শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ
রাজধানীর ভাটারাস্থ পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১৩ দফা দাবি মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দাবিগুলোর ১২টি বাস্তবায়ন করতে শনিবার সকালে এক প্রশাসনিক নোটিশ দেয়া হয়েছে। বাকি এক দফা দাবিও আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
কলেজটির ২২তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের নেপালি শিক্ষার্থী বিনিশা শাহের আত্মহত্যাকে রহস্যজনক দাবি করে গত ২১ ডিসেম্বর প্রথম আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সে সময় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ১০ দফা দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূ্চি পালন করে শিক্ষার্থীরা।
তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে তারা আন্দোলনে স্থগিত করে। কিন্তু ১৫ দিনেও সেসব দাবি পূরণ না হওয়ায় গত ৩ জানুয়ারি দাবি আদায়ে কলেজ শিক্ষক, কলেজ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভেতরে রেখে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভে নামে ডেন্টাল কলেজটির শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আন্দোলন শুরু হয়। দাবি আদায়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত না করায় সাড়ে ১২টার দিকে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের কারণে কলেজের একাধিক শিক্ষক ও ডিরেক্টর অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার কথা জানালে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে।
সর্বশেষ আজ (শনিবার) সকালে এক প্রশাসনিক নোটিশের মাধ্যমে কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের ১৩ দফা দাবি মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের কথা জানায়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্র শাকিল জানান, ‘আমাদের আশ্বাস দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করেছিল। যে কারণে আমরা ১৫ দিন পর ফের আন্দোলনে নামি। বিভিন্ন অজুহাতে বেশি টাকা নেয়া, অহেতুক জরিমানা ও ফেলের ফাঁদ থেকে বাঁচা ছিল আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। আশা করছি সেসব দাবি পূরণ হবে।’
শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ১৩ দফা দাবি হলো :
১. শেষ পেশাগত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর ফরম পূরণের টাকায় কোনো বেতন আদায় করা যাবে না।
২. ইন্টার্ন ডাক্তারদের বেতন বৃদ্ধি করে ১২ হাজার টাকা করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, যে সকল ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সময় উন্নয়ন ফি দিয়ে ভর্তি হয়েছে তাদেরকেও বেতনের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ইন্টার্ন ডাক্তারদের বেতনের টাকা দিতে হবে।
৩. কলেজে অধ্যয়নরত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে চিকিৎসা গ্রহণ করার সময় চিকিৎসা বাবদ ফি সম্পূর্ণ ফ্রি করে দিতে হবে এবং অভিভাবকদের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ছাড়ে চিকিৎসা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. ইন্টার্ন ডাক্তারদের নিয়ে ‘ইন্টার্ন ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন’ গঠন করতে হবে। অ্যাসোসিয়েশন গঠনের সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিযুক্ত উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন।
৫. ভর্তির সময় যে উন্নয়ন ফি নেয়া হয়, এরপর ফাইনাল ইয়ার পর্যন্ত বেতন ও পরীক্ষার ফি ব্যতীত অন্য কোনো টাকা আদায় করা যাবে না।
৬. প্রত্যেক পেশাগত পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ ফি’য়ের পরিমাণ কমাতে হবে।
৭. কলেজে ভর্তি, পরীক্ষা কিংবা অন্য যেকোনো লেনদেনে রশিদ দিতে হবে।
৮. বেতন বিলম্বে দেয়ার ক্ষেত্রে যে জরিমানা নেয়া হয় তা কমাতে হবে। ২০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ টাকা করতে হবে।
৯. নিয়ম অনুযায়ী হোস্টেলে এক বছর থাকার পর হোস্টেল ত্যাগ ক্ষেত্রে দ্রুত অনুমতি দিতে হবে। অতিরিক্ত কোনো জরিমানা আর নেয়া যাবে না।
১০. কলেজে ইমার্জেন্সি ইউনিট ও অ্যাম্বুলেন্স সেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
১১. হোস্টেল চার্জ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন। খাবারের ক্ষেত্রে মিল সিস্টেম চালু ও খাবারের মান উন্নত করতে হবে।
১২. বহির্বিভাগে চিকিৎসা প্রদানের সময় যে সকল ইনস্ট্রুমেন্ট ও মেটারিয়েল ব্যবহার করা হয় তা পুরোটাই কলেজ থেকে সরবরাহ করতে হবে এবং
১৩. ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় পাস করার ১৫ দিনের মধ্যে অন্যান্য কলেজের ন্যায় ইন্টার্নশিপ চালু ও ইন্টার্নশিপ শেষ হবার পর দ্রুত সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে ইন্টার্ন ডাক্তার ফি বাবদ যারা সমুদয় ফি পরিশোধ করেছে তাদের ইন্টার্ন ভাড়া সাড়ে ৭ হাজার টাকা ও যারা ফি দেয়নি তাদের সাড়ে ৩ হাজার টাকা দেয়ার কথা জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এবং তিন মাসের মধ্যে জরুরি বিভাগ ও অ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। বাকি সব দাবি-দাওয়া পূরণ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের প্রিন্সিপাল রাকিবা সুলতানা জানান, ‘গত ২ জানুয়ারি একাডেমিক কাউন্সিলের বর্ধিত সভায় সকল সদস্যের উপস্থিতিতে কলেজের সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় ও শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’
পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য খন্দকার মো. শফিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দাবি পূরণে নোটিশ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব দাবি পূরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।’
জেইউ/এসএইচএস/জেআইএম