অসঙ্গতি আর ভুল তথ্যই রয়ে গেছে শিশুদের পাঠ্যবইয়ে

মুরাদ হুসাইন
মুরাদ হুসাইন মুরাদ হুসাইন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৫৬ পিএম, ০৪ জানুয়ারি ২০১৮

ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক ছাপানো হয়েছে। অস্পষ্ট ছাপা, অসঙ্গতি আর ভুল তথ্য-উপাত্ত রয়েছে প্রাথমিক স্তরের বিভিন্ন বিষয়ের বইয়ে। এসব বই পড়ে শিশুদের কতটা জ্ঞানার্জন সম্ভব এমন প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদরা। তবে বইয়ে ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক, আগামী বছর তা সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছে পাঠ্যবই প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তারা।

প্রাথমিক স্তরের বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যবইয়ে দেখা গেছে, ৩য় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’বইয়ের ৬৭ নং পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিচিতিতে নানা ধরনের ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ অধ্যায়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যা নির্ণয়ে ২০১১ সালের আদমশুমারির হিসাব অনুযায়ী জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে, ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৪ জন।

একই পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের আয়তন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমার ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার যোগ হয়েছে বাংলাদেশের সীমানায়। বর্তমান সরকারের একটি বড় অর্জন এটি। এ ঘটনার এক বছর হয়ে গেলেও এনসিটিবির কর্মকর্তাদের কানে হয়তো তা পৌঁছায়নি। এ কারণে পুরনো হিসেবে পাঠ্যবইয়ে তুলে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার হিসাব ও আয়তনে একই ধরনের ভুল করা হয়েছে চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে। শিশুদের এই বইয়ের ৩০ নং পৃষ্ঠায় ভালো কাজ বলতে শুধু কুড়িয়ে পাওয়া টাকা ফেরত দেয়ার গল্প দিয়েই শেষ করা হয়েছে। এছাড়া বইয়ের ছবি ও লেখা অস্পষ্ট।

book2

একই ক্লাসের প্রাথমিক বিজ্ঞান বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে ৭৫ নং পৃষ্ঠায় গণনা শেখাতে কয়েকটি খাদ্য কার্ডের ছবি দেয়া হয়েছে। সেখানে ‘খাদ্য লেখা ৫টি কার্ড’লেখার কথা থাকলেও লেখা হয়েছে ‘খাদ্য লখা’।

এদিকে, গতবারের ছাগলকে বাদ দিয়ে এবার হরিণকে গাছে তুলে পাতা খাওয়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির ‘আমার বাংলা’ বইয়ে এমন কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এ বইয়ের ১৯ নং পৃষ্ঠার চিত্রে দেখানো হয়েছে, অনেকগুলো হরিণ আক্ষেপ করছে, আর একটি হরিণ গাছে উঠে পাতা খাচ্ছে।

পাঠ্যবইয়ে এসব ভুলের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, শিশুদের ভুল বই পড়িয়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। ছোট থেকেই যদি শিশু-কিশোররা ভুল শিখে বড় হয়, তবে মেধার বিকাশ ঘটাতে বাধা সৃষ্টি হবে।

এর দায়ভার পুরোটাই এনসিটিবির কর্মকর্তাদের এমন মন্তব্য করে এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ভুলের প্রভাব গোটা জাতির উপর পড়ছে। এ কারণে আমাদের শিশুদের ভুল দিয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করতে হচ্ছে। এটা বাঙ্গালি জাতির জন্য একটি অভিশাপ। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক দ্রুত সংশোধন করার দাবি জানান তিনি।

তবে পাঠ্যপুস্তকে এমন ভুল স্বাভাবিক, প্রতি বছর এসব ভুল সংশোধন করা হয়। আগামী বছরও তা করা হবে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পাঠ্যবইয়ের ভুল-ক্রটি এখনও নির্ণয় করা হয়নি। বিশ্লেষকরা বইগুলো মূল্যায়ন করে থাকেন। সেখানে কোন অসংঙ্গতি বা ভুল ধরা পড়লে তা আগামী বছর সংশোধন করা হবে।

এমএইচএম/ওআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।