মঙ্গলবার থেকে অনশনে বসবেন ইবতেদায়ির শিক্ষকরা
বেতন-ভাতার দাবিতে ষষ্ঠ দিনের মতো রোববার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইবতেদায়ি স্বতন্ত্র মাদরাসা শিক্ষকরা। আগামীকালের (সোমবার) মধ্যে দাবি না মানা হলে মঙ্গলবার থেকে আমরণ অনশন করার হুমকি দিয়েছেন সমিতির সভাপতি কাজী ফয়জুর রহমান।
রোববার (৭ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ৬ষ্ঠ দিনের অবস্থান ধর্মঘট পালনকালে জাগো নিউজকে তিনি এ কথা বলেন।
কাজী ফয়জুর রহমান বলেন, 'অবস্থান কর্মসূচির ছয়দিন চললেও এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো কর্মকর্তা আমাদের কাছে এসে আশ্বস্ত করেননি। আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা আমাদের জানিয়েছেন আপনাদের বিষয়টি আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি গোচরের চেষ্টা করছি। এ কারণে বাধ্য হয়ে আমরণ অনশন পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছেন।
মঙ্গলবার থেকে ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের অনশন কর্মসূচি শুরু হবে উল্লেখ তিনি বলেন, আমরা বেতন না পেয়ে ১৫-২০ বছর ধরে চাকরি করে আসছি। বেতন না পাওয়ায় মানবেতন জীবন যাপন করে দিন পার করতে হয়। বাধ্য হয়ে জাতীয়করণের দাবিতে আগেও আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম। তখন সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়ায় আমরা আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যাই।
এই শিক্ষক নেতা বলেন, পরবর্তীতে গত এক বছরেও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ছয়দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে ধুলোবালির ওপর বসে যৌক্তিক দাবি আদায়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি। এতে দেশের বিভিন্ন জেলার তিন-চার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী যোগ দিয়েছেন।
আন্দোলন আরও জোরালো করতে আমরা অনশন ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে সরকার থেকে সন্তোষজনক কোনো আশ্বাস দেয়া হলে আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যাব।
আন্দোলনকারীরা বলেন, '২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১৬ দিন শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি থেকে অনশন পালন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষা সচিব সেখানে উপস্থিত হয়ে দাবি পূরণে তাদের আশ্বস্ত করেন। অথচ এরপর এক বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তাদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়নি। এ কারণে সবাই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
তারা আরও বলেন, ১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রে রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে বিগত সরকারের সময়ে ধাপে ধাপে বেতন বৃদ্ধি করা হয়। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি বর্তমান মহাজোট সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকরাও সরকারের সব কাজে অংশ নেন ।
তারা অভিযোগ করেন অথচ মাস শেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেলেও ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকরা তেমন বেতন পান না। তবুও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন তারা।
আন্দোলনকারীরা জানান, বর্তমানে দেশের ১ হাজার ৫১৯টি মাদরাসার প্রধান শিক্ষকরা সর্বসাকুল্যে ২৫০০ টাকা এবং সহকারি শিক্ষকরা ২৩০০ টাকা ভাতা পান। বাকি প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মাদরাসার শিক্ষক প্রায় ৩৪ বছর যাবত বেতন-ভাতা হতে বঞ্চিত রয়েছেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মো. তৌহিদুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, শিক্ষক মিজানুর রহমান, আলাউদ্দিনসহ বিভিন্ন স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন ।
এমএইচএম/এমএমজেড/পিআর