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।
সচিব বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে পড়ছে। একজন শিক্ষক সব বিষয়ের ক্লাস নেয়ায় শিক্ষার্থীরা কে, কোন বিষয়ে দুর্বল তা শনাক্ত করা কঠিন হচ্ছে। এর ফলে দুর্বল শিক্ষার্থীরা আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে তিন ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলা, সমাজ ও ধর্ম বিষয়ে একজন, বিজ্ঞান বিষয়ে একজন ও ইংরেজি বিষয়ে একজন করে শিক্ষক তৈরি করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সারাদেশে বর্তমানে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যাতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। আর এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে ৫৫টি জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অভিজ্ঞ করে তোলা হয়ে থাকে।
কর্মকর্তারা জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকে একটি, প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ২টি এবং ৩য় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট পাঁচটি বিষয় পড়ানো হয়। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের তিন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বাংলা শিক্ষক বাংলা, সমাজ ও ধর্ম, ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক বিজ্ঞান বিষয় পড়াবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক তৈরিতে ৫৫টি পিটিআইয়ের মাধ্যমে শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যিনি যে বিষয় পড়াতে আগ্রহী হবেন তাকে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক তৈরিতে শিক্ষকদের মাসব্যাপী প্রশিক্ষক দেয়া হবে। যেসব জেলায় এখনও পিটিআই গড়ে তোলা হয়নি পার্শ্ববর্তী জেলায় (যেখানে পিটিআই রয়েছে) তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি অর্ধশত পিটিআই প্রশিক্ষককে (ইন্সট্রাকটর) ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ইংরেজি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। যারা ইংরেজি পড়াতে আগ্রহী তাদের বাড়তি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ বিষয়ে পড়ানোর ওপর অভিজ্ঞ করে তুলবেন। এভাবে তিন ক্যাটাগরিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক তৈরি করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, প্রাথমিকে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক তৈরি হলে বাংলা, ইংরেজি ও অংকে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা কমে যাবে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একজন শিক্ষক একই বিষয়ে পাঠদান করবেন। এর ফলে কোন শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে দুর্বল- শিক্ষক তা সহজেই শনাক্ত করে বাড়তি ক্লাসের মাধ্যমে তা কাটিয়ে তুলতে সক্ষম হবেন।
তিনি বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসজিডি)-৪ বাস্তবায়নে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। তার মধ্যে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক কার্যক্রমও রয়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী জুলাইয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তা কার্যকর করা হবে।
এমএইচএম/এমএমজেড/এমএস