উত্তরা মেডিকেলে ভর্তিতে অনিয়ম : গঠিত হচ্ছে তদন্ত কমিটি
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তিতে নজিরবিহীন অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুসারে জাতীয় মেধাতালিকাকে উপেক্ষা করে অর্ধশত ছাত্রছাত্রীর ভর্তির ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে কলেজ পরিদর্শনের পাশাপাশি ভর্তি বঞ্চিত শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলবেন। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিকসহ অন্যান্য আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদ সোমবার সকালে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেলে অনিয়ম করে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ তাদের নজরে এসেছে। অধিদফতরের পক্ষ থেকে তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগ খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখবেন বলে জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ভর্তির ক্ষেত্রে জাতীয় মেধাতালিকার ক্রমানুসারের বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তির কোনো সুযোগ নেই। তারা বলেন, ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এক মাস সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে প্রতিটি মেডিকেল কলেজকে জাতীয় মেধা তালিকার ভিত্তিতে কমপক্ষে তিন দফা সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর নামের মেধাতালিকা প্রকাশ করে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। তিন দফা তালিকা প্রকাশের পর তারা আগে আসলে আগে ভিত্তিতে ভর্তি করানোর সুযোগ পাবেন তার আগে নয়।
এদিকে অনিয়ম করে ভর্তির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কলেজের ডক্টরস অ্যান্ড টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি অধ্যাপক ডা. সারোয়ার ফেরদৌস, সাধারণ সম্পাদক ফারহান মতিন, শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. আকেল মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম লিটু, কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিশেনের সভাপতি তায়েবুর রহমান এলিচ, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইব্রাহিম জানান, অনিয়ম করে ৫৭ শিক্ষার্থী ভর্তির ফলে ঐতিহ্যবাহী এ মেডিকেল কলেজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
তারা ভর্তি কমিটি ও অনিয়ম করে শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল ও জাতীয় মেধাক্রম অনুসারে মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান। একই সাথে ভর্তি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত গভর্নিং বডির সদস্য সাব্বির আহমেদ খানকে কলেজ থেকে বহিষ্কারের জোর দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার রাজধানীর উত্তরা মেডিকেল কলেজে তড়িঘড়ি করে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে নিজেদের খেয়াল খুশী মতো এমবিবিএস প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী কার্য়ক্রম শেষ করা হয়।
খোঁজ জানা গেছে, এই কলেজে মোট আসন ৯০টি। এর মধ্যে বিভিন্ন কোটায় ১৮টি। আর সাধারণ কোটায় ৭২টি আসন। এ ৭২টি আসনে ভর্তির জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ জাতীয় মেধাতালিকা ক্রমানুসারে ক্রমিক নম্বর ৪০০১ থেকে ৭১৭৮ পর্যন্ত সিরিয়াল বেঁধে দেয়। ১১ ডিসেম্বর ভর্তি শুরুর প্রথম দিনে ১৫টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।
১৪ ডিসেম্বর নোটিশ বোর্ডে মেধাতালিকার সিরিয়াল প্রকাশ করা হলেও তার আগেই কমপক্ষে ১৭ জন শিক্ষার্থী (গোপনে আর্থিক লেনদেন সাপেক্ষে বলে অভিযোগ) পে-অর্ডার জমা দেয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই সরকার নির্ধারিত মেধাতালিকার অনেক পেছনের সিরিয়ালে রয়েছেন। যে ১৭ জন আগাম পে-অর্ডার পরিশোধ করে রেখেছিলেন জাতীয় মেধাতালিকায় তাদের সিরিয়াল ছিল যথাক্রমে ১৯০৪৩, ১৮৩০২, ১৫৫৮৬, ১৪৯৪৩, ১২৪২৭, ১২৪২৭, ১২০৮৫, ১১৫৬৬, ১১০৪৫, ১০৮১৭, ১০০৯৫, ৯৭৭১, ৯২১৬, ৮৮১৮, ৮০৭১, ৭৪৩৮ ও ৭১৭৮।
জানা গেছে, ১৫ ডিসেম্বর শুক্রবার ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে গত দুদিন ব্যাংক বন্ধ থাকার পাশাপাশি কোনো জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা কিছুই জানতে পারেননি। অভিভাবকরা বলছেন, মেধাক্রম প্রকাশের আগে কীভাবে পে-অর্ডার জমা হলো, কীভাবে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হলো?
গতকাল রোববার মেধাতালিকার শীর্ষে থাকা অনেকেই তাড়াহুড়া করে ব্যাংক ড্রাফট করে এলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের ভর্তির জন্য সাক্ষাৎ করতে দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন। কর্মচারী ও নিরাপত্তারক্ষীদের দিয়ে কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে রীতিমতো পাহারা বসানো হয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, শুধুমাত্র গোপনে অর্থ লেনদেন করে তদবির ও যোগাযোগ করেছেন এমন শিক্ষার্থীদেরকেই সাক্ষাতের সুযোগ ও ভর্তি করা হয়।
এমইউ/এআরএস/জেআইএম