মাতৃত্বের সম্পর্কে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভিকারুননিসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সংকট কাটিয়ে উঠতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বুধবার প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তায় বেইলি রোডের মূল ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে দুই ঘণ্টাব্যাপী মানসিক পরামর্শ প্রদান করা হয়।
কাউন্সেলিংয়ের শুরুতে শিক্ষার্থীদের মোমবাতি প্রজ্বলন করে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সিটে বসা শিক্ষকরা উঠে এসে শিক্ষার্থীদের হাতে হাত রেখে পরম স্নেহ আর মমতাময়ী দৃষ্টিতে নতুনভাবে উভয়কে বরণ করে নেয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষক তাদের স্নেহের ছাত্রীদের বুকে জড়িয়ে ধরেন।
মানসিক পরামর্শ দিতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন খুঁটি-নাটি বিষয়ের ওপর ব্যাখ্যা করেন বিশেষজ্ঞরা। এ সময় নতুন করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাতৃত্বের সম্পর্ক গড়তে শিক্ষকরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি মোসতারি সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, সম্প্রতি নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ, আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরেছে বলে মনে করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মানসিক শক্তি বাড়বে, ভেতরে জমা বেদনা-দুঃখ ভুলে নতুনভাবে নিজেকে জানতে শিখবে। উন্নতি হবে মনের আবেগ-অনুভূতি। নতুন করে শিক্ষক, অভিভাবক, আত্মীয়স্বজন, বন্ধ-বান্ধবদের চিন্তা-ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। জীবনে জয়-পরাজয় রয়েছে, সকল বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয় সেই বিষয়টিগুলো বোঝানো হবে।
জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হাসিনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সকল শাখার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলাদাভাবে কাউন্সেলিং করানো হবে। প্রথমে মূল শাখার স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের চারজন সিনিয়র-জুনিয়র শিক্ষক কাউন্সিলিং করাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে সকল শাখায় বিশেষজ্ঞ একটি দল গিয়ে এ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। প্রতি মাসে একবার করে কাউন্সেলিং কার্যক্রম করা হবে।
কাউন্সেলিংয়ে কী শেখানো হচ্ছে জানতে চাইলে স্কুল পর্যায়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আজ নতুন করে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। জীবনে সকল দুঃখ-কষ্ট ও হতাশ কীভাবে ভুলে এগিয়ে যাওয়া যাও তা শেখানো হয়েছে। আঘাত পেলে উত্তেজিত না হয়ে কীভাবে শান্ত ও স্বাভাবিক থাকা যায় সেটিও আমাদের শেখানো হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে আমাদের কাজে আসবে।
কাউন্সেলিং কার্যক্রম পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের চারজন শিক্ষক ও ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষক। তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. মেহজাবীন হকের নেতৃত্বে অধ্যাপক শাহিন ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ফেরদৌসী, প্রভাষক উম্মে কাউসার লতাসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুইজন শিক্ষক রয়েছেন।
এমএইচএম/বিএ