সনদ ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা নিচ্ছেন ঢাবি শিক্ষক


প্রকাশিত: ১২:০৮ পিএম, ২৩ মে ২০১৫

সনদ ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধা সুবিধা ভোগ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আজিজুর রহমান। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে ইতোমধ্যে চাকরির মেয়াদও এক বছর বাড়িয়ে নিয়েছেন তিনি। চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সময় নির্দিষ্ট সময়ে সনদ দাখিলের শর্ত থাকলেও এখনো তা করেননি ঢাবির ওই শিক্ষক। অবশ্যই এর জন্য তাকে তেমন কষ্ট করতে হয়নি। এক্ষেত্রে তার পক্ষ হয়ে স্ববিরোধী চিঠি চালাচালির অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

সনদ দাখিল না করলেও গত ১২ মে চিঠি চালাচালির এক পর্যায়ে ওই শিক্ষককে বিগত বছরের সকল কর্মকাণ্ডের বৈধতা ও প্রশংসা করে চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে এলপিআর-এ (অবসর গ্রহণের প্রস্তুতি ছুটি) যেতে আবেদন করতে বলা হয়। অথচ গত বছরের ৩০ জুন থেকে তার এলপিআর শুরু হওয়ার কথা ছিল।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে ১৯৭৩ সালে যোগদান করেন আজিজুর রহমান। নিয়মানুযায়ী ২০১৪ সালের মাসে অবসরে (এলপিআর) যাওয়ার কথা ছিল তার। সে অনুযায়ী ওই বছরের ৩ জুন বিভাগের আরেক সিনিয়র অধ্যাপক ড. নাসিমা ফেরদৌসকে পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগের একটি চিঠিও দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সঙ্গে বিভাগের সব হিসাব অধ্যাপক আজিজ থেকে বুঝে নিতেও নির্দেশ দেয়া হয় তাকে।

কিন্তু ওই সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ছাড়াই চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন অধ্যাপক আজিজুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের তোয়াক্কা না করে ওই শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে একই বছরের ২২ জুন তাকেসহ আরো চার শিক্ষককে ২৫ জুনের মধ্যে সনদ দাখিল করার শর্তে চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ প্রভাষক হিসেবে যোগদানকালে অধ্যাপক আজিজুর রহমান নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো নথিপত্রে উল্লেখ করেননি। ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারিকৃত একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেসব কর্মকর্তা/কর্মচারী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, মুক্তিবার্তা পত্রিকা ও গেজেটে যাদের নাম প্রকাশিত হয়েছে এবং যারা প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরযুক্ত সনদ গ্রহণ করেছেন তারাই মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারী বলে বিবেচিত হবেন। এ প্রজ্ঞাপন মোতাবেকে অভিযুক্ত শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় পড়েন না।

নির্দিষ্ট সময়ে সনদ দাখিল করতে না পারায় চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি অধ্যাপক আজিজুর রহমানের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা সনদ জমা দেবেন শর্তে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ জুন থেকে আপনার চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কিন্তু আপনি উক্ত সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সনদ জমা দেননি বিধায় আপনাকে ৩০ জুন ২০১৪ তারিখ থেকে এক বছর অবসর (এলপিআর) মঞ্জুর করা হয়েছে এবং ওই সময়কালে আপনার কাজের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

এরপর ৬ মে আরেকটি চিঠি দিয়ে ২৭ এপ্রিলে পাঠানো চিঠির কার্যকারিতা বাতিল করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডার ১৯৭৩’র অন্তর্ভুক্ত দশম স্টাটিউটস’র সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী শিক্ষকদের চাকরি হতে অবসর গ্রহণের বয়স ৬৫ বৎসর নির্ধারণ হওয়ায় এবং সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করায় আপনি ৬৬ বছর বয়সে উপনীত হওয়ায় চলতি বছরের ৩০ জুন তারিখে অবসর (এলপিআর) গ্রহণ করবেন। এ চিঠিতে সনদ জমা দেয়া সংক্রান্ত কোনো কথা উল্লেখ করা হয়নি।

সর্বশেষ গত ১২ মে পুনরায় চিঠি দিয়ে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অত্র দফতরের ৬ মে তারিখের রেজি : প্রাশ-১/৫৯৪২০ সংখ্যক পত্রের ক্রমধারায় আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে, উক্ত পত্রের কার্যকারিতা বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডার ১৯৭৩ এর অন্তর্ভুক্ত দশম স্টাটিউটসের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী শিক্ষকদের চাকরি হতে অবসর গ্রহণের বয়স ৬৫ নির্ধারণ হওয়ায় এবং সিন্ডিকেটের ৬ জুন ২০১১ ও ২২ জুন ২০১৪ তারিখের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করায় আপনি ৬৬ বছর বয়সে উপনীত হওয়ায় আগামী ৩০ জুন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি হতে অবসর (এলপিআর) গ্রহণ করবেন।

চিঠিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সুদীর্ঘ চাকরি জীবনে বিভিন্ন প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অবদান রাখায় ভূয়সী প্রশংসাও করতে দেখা যায়। চিঠিতে আরো বলা হয়, অবসর গ্রহণের প্রস্তুুতি ছুটির (এলপিআর) জন্য ৩০ জুনের আগে আবেদন করতে হবে। একই সঙ্গে ছুটির পরিবর্তে অর্থ প্রদানের জন্যও আলাদা আবেদন করতে হবে।

এদিকে গত বছরের ১০ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয়, যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি চাকরিতে যোগদানের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা দেননি, তারা কোনো সুবিধা নিয়ে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। আর যারা ভুল তথ্য দিয়ে চাকরির শেষ সময় এসে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে এক বছর বাড়তি চাকরি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমানকে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অপরাগতা জানিয়ে বলেন, এটা নিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি নিউজ হয়েছে। আর তার সনদটি মন্ত্রণালয় জমা রয়েছে। কিন্তু তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা নন তার কোনো প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। এছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে সনদ আসলে তিনি আমাদের দেখাবেন।

এমএইচ/এসএইচএস/বিএ/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।