ট্রাইব্যুনালে কখনো শান্ত আবার কখনো অশান্ত ছিলেন সাকা
মানবতা বিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরুর পর থেকেই কখনও শান্ত আবার কখনো অশান্ত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী।
বিচারকালে তিনি বিভিন্ন সময়ে স্বভাবসুলভ হুংকার , চিৎকার, উচ্চ স্বরে বক্তব্য দিয়ে, কাঠগড়ায় বারবার দাঁড়িয়ে পড়েছেন, ট্রাইব্যুনাল ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন। কিন্তু ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন তা করেন নি। রায় ঘোষণার সময় তিনি অনেকটাই শান্ত ছিলেন। তবে এসময় তিনি বিচারক সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করেছেন। টুকটাক টিপ্পনীও কাটেন মাঝেমধ্যে। ১লা অক্টোবার মঙ্গলবার রায় পড়ার সময় সাকা চৌধুরীর কাছাকাছি ছিলেন সংবাদকর্মীরা। তাঁদের কাছেই তিনি প্রতিক্রিয়া জানান। এ ছাড়া রায় ঘোষণার আগে তাঁকে বেশ উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছিল। ট্রাইব্যুনালের হাজতখানার মধ্যে বসে তাঁকে অনেকক্ষণ ধরে সিগারেট টানতে দেখা যায়।
আসামির কাঠগড়ার সামনে সোফায় বসা ছিলেন সাকা চৌধুরীর স্ত্রী, মেয়ে, পুত্রবধূ ও বোন। সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পরিহিত সাকা রায় পড়ার পুরো সময়টা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হেসে ও কথা বলে সময় কাটান। ওই দিন তাঁর ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, `চাটগাঁইয়া পোলা তো, দুঃখের মধ্যেও হাসতে হয়।
বিচারকরা এজলাসে বসার আগে সাকা চৌধুরীকে নিচতলা থেকে দোতলায় আদালতকক্ষে আসামির কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। রায়ের প্রথম অংশের কিছুটা পড়া হয়ে গেলে সাকা চৌধুরী হাসতে হাসতে নিচু কণ্ঠে বলেন, যেটা পড়া হয়নি সেটা পড়েন। পড়ে চলেন, বাড়ি যাই। তিনি দাঁড়িয়ে বিচারককে উদ্দেশ করে বলেন, স্যার, এগুলো পড়ার দরকার কী, এগুলো তো দুই দিন ধরে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। এ সময় কয়েক মুহূর্তের জন্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক রায় পড়া বন্ধ রেখে মাথা উঁচু করে সাকা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আবার রায় পড়া শুরু করেন।
সাকা চৌধুরী আরো বলেন, রায় লিখে আনা হয়েছে। বাংলা ভালো করে পড়তেও পারে না। আর লিখে আনা রায় পড়ছে। তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষ আমার পক্ষে রায় দিয়ে আসছে। আর আজ (মঙ্গলবার) এখানে তিন কুতুবের (বিচারপতির) রায় শোনার জন্য আমাকে বসিয়ে রেখেছে।
রায়ে সাকাকে পাঁচবার সংসদ সদস্য হিসেবে উল্লেখ করলে সাকা চৌধুরী বলেন, পাঁচবার নয়, ছয়বার। এর পরও ট্রাইব্যুনাল আরো কয়েকবার পাঁচবার উল্লেখ করলে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামও বলেন, পাঁচবার নয়, ছয়বার। এ সময় সাকা চৌধুরী বলেন, `আপনারা যখন পাঁচবার লিখেছেন, তাহলে ঐটাই থাকুক।
তিনি আরো বলেন, মানুষ ছয়বার আমাকে রায় দিয়েছে, এখানে কী রায় দিবে। আর রায় পড়ার দরকার নেই। বাকিটা আমরা ওয়েবসাইটে দেখে নেব। এ সময় সামনের সোফায় বসা তাঁর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী সাকার দিকে তাকিয়ে বলেন, ওয়েবসাইটে যেমন দেওয়া আছে হুবহু তাই। এর পরেই যখন প্রথম অভিযোগ পড়া শুরু হয়, তখন সাকা প্রুভড (প্রমাণিত) বলে হাত তোলেন।
বিচারপতি আনোয়ারুল হক রায় প্রথম পড়েছিলেন। তাঁর পর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন রায় পড়া শুরু করলে সাকা চৌধুরী বলেন, আমাকে ইলেকশন করতে না দেওয়ার জন্য কত কষ্ট করতেছে বেচারারা।
তিনি বলেন, এ রায় আসছে বেলজিয়াম থেকে। ওরা শুধু মুখ নাড়ায়। সাকা আরো বলেন, সংসদ চলাকালে আমার বিরুদ্ধে কোনো বিচার কার্যক্রম চলতে পারে না। এখন যা চলছে তা অবৈধ, কারণ এখন সংসদ চলছে।
রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন-১৯৭৩ বলা হলে সাকা চৌধুরী বলেন, কিসের তিয়াত্তর সালের আইন? এটা ২০০৯ সালে হইছে। এখন দেশি আইনে না পেরে আন্তর্জাতিক আইনে যাচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে, তোমরা আন্তর্জাতিক আইনে বিচার করো, আমরা হেল্প করব। তখন কিছু বলেনি। এখন হাসিনা জাতিসংঘে গিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে হেল্প চায়।
রায়ের এক পর্যায়ে নূতন চন্দ্র সিংহকে জনপ্রিয় বলা হলে সাকা চৌধুরী বলেন, হ্যাঁ, জনপ্রিয়! তবে মদ বেচত। তার ছেলে সাক্ষী দিয়ে গেছে, তার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল। একগাদা ফটোও দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পর নূতন চন্দ্র বিষয়ে দায়ের হওয়া মামলা সম্পর্কে বলা হলে তিনি বলেন, ওই মামলায় কী বলছে? ওই কেসে কি বলা হয়েছে সাকা মেরেছে?
এফএইচ/এএইচ/এমএস