প্রাথমিকে চার ধাপে নিয়োগ পরীক্ষা পেছানোয় ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা
নানা কারণে এ পর্যন্ত চার বার পিছিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। এভাবে বারবার পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ায় প্রার্থীরা ক্ষুব্ধ। পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়ে তাদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় কেড়ে নিয়ে হতাশার মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ লিখিত পরীক্ষার সময় এ পর্যন্ত চার দফায় পেছানো হয়েছে। আগামী ১৭ মে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ দিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত হওয়া একটি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হওয়ায় আবারও পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে ১০ মে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তারও আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা শুরুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মন্ত্রণালয়। তবে এসএসসি পরীক্ষার কারণে সেটি পিছিয়ে মার্চে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
গত ১৫ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের এক সভায় নিয়োগ পরীক্ষা ১৫ মার্চ শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে অধিদফতরকে নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু ১৩ মার্চ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯ পালিত হওয়ায় ওই সময়ও পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে বারবার পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় নিয়োগ প্রত্যাশীরা ক্ষুব্ধ। তাদের অভিযোগ, নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে বারবার কেন সময় ঘোষণা দিয়ে তা পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে? এতে তাদের মানসিক বিপর্যয় ঘটে। একটি পরীক্ষার প্রস্তুতি চলাকালীন আরেকটি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হয় না। নিয়োগের নামে এক ধরনের হয়রানি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রার্থী জাগো নিউজকে বলেন, গত দুই বছর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু এ পর্যন্ত চার দফায় লিখিত পরীক্ষার সময় ঘোষণা করা হলেও তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। দিনরাত পড়ালেখা করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিলেও তা বিফলে যাচ্ছে।
তারা বলেন, দেশে বেকারত্বের হার বেশি হওয়ায় নিয়োগকর্তারা নিয়োগ দেয়ার নামে চাকরি প্রত্যাশীদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় নষ্ট করছে। এর কোনো বিচার বা জবাবদিহিতা না থাকায় এসব ঘটনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে চাকরির নির্ধারিত বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে অনেকের।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সহকারী শিক্ষক ২০১৮ কার্যক্রমে প্রায় ১২ হাজার পদের বিপরীতে ২৪ লাখের বেশি আবেদন হওয়ায় পরীক্ষা আয়োজকরা বিপাকে পড়েন। প্রশ্নফাঁস ছাড়া একসঙ্গে এতো প্রার্থীর পরীক্ষা আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়েক দফায় এটি নিয়ে বুয়েটসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে পরীক্ষার দিন সময় ঠিক করা হলেও তা চার দফায় পিছিয়ে দিয়ে পঞ্চম দফায় সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২৪ ও ৩১ মে এবং তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে ১৪ ও ২১ জুন আয়োজন করা হবে। সকল পরীক্ষা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়।
এ বিষয়ে ডিপিই’র মহাপরিচালক বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আগামী ১৭ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য আমাদের প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত হওয়া একটি পরীক্ষা ১৭ মে আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় নিয়োগ পরীক্ষা আবারও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগেও সঙ্গত কারণে একাধিকবার নিয়োগ পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, চারটি ধাপে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। ঈদের আগে শেষ করা হবে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা। সেটি নিয়েই আমরা কাজ করছি। প্রয়োজন হলে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের পরীক্ষা একটু পিছিয়ে দেয়া হতে পারে বলেও জানান মহাপরিচালক।
জানা গেছে, এবার নিয়োগ পরীক্ষা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তত্ত্বাবধানে নেয়া হবে। নির্ধারিত জেলায় পরীক্ষার আগের রাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে প্রশ্নপত্রের সব সেট পাঠানো হবে। পরীক্ষার দিন সকাল ৮টায় প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে তা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হবে। এবার পরীক্ষা নেয়া হবে পৌর এলাকার মধ্যে।
আবেদনকারীর আসন অত্যাধুনিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেবে বুয়েট। একই সঙ্গে আবেদনকারীর আসন বণ্টন অনুযায়ী প্রশ্নের সেট নির্ধারণ করে দেবে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এবার ৮ সেট প্রশ্ন তৈরি করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় সময় ঘোষণা করা হলেও তা কয়েক দফায় পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনেক কাজ করতে হয়। অনেক সময় বড় কোনো আয়োজনের ফলে নিয়োগ পরীক্ষাসহ ছোট বিষয়গুলো আয়োজনের সময় নির্ধারিত থাকলেও তা বাধ্য হয়ে পিছিয়ে দিতে হচ্ছে।
সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সপ্তাহ উদযাপন, এসএসসি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন আয়োজনের কারণে নিয়োগ পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এ পরীক্ষা আয়োজনে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে আগামী ২৪ মে থেকে। পাশাপাশি এবার ২৪ লাখের বেশি আবেদনকারী হওয়ায় অনেক সতর্কতার সঙ্গে এ পরীক্ষা আয়োজন করতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন সচিব।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ জুলাই সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ১ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন কার্যক্রম শেষ হয়। ১২ হাজার আসনের বিপরীতে সারাদেশ থেকে মোট ২৪ লাখ ৫ জন প্রার্থী আবেদন করেন। সে হিসাবে প্রতি আসনে লড়বেন ২০০ জন প্রার্থী।
এমএইচএম/এমএসএইচ/পিআর