জঙ্গি তৎপরতা ঠেকাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স বাড়ছে
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মনে করে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জঙ্গি তৎপরতা ঠেকাতে সেমিস্টার প্রতি কোর্স বাড়ানো প্রয়োজন। সংস্থাটির যুক্তি, সারাবছর একটি সেমিস্টারে মাত্র দুটি কোর্স থাকায় তারা অনেক অবসর সময় পার করে থাকেন। অবসরে অনেক ছাত্রছাত্রী জঙ্গি কর্মকাণ্ডসহ নানারকম অপকর্মের সঙ্গে লিপ্ত হয়ে পড়েন। তাই শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক এসব কর্মকাণ্ড থেকে ফেরাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার প্রতি তিনটি কোর্স চালু করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৪তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এ প্রস্তাব করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিবেদনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস বন্ধে বিশেষ নজরদারি পদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশুলোর মতো উন্নত প্রযুক্তি, কঠিন নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা দরকার বলে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা একটি সেমিস্টারে শুধুমাত্র দুটি কোর্স নিয়ে পূর্ণকালীন লেখাপড়া করছেন। এর ফলে তারা অবসর সময় পাচ্ছেন বেশি। এই অবসরে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার বাইরে অন্যদিকে সময় ব্যয় করার সুযোগ পাচ্ছে। সম্প্রতি একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই শিক্ষার্থীদের সারাবছর লেখাপড়ায় ব্যস্ত রাখতে পাঠ্যক্রমের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রতি সেমিস্টারে কমপক্ষে তিনটি কোর্স নেয়া বাধ্যতামূলক করা দরকার।
শরীরচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত বাড়ানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা দিতে বলেছে ইউজিসি। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে কোনো শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী যাতে সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এজন্য যুগোপযোগী গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি ও অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়া পদ্ধতি চালু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে হয়রানি এবং ব্যয় কমে যাবে।
অন্যদিকে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে কতকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। ইউজিসি বলেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নফাঁস রোধে বিশেষ নজরদারি প্রবর্তন বা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে সকল দেশে উন্নত প্রযুক্তি ও কঠিন নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা অবলম্বন করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পরীক্ষায় প্রশ্নগুলোকে তদরূপ নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা অনুসরণ করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। যে যে খাতে আমরা এগিয়ে বা পিছিয়ে আছি সেসব বিষয় তুলে ধরে তা সংশোধনের জন্য ইউজিসি বাৎসরিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে জঙ্গি তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী জঙ্গির মতো সহিংস কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আহত-নিহতেরও ঘটনা ঘটেছে। সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা আমাদের সকলের দায়িত্ব।’
ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে বছরে একটি সেমিস্টারে দুটি কোর্স পড়ানো হয়। এতে তারা অনেক অবসর সময় পেয়ে থাকে। এই অবসরে অনেকে খারাপ বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে কিছুটা ক্রটি থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে মন্তব্য করে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি সেমিস্টারে তিনটি কোর্স চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে তাদের পড়ালেখা বেড়ে যাবে, অবসর সময় কম পাবে। পড়ালেখার বাইরে অন্যদিকে ধাবিত হওয়ার সুযোগ কম থাকবে।’
ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস রোধে আরও নিরাপত্তা বাড়ানো জরুরি উল্লেখ করে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন পাবলিক বিশবিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটির ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পাওয়ায় তা বাতিল করে পুনরায় ১৬ নভেম্বর পরীক্ষা আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার জন্যই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে গতানুগতিক পদ্ধতি বাতিল করে প্রশ্নফাঁস রোধে প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবলম্বনের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।’
এমএইচএম/এসআর/পিআর