আলোর মুখ দেখছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়
মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও যুগোপযুগী করতে ২০১৩ সালে দেশে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এতদিন প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় নিজস্ব ক্যাম্পাসসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এবার আলোর মুখ দেখছে শত বছরের আন্দোলনের ফসল স্বতন্ত্র ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জে ২০ একর এলাকাজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে। এটি বাস্তবায়নের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।
স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ২০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে সমন্বয় রেখে মাদারাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে। মাদরাসা শিক্ষায় অধিক দক্ষ ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল সৃষ্টি হবে। তারা দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে, যা দেশের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি, এসডিজি (সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) ও ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। সাধারণ শিক্ষায় ডিগ্রিধারীদের সঙ্গে মাদরাসা শিক্ষার ডিগ্রিধারীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও সফল হবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, আধুনিকায়ন এবং দেশের সকল ফাজিল ও কামিল মাদরাসা শিক্ষা কার্যক্রম যথাযথ পরিচালনা করে উচ্চ শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টির সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন; ফাজিল (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) পর্যায়ের কারিকুলাম ও সিলেবাসের উন্নয়ন; শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; মাদরাসায় অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে দেশের ভেতরে ও বাইরে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিতে আসা মাদরাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক সুবিধার ব্যবস্থা করা- সবই এ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।
প্রকল্পের অধীনে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যায়ের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরি করা হবে। ক্যাম্পাসের অবকাঠামোর মধ্যে ১০তলা প্রশাসনিক ভবন, ছয়তলা একাডেমিক ভবন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য ডরমিটরি, মহিলা ও পুরুষ ডরমিটরি, উপাচার্যের বাসভবন, অডিটরিয়াম, মসজিদ, শহীদ মিনার, গেস্ট হাউজ, আনসার ব্যারাক ইত্যাদি ভৌত সুবিধা গড়ে তোলা হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছর ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য ৫৮৯ কোটি ১৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়। এই প্রস্তাবের ওপর একই বছর ২০১৬ সালের ২৫ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভ্যন্তরীণ প্রকল্প যাচাই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপি অনুমোদনের জন্য একই বছর ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাঠান হয়।
ইউজিসি ডিপিপি পুনর্গঠনের নির্দেশনা প্রদান করে। ডিপিপি পুনর্গঠন করে অনুমোদনের জন্য ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট পুনরায় ইউজিসিতে প্রেরণ করা হয় এবং ওই বছর ২১ সেপ্টেম্বর ডিপিপি’র ওপর একটি প্রেজেন্টেশন সভাও হয়। এতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প গৃহীত হয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল প্রকল্পটির ওপর পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাব করা হয় ৪৭১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। পিইসি সভার সিদ্ধান্তের আলোকে গত ৭ আগস্ট প্রকল্পের পুনর্গঠিত ডিপিপি নির্ধারণ করা হয় ৪১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
সরকার ২০১০ সালে দেশের নামকরা ৩১টি মাদরাসায় অনার্স প্রোগ্রাম চালু করে। শুরু থেকে পাঁচটি বিষয়ে এই প্রোগ্রাম চালু করা হয়। এগুলো হলো- হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আদ-দাওয়া অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল আদাবুল আরবি (আরবি সাহিত্য) ও ইসলামের ইতিহাস।
এই অনার্স ছাড়া মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায় ফাজিল (পাস), ফাজিল (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) শিক্ষা কার্যক্রম এতদিন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল, এখন থেকে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তা পরিচালিত হবে। তবে সরকারি কারিকুলাম অনুযায়ী না চলার কারণে দেশের কওমী মাদরাসাগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে না।
এমএইচএম/এমএআর/এমএস