সর্বশেষ শিক্ষক নিয়োগেও অনিয়ম করেছেন আরেফিন সিদ্দিক!
ইনস্টিটিউট হিসেবে যাত্রা শুরুর পাঁচ বছরেও গঠন করা হয়নি বোর্ড অব গভর্নরস (বিজি)। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১৭তম বিধির লঙ্ঘন করে সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত করা হয়েছে দুই সহকারী অধ্যাপক ও নয় প্রভাষকের নিয়োগ। আবার সিন্ডিকেটে নিয়োগের ফাইলটি ছিল টেবিল এজেন্ডায়। সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে দেয়া হয়নি প্রার্থীদের প্রোফাইলও।
কোনো শর্ত পূরণ করেননি- এমন প্রার্থীও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সিন্ডিকেটের টেবিল এজেন্ডা হিসেবে উপস্থাপন করাও ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এর ক্যালেন্ডার ২ এর ৫ নম্বর চ্যাপ্টারের সরাসরি লঙ্ঘন। এমন সব অনিয়মের মাধ্যমে গত ১৬ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের জন্য ১১ শিক্ষকের নিয়োগ সুপারিশ চূড়ান্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক নিজ মেয়াদের শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে গুরুতর অনিয়মের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তাদের দাবি, এখানে বড় ধরনের অর্থেরও লেনদেন হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষক বলেন, শেষ সময়ে নিয়ম না মেনে অযোগ্যদের নিয়োগ দিয়ে ইনস্টিটিউটের বড় ধরনের ক্ষতি করে গেছেন সাবেক উপাচার্য। তবে আরেফিন সিদ্দিক দাবি করেন, ‘যারা অপতথ্য প্রচার করেন এসব অভিযোগ তাদের।’
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দুটি পৃথক সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী এ নিয়োগ চূড়ান্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। দুই সহকারী অধ্যাপকের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রথম সিলেকশন বোর্ড অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর। বিজ্ঞপ্তির বাইরে আরও দুই প্রভাষককেও নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। অন্যটি ২০১৬ সালের ১৫ মে। এখান থেকে সাত প্রভাষককে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশ কেন তিন বছর পর সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হয়েছে- ওই সময় সিন্ডিকেট সভাপতি আরেফিন সিদ্দিকের কাছে এমন প্রশ্নও ছিল সিন্ডিকেটের এক সদস্যের। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম বিধির ৮ (১) এর ‘এ’ অনুযায়ী, সিলেকশন বোর্ড পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৬ সালের ১৫ মে অনুষ্ঠিত সিলেকশন বোর্ডের সদস্য ছিলেন চারজন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সিলেকশন বোর্ডে সদস্য সংখ্যা পাঁচজন থাকলেও ছিলেন না সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কোনো পারদর্শী।
এছাড়া নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় যে শর্ত চাওয়া হয়েছিল এর কোনোটিই পূর্ণ করেননি; এমন ব্যক্তিকেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে একটি সহকারী অধ্যাপক ও ছয়টি প্রভাষক পদের জন্য প্রার্থীর আবেদন আহ্বান করলেও নিয়োগ দেয়া সাতজনই প্রভাষক পদে।
এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট সভায় নোট অব ডিসেন্টও (অনাস্থা প্রস্তাব) দিয়েছিলেন সিন্ডিকেটের এক সদস্য। এরপরও বিষয়টি আমলে নেননি তৎকালীন উপাচার্য (আরেফিন সিদ্দিক)।
সিন্ডিকেট সদস্য নীলিমা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে টেবিল এজেন্ডা হিসেবে কোনো নিয়োগ অনুমোদন করান উচিত নয় বলে আমি মত দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটি আমলে নেয়া হয়নি।’
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট হিসেবে যাত্রা শুরু করে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। এর আগে এটি কারিগরি বোর্ডের আওতায় লেদার কলেজ নামে পরিচালিত হতো। ২০১২ সালের ২৭ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ইনস্টিটিউট পরিচালনার জন্য ১৭তম বিধি অনুমোদন করে। বিধি অনুযায়ী ইনস্টিটিউট পরিচলানায় সর্বোচ্চ ফোরাম ইনস্টিটিউটের জন্য গঠিত ‘বোর্ড অব গভর্নরসকে (বিজি)’ দেয়া হয়।
১৭তম বিধির ৪ নম্বর ধারায় ‘পাওয়ার অব দ্য বোর্ড অব গভর্নরস’ শিরোনামে ৪ (বি)- তে উল্লেখ করা হয়, ‘বিজি ৮ ও ১১ নম্বর বিধান অনুযায়ী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হবে’কিন্তু ইনস্টিটিউট হিসেবে যাত্রার পাঁচ বছর অতিক্রম হলেও এখনও বোর্ড অব গভর্নরস গঠন করা হয়নি। উল্টো সিন্ডিকেট দিয়ে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। সিন্ডিকেটে নিয়োগ চূড়ান্ত করার পর বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। সাধারণত সিন্ডিকেটে পাস হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগসমূহের নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেন রেজিস্ট্রার। আর বিজিতে পাস হওয়া ইনস্টিটিউটের নিয়োগে স্বাক্ষর করেন ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর। কিন্তু সিন্ডিকেটে পাস হওয়ার পর ইনস্টিটিউটটির নিয়োগ পত্রে কে স্বাক্ষর করবেন তা নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। রেজিস্ট্রার ভবনের দায়িত্বরত অফিসে এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর অধ্যাপক ড. আফতাব আলী শেখ এতে স্বাক্ষর করেন। যদিও বিজি’র মাধ্যমে নিয়োগটি চূড়ান্ত হয়নি।
এদিকে ১৭তম বিধির ৩ (এ) অনুযায়ী, বোর্ড অব গভর্নরস গঠন খুব কঠিন না হলেও পাঁচ বছরেও তা গঠন করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্য নীলিমা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘লেদারের বিজি গঠন প্রক্রিয়ায় যে বিষয়গুলো উল্লেখ আছে, সে অনুযায়ী তা কঠিন কাজ বলে মনে হয় না। কেন পাঁচ বছরেও বিজি গঠন করা হয়নি সেটি অবাক হওয়ার মতো বিষয়।’
অন্যদিকে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আফতাব আলী শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিজি গঠনের মূল দায়িত্ব হচ্ছে ভিসি, প্রো-ভিসিদের। আমি ডিরেক্টর হিসেবে এসেছি বছর দেড়েক হলো। বিজি গঠনের জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটি যদি বিশ্ববিদ্যালয় গঠন না করে, তাহলে আমাদের তো কিছুই করার নেই।’
সংশ্লিষ্টদের দাবি, আরেফিন সিদ্দিক নিজের একান্ত ইচ্ছাতেই গত পাঁচ বছর বিজি গঠন থেকে বিরত ছিলেন।
১৭তম বিধির ৮ (৫) নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি বিজি সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশ গ্রহণ না করে তাহলে সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশ সিন্ডিকেটে পাঠানো হবে, যাতে সুপারিশটি আচার্যের (রাষ্ট্রপতি) কাছে পাঠানো হয়। আচার্য ঠিক করবেন কাকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হবে।’ এ আইন অনুযায়ী সিন্ডিকেট নিয়োগের কোনো ক্ষমতাই রাখে না।
নীলিমা আক্তার বলেন, ‘বিজি ছাড়া কোনো ইনস্টিটিউটে নিয়োগ দেয়ার সুযোগ নেই। সিন্ডিকেট ইনস্টিটিউটে সরাসরি নিয়োগ দিতে পারে না।’
এদিকে সিন্ডিকেটে নিয়োগটি চূড়ান্ত করা হলেও এর সদস্যদের কাছে নিয়োগপ্রত্যাশী প্রার্থীদের কোনো প্রোফাইল দেয়া হয়নি। সাধারণত কোনো নিয়োগ পাস হওয়ার আগে সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে প্রার্থীদের পূর্ণ প্রোফাইল দেয়া হয়। একই দিন নিয়োগ চূড়ান্ত করা আবহাওয়া বিভাগসহ অন্যসব নিয়োগে প্রার্থীদের প্রোফাইল দেয়া হয়। কিন্তু লেদারের ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি। আবার নিয়োগের ফাইলটি দেয়া হয়েছে টেবিল এজেন্ডা হিসেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের ক্যালেন্ডার ২ এর ৫ নম্বর চ্যাপ্টার অনুযায়ী, নিয়োগটিও টেবিল এজেন্ডা হিসেবে উপস্থাপন করার সুযোগ নেই। কিন্তু আরেফিন সিদ্দিক কৌশলে সেটিই করেছেন বলে অভিযোগ। ক্যালেন্ডার ২ এর ৫ নম্বর চ্যাপ্টার অনুযায়ী, ‘যে বিষয়ে দ্বিমতের সম্ভাবনা নেই শুধু সেসব বিষয় তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ নোটিশ ছাড়া সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা যায়। সেটি দুইভাবে করা যায়- ১. আর্জেন্ট ম্যাটার, ২. রুটিন ম্যাটার। কিন্তু যেসব বিষয়ে দ্বিমতের সম্ভাবনা আছে সেসব বিষয়ে যথাযথ নোটিশ এবং ফাইল আগে থেকেই সদস্যদের কাছে পৌঁছাতে হবে।’
নিয়োগের মতো একটি জটিল বিষয় টেবিল এজেন্ডা হিসেবে উপস্থাপন করায় সিন্ডিকেট সদস্যরা দ্বিমত পোষণ করেছেন বলেও একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তুলনামূলক অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ
এদিকে দুটি সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশে দুই সহকারী অধ্যাপক এবং নয় প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবরের সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী দুই সহকারী অধ্যাপক ও দুই প্রভাষক নিয়োগের সুপারিশ চূড়ান্ত করে সিন্ডিকেট। অথচ এ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে মাত্র দুজন সহকারী অধ্যাপক পদের জন্য প্রার্থীদের আবেদন আহ্বান করা হয়। নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন দুই সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আশরাফুল ইসলাম। আর প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া দুজন হলেন- মঞ্জুশ্রী শাহা ও মো. ইলিয়াস উদ্দিন।
২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ইনস্টিটিউটটির জন্য মোট চারটি বিষয়ে ছয়জন প্রভাষক ও একজন সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের ১৫ মে অনুষ্ঠিত সিলেকশন বোর্ডের সভা থেকে সাতজনকে প্রভাষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। সে সুপারিশ অনুযায়ী সিন্ডিকেটে নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়া সাতজনের মধ্যে পাঁচজনেরই যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাদপড়া প্রার্থীদের দাবি, যোগ্যতা বিবেচনায় তুলনামূলক হারে পিছিয়ে থাকা প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোনোটিতেই শর্ত পূর্ণ করে না- এমন প্রার্থীকেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে দুজন লেকচারারের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দুজনকেই নেয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে একজন মো. রাশেদ-উল-ইসলাম। তিনি স্নাতকে ১২তম স্থান এবং স্নাতকোত্তরে ৩৫তম স্থান অধিকারী ছিলেন। অন্যজন এস এম তানভীর আহমেদ। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের কোনোটিতেই শর্ত পূরণ করেননি। তবুও তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং/টেকনোলজি বিষয়ে স্নাতক চাওয়া হলেও তানভীর স্নাতক করেছেন ফুটওয়্যার টেকনোলজি বিষয়ে। আর স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ ৩.৫০ চাওয়া হলেও তার ছিল ৩.৩৩। এছাড়া তার নেই কোনো প্রবন্ধ। যদিও ফুটওয়্যার টেকনোলজি বিষয়ে স্নাতক ছিল বলে বাদ দেয়া হয়েছে রনজিত কুমার সরকার নামের একজনকে।
অন্যদিকে স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ ৩.৪২ থাকায় বাদ দেয়া হয়েছে এ বি এম ওয়াহিদ মুরাদ নামের অন্য আরেক প্রার্থীকে। যিনি স্নাতকে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী ছিলেন। এছাড়া তিনি এমফিল ডিগ্রিধারী। ২০১১ সাল থেকে ইনস্টিটিউটে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপনা করছেন।
গণিত বিষয়ে একজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দুজনকেই প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে একজন মাহবুবুর রহমান খান। তিনি স্নাতক-এ ১৩তম এবং স্নাতকোত্তরে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন। তিনি ২০১৩ সাল থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। অন্যজন তুষার সরদার। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে অষ্টম ও পঞ্চম স্থান অধিকারী। তবে তার কোনো প্রবন্ধ কিংবা পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। অথচ এখানে তুলনামূলকভাবে যোগ্যদের বাদ দেয়া হয়েছে। তাদের একজন আশেক আহমদ। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও চতুর্থতম স্থান অধিকারী ছিলেন। এমনকি তিনি বর্তমানে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করছেন।
এছাড়া সহকারী অধ্যাপকের জন্য আবেদন করে যোগ্য হয়েও বাদ পড়েছেন মো. আবু হানিফ সরকার নামে অন্য এক প্রার্থী। তিনিও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয়টিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী ছিলেন। বিভিন্ন জার্নালে তার নয়টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করছেন।
তবে কম্পিউটার বিষয়ে একজন লেকচারারের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একজনকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ দেয়া মো. রায়হানুল ইসলাম আবেদনের সব শর্তই পূরণ করেছেন। আর পদার্থবিদ্যা বিষয়ে দুজন লেকচারার পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি চেয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ইতি কনা রায় ও সালাউদ্দিন হাওলাদার নামে দুজনকে। তাদের মধ্যে ইতি কনা রায় আবেদনের শর্ত পূরণ করেননি। বিজ্ঞপ্তিতে পদার্থবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চাওয়া হলেও তিনি ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক করেছেন।
অযোগ্য ও তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকাদের নিয়োগের বিষয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক আফতাব আলী শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে আমাদের হাত নেই। সিন্ডিকেট নিয়োগ দিয়েছে। সিন্ডিকেট যাদের যোগ্য মনে করেছে তাদেরই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’
এমন সব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিজি গঠন না করেও নিয়োগে কোনো অসুবিধা হয় না। সিন্ডিকেট সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। সিন্ডিকেট চাইলে নিয়োগ দিতে পারে।’অযোগ্যদের নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তো সিলেকশন কমিটির বিষয়। সেটি সিলেকশন কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওইদিন নিয়োগের ফাইলটি টেবিল এজেন্ডা হিসেবে সিন্ডিকেটে উপস্থাপন হয়েছিল। তবে এর সঙ্গে প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট প্রোফাইল সংবলিত তালিকা ছিল না। তাই প্রার্থীদের যোগ্যতা সংবলিত কোনো কাগজপত্র যেহেতু দেখতে পারিনি, সেহেতু কোথায় নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে তা বুঝতে পারিনি।’
প্রসঙ্গত, ড. মো. আখতারুজ্জামান ওই নিয়োগের সময় উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) দায়িত্বে ছিলেন।
এমএইচ/এমএআর/আইআই