জেএসসি-জেডিসির ফলাফলে লাখো পরীক্ষার্থীর আপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০২ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফলাফলে অসন্তোষ প্রায় ৯৫ হাজার পরীক্ষার্থীর। প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ায় খাতা পুনঃনিরীক্ষণে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষার্থীরা বেশি আবেদন করেছে। বিষয়ভিত্তিক আবেদনের র্শীষে রয়েছে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়। বিষয়ভিত্তিক ৭৮ বা ৭৯ নম্বর পেয়েও কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী আবেদন করেছে। বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৮ শিক্ষাবর্ষে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় মোট ২২ লাখ ৩০ হাজার ৮২৯ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। এ বছর গড় পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৮ হাজার ৯৫। ২০১৭ সালে পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে পাসের হার ২ দশমিক ১৮ শতাংশ বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা।

সর্বশেষ জেএসসি-জেডিসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৫ হাজার ৭৩১। যা গত বছর ছিল এক লাখ ৯১ হাজার ৬২৮ জন। অর্থাৎ এক বছর ব্যবধানে জিপিএ-৫ কমেছে ৯৯ হাজার ৮৯৭। এ কারণে প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ায় অনেকে বোর্ড চ্যালেঞ্জ করেছে বলে জানা গেছে।

অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের ধারণা পুনঃনিরীক্ষণে এক বা দুই নম্বর বাড়লেই ফেল থেকে পাস করবেন। আবার অনেকে জিপিএ-৫ বা সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাবেন। তবে বোর্ড কর্মকর্তারা দাবি করেন, সব বিষয়ে নম্বর দেখার সুযোগ করে দেয়ার কারণেই আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি এবার চতুর্থ বিষয় যোগ না হওয়ায় জিপিএ-৫ কমে গেছে। এ কারণে আবেদন বেশি এসেছে। ২৪ জানুয়ারি পুনঃনিরীক্ষণে ফল প্রকাশ করা হবে বলে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। আবেদন করতে প্রতি বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের ১২৫ টাকা করে ফি দিতে হয়েছে। এতে বোর্ডগুলোর অন্তত আড়াই কোটি টাকা বাড়তি আয় হয়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে ফল পুনঃনিরীক্ষণের এসব আবেদন এসেছে।

সূত্র জানায়, জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল পুনরায় মূল্যায়নে ঢাকা বোর্ডে ৩৬ হাজার ২১৬ জন আবেদন করেছেন। তার মধ্যে ৫৬ হাজার ৩২১টি উত্তরপত্র রয়েছে। ইংরেজি বিষয়ে আবেদন ১৫ হাজার ৬৫৪টি, গণিত বিষয়ে ১২ হাজার ৩৩১টি ও বিজ্ঞান বিষয়ে ১০ হাজার ৫০২টি আবেদন জমা হয়েছে।

কুমিল্লা বোর্ডে ৯ হাজার ৮৫৩ পরীক্ষার্থী ১২ হাজার ৮৫৩টি আবেদন করেছে। এর মধ্যে ইংরেজিতে ২ হাজার ৯০৪টি ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচিতিতে ২ হাজার ৫৬০টি ও গণিতে ২ হাজার ৩৫৫টি। যশোর বোর্ডে ৭ হাজার ১২০ আবেদনকারী ১০ হাজার ৫৬৩টি বিষয়ে আবেদন করেছে। এ বোর্ডে গণিতে ৩ হাজার ৬৫৯টি, ইংরেজি বিষয়ে ২ হাজার ৭৫০টি ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচিতিতে ২ হাজার ৩২০টি আবেদন জমা পড়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮ হাজার ৪০৮ পরীক্ষার্থী ১২ হাজার ৪০৮টি বিষয়ে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে গণিতে তিন হাজার ৬৩০টি, ইংরেজিতে ২ হাজার ৫৫০টি ও বিজ্ঞান বিষয়ে ২ হাজার ১২০টি আবেদন রয়েছে।

সিলেট বোর্ডে ৬ হাজার ৭৫০টি পরীক্ষার্থী আবেদন করেছে। এ বোর্ডেও গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে সর্বোচ্চ আবেদন। এ সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের বেশি রয়েছে। বরিশাল বোর্ডে তিন হাজার ৫০১ পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ৪৬৫টি আবেদন করেছে। এর মধ্যে বাংলা বিষয়ে ৭৪৯টি, সাধারণ বিজ্ঞানে ৬৭০ ও গণিতে ৫৩৭টি আবেদন রয়েছে।

রাজশাহী বোর্ডে ৭ হাজার ৯৪৩ আবেদনকারীর অভিযোগ জমা হয়েছে। তবে এ বোর্ডের উত্তরপত্রের সংখ্যা জানা যায়নি। তার মধ্যে গণিত বিষয়ে ২ হাজার ৮৩৭টি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি বিষয়ে ১১৩৫টি ও সাধারণ বিজ্ঞানে ১০১৬টি আবেদন রয়েছে।

দিনাজপুর বোর্ডে ছয় হাজার ২৭১ পরীক্ষার্থী ১০ হাজার ৪২৩টিতে আবেদন করেছে। তার মধ্যে ইংরেজি বিষয়ে ৩ হাজার ৭৩টি, বিজ্ঞানে ২ হাজার ৩১২টি ও গণিতে ১ হাজার ৭৯৬টি আবেদন রয়েছে। সাধারণ আট বোর্ডে সব মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ করা আবেদনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৬ হাজার ৬২টি।

২০১৮ শিক্ষাবর্ষের জেএসসি-জেডিসির বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের দুটি পত্রকে একত্রিত করা হয়। এ কারণে বাংলা ২য় পত্র ও ইংরেজি ২য় পত্র বিষয়ের আলাদাভাবে পরীক্ষা হয়নি। তবে প্রায় সব বোর্ডে বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞানে বেশি পুনঃনিরীক্ষণে আবেদন এসেছে।

অন্যদিকে, মাদরাসা বোর্ডের অধীন জেডিসিতে ৮ হাজার ৮৭০ পরীক্ষার্থী আবেদন করেছে। এ বোর্ডে গণিত ও আরবি বিষয়ে আবেদনের সংখ্যা বেশি। সবকয়টি বোর্ড মিলে মোট ৯৪ হাজার ৯৩২ পরীক্ষার্থী আবেদন করেছে।

ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, যারা প্রত্যাশা অনুযায়ী জিপিএ-৫ পায়নি বা ফেল করেছে তারাই আবেদন করেছে। বিগত বছরের তুলনায় ঢাকা বোর্ডে আবেদনের সংখ্যা বেশি নয়।

তিনি আরও বলেন, প্রথা অনুযায়ী ফল প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশিত হয়। সে অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা জানান, পুনঃনিরীক্ষণে সাধারণত চারটি বিষয় দেখা হয়। এগুলো হলো- উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি-না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক হয়েছে কি-না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কি-না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট সঠিকভাবে করা হয়েছে কি-না। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয়।

বোর্ড কর্মকর্তারা বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র পুনরায় মূল্যায়ন হয় না। পুনঃনিরীক্ষণে যেসব ফল পরিবর্তন হয় তা মূলত; পরীক্ষকদের ভুলের কারণে। দেখা গেছে, একজন পরীক্ষার্থী ৮২ নম্বর পেয়েছে সেটাকে পরীক্ষক ওএমআর শিটে ২৮ পূরণ করেছে। ফলে শিক্ষার্থী ফেল করে।

তবে পরীক্ষক ও প্রধানপরীক্ষকদের অনেক উদাসীনতা রয়েছে। অনেক পরীক্ষক রয়েছে নিজেরা উত্তরপত্র মূল্যায়ন না করে অন্যদের দিয়ে মূল্যায়ন করান। ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের দুই প্রধান পরীক্ষকের ভুলের কারণে হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে এক হাজার ১৪১ জন ফেল করে। নৈর্ব্যক্তিক উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় দুই প্রধান পরীক্ষক ‘খ’ ও ‘গ’ সেট গুলিয়ে ফেলেন। তারা ‘খ’ সেট প্রশ্নের মূল্যায়ন করেন ‘গ’ সেটের উত্তরপত্রের মাধ্যমে আর ‘গ’ সেটের মূল্যায়ন করেন ‘খ’ সেটের উত্তরপত্রের মাধ্যমে। ফলে ‘খ’ সেটে যারা পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাদের উত্তরের সঙ্গে প্রধান পরীক্ষকের ভুল উত্তরমালার সমন্বয় হয়নি। যার খেসারত দিতে হয় পরীক্ষার্থীদের।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ ডিসেম্বর জেএসসি-জেডিসির ফলাফল প্রকাশিত হয়। উভয় পরীক্ষার ফলাফলের পাসের হারে কিছুটা বাড়লেও সবগুলো সূচকেই গতবারের তুলনায় খারাপ হয়েছে। ২০১৮ সালে মেয়েদের পাসের হার ৮৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং ছেলেদের ৮৫ দশমিক ১২ শতাংশ। যা গত বছর ছিল যথাক্রমে ৮৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ৮৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ ছিল।

এমএইচএম/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।