পাস কোর্সে আগ্রহী নন শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:০৫ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

>> ইউজিসির ৪৪তম বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ
>> বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস বন্ধে বিশেষ নজরদারি
>> উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসম্মত শিক্ষক সংকট
>> বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সার্ভিস রুল নেই

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে পাস কোর্সে ভর্তি হতে চান না শিক্ষার্থীরা। অধিকাংশ কলেজে আসন শূন্য থাকছে। এ কারণে কলেজে পাস কোর্সের সিট কমানো প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

একই সঙ্গে ডিগ্রি কোর্সের পরিবর্তে দেশের কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে গ্রাজুয়েট তৈরি করে মানবসম্পদ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চলতি সংসদ অধিবেশনে এটি উপস্থাপনের কথা আছে। প্রতিবেদনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস বন্ধে বিশেষ নজরদারি পদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মতো উন্নত প্রযুক্তি, কঠিন নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেশের উচ্চ শিক্ষার সমস্যা, সীমাবদ্ধতা, সংকট, সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। বলা হয়, শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল নেই। উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নে পৃথক বেতন স্কেল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া দরকার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সার্বিকভাবে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট প্রকট। অনেক নতুন ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নেই। পাঠদান করেন জুনিয়র শিক্ষকরা। সরকারি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যান্য সরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব রয়েছে। বিশেষ করে জাতীয়, উন্মুক্ত ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক নতুন সরকারি ও অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষক সংকট বিরাজ করছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানত প্রভাষক ও জুনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

শিক্ষক সংকটের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর পদগুলোতে স্থায়ীভাবে শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিতকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। অভিজ্ঞ শিক্ষকরা যেন অপেক্ষাকৃত নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানে আগ্রহী হন, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরির তাগিদ দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইউজিসি দেশের উচ্চ শিক্ষা পরিস্থিতি সারাবছর পরিবীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে উচ্চ শিক্ষা পরিস্থিতির ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়ে থাকে। তার আলোকে সকল সমস্যা এবং তার সমাধানের চেষ্টা করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে উচ্চ শিক্ষায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। প্রায় চার মিলিয়ন ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছে। একটি জাতির এগিয়ে যাওয়ার বড় নিদর্শন এটি। তবে এই এগিয়ে যাওয়ার পথে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে থাকে, তা দূর করা দরকার। এসব বিষয় বার্ষিক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে মানসম্মত শিক্ষক সংকটের দিকটা বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে প্রয়োজনীয় উচ্চ ডিগ্রিসম্পন্ন জনবল তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষকদের বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। ফলে উচ্চতর গবেষণা পরিচালনার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন তা তারা পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে দেশে দক্ষ শিক্ষক তৈরির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে প্রধানত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্বমানের একটি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় অতিসত্বর স্থাপন করা উচিত। এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করবে। পাশাপাশি দেশের আর্থ-সামাজিক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করবে, যাতে গবেষণালব্ধ ফলাফল দেশের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য এখনও সার্ভিস রুল প্রণীত হয়নি। ফলে শিক্ষকদের চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। এসব কারণে মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষকরা সুযোগ পেলেই দেশত্যাগ, অথবা অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছে। এতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব দেখা দিচ্ছে উচ্চ শিক্ষাস্তরে।

এতে বলা হয়, বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। নেই গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রম কিছুটা বাড়লেও আশানুরূপ পর্যায়ে যায়নি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইতোমধ্যে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। ২০২১, ২০৩০ ও ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই।

সুপারিশে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকরা যৌথভাবে গবেষণা পরিচালনা করতে পারেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা এবং প্রণীত ‘স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন ২০১৮-২০৩০’ বাস্তবায়ন করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা আসবে বলে মনে করে ইউজিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভালো দিক হলো সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিজ্ঞান শিক্ষার দিকে আগ্রহ কম বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এমন প্রবণতা ভবিষ্যতে নতুন নতুন উদ্ভাবনের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

এমএইচএম/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।