কুড়িগ্রামে থানা হাজতে আসামির রহস্যজনক মৃত্যু


প্রকাশিত: ১১:০৮ এএম, ১৬ মে ২০১৫

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী থানার হাজতে আনিছুর রহমান (৩৭) নামের এক আসামির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ফুলবাড়ী অনন্তপুরে বিজিবি মাদকসহ তাকে আটক করার আট ঘণ্টা পর শনিবার সকাল ১১টায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর দুপুর ১২টায় ফুলবাড়ী থানা হাজতে আনিছুরের মৃত্যু হয়।

পুলিশের দাবি আনিছুর থানা হাজতে কম্বল পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আর এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন।

ফুলবাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলুর রশিদ  জানান, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অনন্তপুর সীমান্তে বিজিবির সদস্যরা ওই আসামিকে ভারতীয় প্লাটিনা মোটরসাইকেল এবং দুই কেজি ২`শ গ্রাম গাঁজাসহ আটকের পর থানায় সোপর্দ করে।
তিনি আরো জানান, দুপুর ১২টা ৩০মিনিটে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-১৩, তারিখ ১৬.৫.১৫ ইং। পুলিশ আসামিকে হাজত খানায় রাখলে কিছুক্ষণ পর পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিউল আলম দেখতে পান আসামি আনিছুর হাজত খানায় থাকা কম্বল ছিঁড়ে গলায় পেঁছিয়ে দরজার গ্রিলে ঝুলে আছেন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ফুলবাড়ী হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক ডা. এফতেখার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ি অনন্তপুর বিজিবির কমান্ডার হাবিলদার সফিকুল ইসলাম জানান, মাদক পাচার প্রতিরোধ অভিযান চালিয়ে শুক্রবার রাত ৩টা ২০মিনিটে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি মোটরসাইকেল ও দুই কেজি ২`শ গ্রাম গাঁজাসহ আনিছুর রহমান (৩৭) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী আটক করা হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ফুলবাড়ি থানা পুলিশের কাছে তাকে সোর্পদ করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে আমরা ১১টায় চলে আসি বলেও জানান তিনি।

ফুলবাড়ী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ড়া. ইফতেখার জানান, হাসপাতালে আসার আগেই আনিছুরের মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক পরীক্ষা করলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

 এদিকে, কুড়িগ্রাম সদরের হাসপাতাল পাড়ার আনিছুরের বাড়িতে বিকাল ৪টায় মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।  কান্নার রোলে ভারি হয়ে ওঠে এখানকার বাতাস। নিহতের মা আনোয়ারা বেগম ও স্ত্রী জুঁই বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। অন্য আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশিরা শান্তনা দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন।

মা আনোয়ারা বেগম জানান, আনিছুর ছিল একজন চাল ব্যবসায়ী। শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে ফুলবাড়ীতে পাওনা ২৪ হাজার টাকা আনতে যায়। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে জানায় সে ফিরতেছে। এরপর থেকে আর কোনো খবর পাচ্ছিলেন না তারা। এ সময় আনোয়ারা দাবি করেন, বিজিবি ও পুলিশ মিলে তার সন্তানকে হত্যা করেছে।

স্ত্রী জুঁই জানায়, একটা ফোন পেয়ে সে ফুলবাড়ীতে যায়। শুনেছি পাওনা টাকা আনতে যাচ্ছে। এ সময় তিনিও দাবি করেন পুলিশ তার স্বামীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তিনি এ ঘটনার বিচার চান। আর তাদের আড়াই বছর বয়সী এক মাত্র ছেলে জিম শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে দেখছে বাড়িতে এতো মানুষের আনাগোনা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন জানান, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নাজমুল হোসেন/এআরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।