খাতা চ্যালেঞ্জ : জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৩১, পাস ৭৪১
সারা দেশের ১০টি শিক্ষাবোর্ডে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। বৃহস্পতিবার আলাদা আলাদা সব বোর্ড থেকে এ ফল প্রকাশ করা হয়। এতে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে।
অন্যদিকে, নতুন করে বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা পাশপাাশি ফেল থেকে পাসের ঘটনাও ঘটেছে। এরমধ্যে ফেল থেকে জিপিএ-৫ পাওয়ার শিক্ষার্থীও রয়েছে।
বোর্ডগুলোর প্রাপ্ত তথ্য মতে, চলতি বছর ১০টি শিক্ষাবোর্ডে ২ লাখ ১১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ৪ লাখ ১৪ হাজার ৫১৬টি পত্রের প্রাপ্ত নম্বর পরিবর্তনের জন্য আবেদন করে। এর মধ্যে থেকে ৪৮৯৭ পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৩১ জন, খাতা চ্যালেঞ্জ করে ফেল থেকে পাস করেছে ৭৪১ জন। বাকীদের বিভিন্ন গ্রেডে ফল পরিবর্তন হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাতা দেখায় শিক্ষকদের অনীহা, অবহেলা বাড়ার কারণে প্রতি বছর খাতা চ্যালেঞ্জ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় খাতা চ্যালেঞ্জের পরিমাণ বাড়ালেও এবার ফল পরিবর্তনের সংখ্যা কমেছে। এজন্য এবার মডেল পদ্ধতিতে খাতা দেখায় ভুলের পরিমাণ কমেছে।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, পরীক্ষকদের মধ্যে খাতা দেখার আগ্রহ ও পদ্ধতি দুটি পরিবর্তন হয়েছে। গত দুই বছর ধরে মডেল পদ্ধতিতে খাতা দেখা এবং পরীক্ষকদের খাতা প্রধান পরীক্ষকরা পুনরায় দেখার বাধ্যবাধকতা কারণে খাতায় ভুলের পরিমাণ কমেছে।
তিনি বলেন, খাতায় যে চারটি ভুলের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো এবার সেই জায়গা হাত দেয়া হয়েছে। আস্তে আস্তে খাতা দেখায় শৃঙ্খলা ফিরবে।
বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে এসএসসি ও সমমানের পুনঃনিরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে ঢাকা বোর্ডে মোট ১৯৯০ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এরমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ১৯২ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯৫ জন। বাকীরা বিভিন্ন গ্রেডে ফল পরিবর্তন হয়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডে মোট ৫২৯ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৫১ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৮ জন। রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে মোট ৪৭৩ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৭২ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০৬ জন। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে মোট ৪৪২ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৮৮ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৮ জন। সিলেট শিক্ষাবোর্ডে মোট ২৬০ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৪১ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮০ জন। বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে মোট ১৪০ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ১৭ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১জন। দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে মোট ৩১৬ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৬৩ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯ জন।
এদিকে, যশোর শিক্ষাবোর্ডে মোট ২০৫ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৭১ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৭ জন। মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে মোট ২৪৮ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ১০১ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২ জন। আর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে মোট ২৯৪ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৪৫ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৫ জন। যাদের ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে তাদের রেজাল্ট বাড়ার কারণে পুনরায় আবেদন করার দরকার নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক হারুন-অর-রশিদ।
তিনি বলেন, যাদের রেজাল্ট পরিবর্তন হয়েছে তাদের প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী কলেজের ভর্তির মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে আগের রেজাল্টের কারণে কোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো কলেজে আবেদন করতে না পারে, সে ইচ্ছা করলে নতুন রেজাল্ট দিয়ে নতুন করে আবেদন করতে পারবে। এজন্য ৫ ও ৬ জুন আবেদন থেকে নতুন করে কোনো কলেজ যোগ করতে চাইলে সেটি করতে পারবে।
বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, পুনঃনিরীক্ষণে সাধারণত মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কিনা এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয়েছে বলে বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তার মানে কোনো শিক্ষার্থীর খাতা পুনরায় মূল্যায়ন হয় না। এতেই এতো শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে।
এটি রীতিমত তুঘলগি কাণ্ড আখ্যায়িত করে শিক্ষাবিদরা বলছেন, বোর্ডের প্রশ্ন পদ্ধতি ও খাতার দেখার নানা ক্রটির কারণে দিন দিন ফল চ্যালেঞ্জ করার সংখ্যা বাড়ছে। এতে প্রতি বছর জনগণের টাকা গচ্চা যাচ্ছে।
এমএইচএম/জেএইচ/জেআইএম