জাতীয়করণ হলেও ‘বেসরকারি’ তারা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৩৭ পিএম, ০৬ এপ্রিল ২০১৯

>> ২০১৮ সালের আগস্টে সরকারিকরণের আদেশ
>> উৎকণ্ঠায় ২৯৯ কলেজের ১২ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী
>> বাড়তি জনবল যুক্ত করে দ্রুত কাজ সম্পন্নের উদ্যোগ

সরকারিকরণের দীর্ঘসূত্রতায় ২৯৯ কলেজের প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। খুবই ধীরগতিতে কাজ হওয়ায় ইতোমধ্যে সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারী কোনো সুবিধা ছাড়াই অবসরে গেছেন। যারা এখনও অবসরে যাননি তারা ‘সরকারি সুযোগ-সুবিধা’ পাওয়ার স্বপ্নে দিনাতিপাত করছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, জনবল সরকারিকরণের কাজ ধীরগতিতে চলছে। এভাবে চলতে থাকলে কাজ শেষ করতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে। এ সময় আরও সহস্রাধিক শিক্ষক অবসরে যাবেন। ফলে শিক্ষক সংকট তৈরি হবে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল থেকে কলেজ সরকারিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সর্বশেষ তালিকাভুক্ত হয় ২০১৬ সালের আগস্টে। ডিড অব গিফট হয় ২০১৭ সালের প্রথম দিকে। সরকারিকরণের আদেশ জারি হয় ২০১৮ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে।

২০১৮ সালের ১২ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সারাদেশের ২৭১টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়। তিন ধাপে সরকারি এ আদেশ জারি হয়। পরবর্তীতে সরকারিকরণ হওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯৯টি। এসব কলেজ জাতীয়করণ হওয়ায় সেখানকার শিক্ষকদের মর্যাদা কী হবে তা নিয়ে গত ৩১ জুলাই ‘সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮’ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আত্তীকৃত কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহুরুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকারিকরণের প্রস্তুতি চলছে তিন বছর ধরে। প্রতিষ্ঠান সরকারি হয়েছে সাত মাস আগে। কিন্তু আমরা এখনও বেসরকারিই রয়ে গেছি।’

জানা গেছে, সব কলেজে সমন্বিত পদ সৃজন করতে গত ২৩ অক্টোবর ঢাকা জেলার চারটি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে সভা করে। সভায় কলেজগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণ কার্যক্রম স্বচ্ছ, ত্রুটিমুক্ত এবং দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কলেজের ১৫ দফা তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব, যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিবের প্রত্যয়নসহ পাঠাতে মত দেয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে শিক্ষা অধিদফতর থেকে কলেজগুলোর সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ সৃষ্টির প্রস্তাবনা পাঠানো হলে জনপ্রশাসন একই সঙ্গে জনবলের সব কাগজপত্র পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সে আলোকে মাউশি থেকে কলেজগুলোতে নতুন করে তথ্য চাওয়া হচ্ছে। এ তথ্যের সঙ্গে আগের তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। নতুন তথ্য যোগ করা হচ্ছে, যাচাই-বাছাই চলছে। মাউশির কলেজ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত কাজ করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য মাত্র তিনজন সহকারী পরিচালক রয়েছেন।

‘তবে কাজ দ্রুত করার জন্য আরও নয় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাকে সংযুক্ত দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মাত্র ১০ কলেজের যাচাই-বাছাই কাজ শেষ হয়েছে। তবে শাখা থেকে জানানো হয়েছে, প্রতি মাসের ১৫ ও ৩০ তারিখের মধ্যে অন্তত ১৮টি কলেজের পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মাউশিকে নির্দেশ দেয়া হলেও এর চেয়ে বেশি সংখ্যক কলেজের পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’

মাউশির এক কর্মকর্তা জানান, এত সংখ্যক কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের কোন প্রক্রিয়ায় দ্রুত সরকারি করা যায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সময় লেগে যায়। পুরাতন পদ্ধতিতে সরকারিকৃত ২৯৯ কলেজের পদ সৃজন করতে আগের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। এ প্রক্রিয়ায় অসংখ্য শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি হওয়ার সুবিধাবঞ্চিত হয়ে অবসরে চলে যাবেন। যে কারণে দ্রুত পদ সৃজন করতে নানামুখী চিন্তাভাবনা চলছে।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, জনবল কাঠামো সরকারিকরণের জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে। এ কাজের জন্য বাড়তি জনবল সংযুক্ত করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সব কলেজের তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারব।

এমএইচএম/এএইচ/এমএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।