রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে দুর্নীতি : কর্মসূচি দিয়েও সমাধান নেই


প্রকাশিত: ০৮:১১ এএম, ১৬ জুন ২০১৫

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর তাই গত কিছুদিন ধরে এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারি ফ্রন্ট, সচেতন নাগরিক সমাজ মানববন্ধন, সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করেও কোনো সমাধান পাননি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের একাধিক সূত্র জানায়, বিগত ৭/৮ বছরে শিক্ষা বোর্ডের ফান্ড থেকে বকেয়া বিল ও ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে।  প্রতি বছর অডিট হলেও কর্মচারি ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা অডিট টিমকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে বিষয়গুলো সামাল দিয়ে রেখেছেন।  শুধু তাই নয় গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে আসা ৩ সদস্য বিশিষ্ট অডিট টিমকে সন্তুষ্ট করার জন্য শিক্ষা বোর্ড সংলগ্ন সোনালী ব্যাংকের গ্রেটার রোড শাখা থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলে অডিট টিমের সদস্যদের দেওয়া হয় বলে একটি সূত্র জানায়।

গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৩টি বকেয়া পারিশ্রমিক বিল বাবদ মোট ৮৬ লাখ টাকা বোর্ড চেয়ারম্যানের যোগসাজশে কর্মচারি ইউনিয়নের ৩ নেতা আত্মসাৎ করেছেন।  কোনো বিলে ৬৫ জন, আবার কোনো বিলে ৭২ জন কর্মচারিদের সাদা কাগজে সই করে বকেয়া পারিশ্রমিকের হিসেব দেখিয়ে এই মোটা অঙ্কের টাকা শিক্ষাবোর্ড কর্মচারি ইউনিয়নের নেতারা ভাগবাটোয়ারা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিষয়গুলো ২০০১ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সঠিকভাবে তদন্ত করলে এ ধরনের কয়েক কোটি টাকা লুটপাটের চিত্র পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন শিক্ষাবোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা।

এদিকে, বোর্ডের একজন দৈনিক মজুর নজরুল ইসলাম বাদল শিক্ষকদের নামে ভুয়া বিল তৈরি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়গুলো তদন্তে ধরা পড়লে তিনি ৪ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে রক্ষা পান।

অপরদিকে, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মচারি নিয়োগ, আসবাবপত্র ক্রয় ও তাদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রদান সংক্রান্ত ফাইলে অডিটের আপত্তি থাকার পরেও বর্তমান বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবুল হায়াত তা আমলে না নিয়ে নিজ ক্ষমতা বলে ও বিধি বহির্ভূতভাবে ১৭ জন শিক্ষক ও কর্মচারি নিয়োগ দিয়ে তাদের বেতন-ভাতা দেয়ার চেষ্টা করছে।

এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষক ফ্রন্টের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা জাগো নিউজকে জানান, এসব ছাড়াও শিক্ষা বোর্ডে আরো অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে।  বর্তমানে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।  এজন্য গত কিছুদিন ধরে তারা এসবের প্রতিবাদে মানববন্ধন, সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করে আসছেন বলেও জানান।  

বিষয়গুলো নিয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবুল হায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, তিনি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড অফিসে যোগদান করার পর কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি।  বোর্ডের বিধি মোতাবেক সমস্ত কার্যক্রম পালন করা হচ্ছে। বকেয়া বিলগুলো তাঁর সময়ের নয়, তাই এ ব্যাপারে আগের চেয়ারম্যানরাই ভালো জানেন। আর শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বেতন ভাতাসহ ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার যে অডিট আপত্তি রয়েছে, তা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান এই চেয়ারম্যান।

এমজেড/এমএস/এসআরজে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।