উত্তরা আধুনিক মেডিকেলে আসন শূন্য থাকার তথ্য সঠিক নয়

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০১:৫৫ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজে বিগত বছরগুলোতে আসন শূন্য থাকায় এবার এমবিবিএস প্রথম বর্ষে (চলতি ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষ) ‘আগে আসলে আগে ভর্তি ভিত্তিতে’ ৫৭ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের এমন তথ্য সঠিক নয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত এক দশকে (২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৭-২০১৮ পর্যন্ত) পর্যন্ত কলেজটিতে মোট আট শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। তথ্য উপাত্তে দেখা গেছে, সর্বনিম্ন ৫০ আসন থেকে সর্বোচ্চ ৯০ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। শুধুমাত্র ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে ওই বছর মাত্র ৪৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা। আর কোনো বছর আসন শূন্য থাকেনি।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের নামে নিজস্ব জমি না থাকায় ওই বছর ঠিক ভর্তি চলাকালীন সময়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রী ভর্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তী দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে কলেজের নামে জমি রেজিস্ট্রেশন করা হলেও আতঙ্কে ৪৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি। তবে এক দশকে আর কোনো শিক্ষাবর্ষে এমন ঘটনা ঘটেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেদের করা অনিয়ম ও অন্যায় ঢাকতে আসন শূন্যের দোহাই দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষে ৫০ জন, ২০০৮-২০০৯ তে ৫৫ জন, ২০০৯-২০১০ তে ৭১ জন, ২০১০-২০১১ তে ৭১ জন, ২০১১-২০১২ তে ৭৫ জন, ২০১২-২০১৩ তে ৮০ জন, ২০১৩-২০১৪ তে ৯০ জন, ২০১৪-২০১৫ তে ৪৫ জন, ২০১৫-২০১৬ তে ৯০ জন, ২০১৬-২০১৭ তে ৯০ জন এবং ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ৯০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।

এ দিকে চলতি ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে সাধারণ কোটায় ‘আগে আসলে আগে ভর্তি’ ভিত্তিতে ৫৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

গতকাল (মঙ্গলবার) ৫৭ শিক্ষার্থীর একাডেমিক কার্যক্রমে ৩০ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ‘আগে আসলে আগে ভর্তির সুযোগ’ ভর্তি প্রক্রিয়া কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষকে বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজে গত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে মেধা স্কোর অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি না করে ‘আগে আসলে আগে ভর্তির সুযোগ’ ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর বেলা ১১টার মধ্যে ‘আগে আসলে আগে ভর্তির সুযোগ’ পাবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

ওই দিন বেলা ১১টার পর তারিকুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী (যার মেধা স্কোর ২৫৭) কলেজে গিয়ে জানতে পারে ইতোমধ্যেই ৫৭ শিক্ষার্থীর ভর্তি সম্পন্ন হয়েছে। ভর্তির সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ২৫০.৪৫। তারিকুলের দাবি মেধাস্কোর অনুযায়ী ভর্তি করলে সে ভর্তির সুযোগ পেত।

পরে গত ২ জানুয়ারি তারিকুলের বাবা নজরুল ইসলাম আধুনিক মেডিকেল কলেজের এ ভর্তি পদ্ধতি চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার ওই আদেশ দেন আদালত।

এমইউ/এআরএস/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।