পছন্দের কলেজে ভর্তি নিয়ে উৎকণ্ঠায় শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। ভালোমানের কলেজ কম হওয়ায় ফল ভালো করেও তারা এখন দুশ্চিন্তায়। মিরপুরে বসবাস করেন শিক্ষার্থী হাসান ইমান ও রাইসা ইসলাম। মনিপুর স্কুল থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেছেন। বুধবার তারা একাদশে ভর্তির আবেদন করেছেন। তবে পছন্দের কলেজে তাদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ হবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ভালো ফল করেও ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারব কি না তা নিশ্চিত নই। এ নিয়ে বাবা-মা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন কলেজে ভর্তির খোঁজ নিতে আসা অভিভাবকরা বলেন, আবেদনে ভালো কলেজ চয়েজ দিলেও সেখানে সুযোগ হবে কি না তা নিশ্চিত নয়। তারপরও সন্তানকে ভালো জায়গায় ভর্তি করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তথ্যমতে, মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে একাদশ শ্রেণির ভর্তি আবেদন। চলবে ২৬ মে পর্যন্ত। আর ১ জুলাই থেকে শুরু হবে ক্লাস। ভর্তির জন্য প্রায় সবার দৃষ্টি ভিকারুননিসা, আইডিয়াল, নটরডেম, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, রেসিডিয়েন্টসিয়াল মডেল কলেজসহ রাজধানীর নামকরা বিভিন্ন কলেজগুলোর দিকে। যদিও শিক্ষা বোর্ড শিক্ষার্থীর পছন্দের ১০ কলেজ থেকে ভর্তির জায়গা ঠিক করে দেবে। কিন্তু প্রত্যেক কলেজ ভর্তির শর্ত নিজেরাই নির্ধারণ করবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ‘ভালো কলেজে’ভর্তি সংকটের কথা সব সময় বলে থাকেন। তার মতে, ভর্তির জন্য আমাদের প্রচুর আসন আছে। ভর্তি হতে চাইলে একজন শিক্ষার্থী সুযোগবঞ্চিত থাকবে না। তবে বড় কলেজে ভর্তির সংকট ছিল, থাকবে।
জানা গেছে, চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। জিপিএ-৫ এর চেয়ে কম কিন্তু জিপিএ-৪ কিংবা তার চেয়ে বেশি পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ জন। মূলত এই দুটি ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে নাম করা কোনো কলেজে ভর্তি হওয়া। কিন্তু রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোসহ সারাদেশে জেলা পর্যায়ে এমন কলেজের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসাবে দেখা গেছে, সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে আট হাজার ৮৬৪টি। যার মধ্যে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা মাত্র পৌনে ২০০। এসব কলেজে আসন সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো। তাই ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি দেড় লাখও ওইসব কলেজ টার্গেট করে, সে ক্ষেত্রেই জটিলতা দেখা দেবে। তারা চাইলেও পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ঢাকাসহ বিভাগীয় বড় কলেজে ভিড় করেন। কিন্তু শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদেরই সুযোগ করে দেয়ার মতো প্রতিষ্ঠান ঢাকা ও দেশের বড় শহরগুলোয় নেই।
ব্যানবেইসের হিসাবে, ঢাকা বিভাগে ৭০টি, রংপুর বিভাগে ২৯টি, বরিশাল বিভাগে ১২টি, রাজশাহী বিভাগে পাঁচটি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭টি, খুলনা বিভাগে ১১টি এবং সিলেট বিভাগে ২২টি মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কলেজে স্ব স্ব বিভাগের জিপিএ-৫ প্রাপ্তরাও ভিড় করলে সবার সংস্থান হবে না। সেক্ষেত্রে বাকিদের জন্য তেমন কোনো ভালো খবর প্রত্যাশা করা যায় না।
আবার রাজধানীতে মোট ১৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণি রয়েছে। এসব কলেজে মোট আসন আছে ৪৩ হাজার ৫১৯টি। এর মধ্যে ভালো মানের কলেজ আছে মাত্র ২০ থেকে ২২টি, যেখানে আসন সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। বিপরীত দিকে ঢাকা বোর্ডেই এবার পাস করেছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪০ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯ হাজার ৪৮১ জন। আবার জিপিএ-৪ থেকে ৫-এর মধ্যে পেয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৪৮ জন।
এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ কতটা থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ভালো ফলের পর রাজধানীতে ছুটে আসা শিক্ষার্থীদের সুখবর নেই বললেই চলে। বরং জিপিএ-৪ এবং তারও কম নম্বর অর্জনকারীদের জন্য এ সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন রাজধানীর শীর্ষমানের কলেজ শিক্ষকরা। তারা বলেন, সবাই চায় সেরা কলেজে ভর্তি হতে। কিন্তু আসন সংখ্যা স্বল্প থাকায় ভালো ফল করেও অনেককেই ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।
ভর্তির বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরির্দশক ড. মো. আশফাকুশ সালেহীন বলেন, সবাই ভালো কলেজ পাবে না, তবে কেউ যেন ভর্তি থেকে বঞ্চিত না হয়, এ লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
এমএইচএম/জেডএ/ওআর/বিএ